এক্সক্লুসিভঃ ‘নিষিদ্ধ হোক বোরকা, বোরকা পরার স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কুপ্রভাব’ – ৩য় পর্ব

♨ 🚫 এক্সক্লুসিভঃ ‘নিষিদ্ধ হোক বোরকা, বোরকা পরার স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কুপ্রভাব’ – ৩য় পর্ব 🚫 ♨

লেখকঃ 💙 💚 মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী 💚 💙

ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/mushfiqueimtiaz

🎲 ভূমিকাঃ

বোরকা উন্মোচন সিরিজের বিগত ২ পর্বে বোরকার মাধ্যমে সৃষ্ট শারীরিক ক্ষতিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এবার আসা যাক ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বোরকা কেন বর্জনীয়।

📛 প্রশ্নঃ ব্যক্তিগত পর্যায়ে বোরকা কিভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে?

☑ উত্তরঃ

✅ ১) দ্রুত হাঁটা কিংবা দৌড়ানোঃ বোরকা পরলে প্রয়োজনের সময় দ্রুত হাঁটা কিংবা বিপদের সময় দ্রুত দৌড়ানো যায় না কেননা দ্রুত হাঁটতে বা দৌড়াতে যেয়ে বোরকার কাপড়ের সঙ্গে পা যে কোন মুহূর্তে ফেসে যেতে পারে যাতে হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ে মুহূর্তেই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেমনঃ ধরা যাক, কোন এক বোরকা পরিহিতা মহিলাকে কতিপয় দুর্বৃত্ত তাড়া করল। এমতাবস্থায় মহিলাটি যদি বোরকা পরিহিতা না হয়ে জিন্স পরিহিতা হতেন, তাহলে তিনি হয়তো দৌড় দিয়ে বিপদ এড়িয়ে নিরাপদ অবস্থানে যেতে পারতেন। কিন্তু বোরকা পরার কারণে সেই মহিলা বেশি দূর এগোতেই পারবেন না, মুহূর্তে ধরা পড়ে যাবেন এবং ধর্ষণের শিকার হবেন।

✅ ২) রাস্তা পারাপারে সমস্যাঃ নিকাবের শতচ্ছিদ্র দিয়ে বা পর্দার ভেতর থেকে বস্তুর অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া অসুবিধাজনক, রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় বোরকার পর্দা বা শতচ্ছিদ্র দিয়ে দেখতে হয় বলে রাস্তা পারাপারে বিশেষত সাইড ভিউ সম্পর্কিত সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক এবং মুহূর্তের অসাবধানতায় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

✅ ৩) সকল পদেই চাকরী না পাওয়া ও কর্মস্থলের কাজকর্ম সম্পাদনে সমস্যাঃ বোরকা পরে অফিস আদালতে চাকুরী করা অসুবিধাজনক। বোরকা পরার কারণে যেই কাজগুলো পুরুষ খুব সহজে করতে পারে, সেই কাজগুলো বোরকা পরিহিতাগণ করতে পারেন না। সব ধরনের কাজ করতে না পারায় কিংবা সেসব কাজ সম্পাদনে অসুবিধে হওয়ায় বেশ কিছু পদে শুধু পুরুষদেরই চাকরী দেওয়া হয়, নারীরা সেই চাকরীগুলো পাওয়া থেকে বঞ্চিতা হন। এমন অসম সমাজে পুরুষ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে এবং নারীকে ইচ্ছেমত শোষণ করতে পারে। বোরকা পরিধানের ফলে নারী কার্যতভাবে পুরুষের অধীনস্তা হয়ে পড়ে। আর বিভিন্ন কাজে অসুবিধার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে। যেহেতু বোরকা পরার কারণে নারী গৃহস্থালী কাজকর্ম ছাড়া আর কোন কাজই যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারে না, সাংস্কৃতিক সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারে না, সেহেতু এটি সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, বোরকা – নারী স্বাধীনতার চরম অন্তরায় ।

✅ ৪) রূপচর্চাঃ চরম ভীতিকর একটি পোশাক বোরকা। বোরকা পরিধানের কারণে নারীকে সোজা বাংলায় ভুত-পেত্নী-অশরীরীর মত দেখায়। বোরকার মধ্যে কোন সৌন্দর্য নেই – কালো, নীল, খয়েরী কিংবা অন্য রঙের একটি সম্পূর্ণ একরঙা পোশাক বোরকা। বোরকার ডিজাইনে কোথাও কোন সৌন্দর্য নেই, নেই কোন মাল্টিকালারড বৈচিত্র্য, নেই কোন হাতের কাজ, নেই চুল ও মুখশ্রী দেখার অবস্থা। পুরোটাই ঢাকা বলে বোরকা পরিহিতার দৈহিক গঠন তথা সৌষ্ঠবতা বোঝার কোন উপায় নেই। প্রচুর নারী রূপচর্চায় আগ্রহী, তারা কেন নিজেদের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিয়ে বোরকা পরে থাকবে – এটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। কোন একটি জায়গায় অজস্র কালো বোরকাধারীদের যদি কুড়াল বা লাঠি হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটি হরর মুভির প্রেতাত্মাদের মিছিলের মতই ভৌতিক মনে হবে। যেই পোশাকে নারীকে ভুতুড়ে দেখায়, চোখ মুখ নাক হাত পা কিছুই দেখা যায় না, অর্থাৎ ঐ পোশাকের ভেতরে যে একটি মানুষ আছে সেটাই বোঝা যায় না, তাহলে সেই পোশাকের পড়ে লাভটা কী?

✅ ৫) অপরাধী ও সন্ত্রাসবাদীদের জন্য ছদ্মবেশ ধারণের উৎকৃষ্ট উপায়ঃ বোরকা হচ্ছে অপরাধী, সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য চরম আশীর্বাদস্বরূপ একটি পোশাক কেননা এই পোশাক পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে সফলভাবে আত্মগোপন করা যায়, ছদ্মবেশ ধারণ করে গ্রেফতার এড়ানো যায়, আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো যায় এবং যখন খুশি তখন দেশের এখান থেকে সেখানে যেয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা বজায় রাখা যায়।

📛 প্রশ্নঃ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বোরকা চরম হুমকী – এর প্রমাণ কী?

☑ উত্তরঃ

আসুন দেখে নেই কিভাবে বোরকাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী হামলা ও চুরি ডাকাতি হয়ে এসেছেঃ

✅ ১) ইসলামিক জঙ্গিরা পাকিস্তানের লাল মসজিদে অবস্থান নিলে কিন্তু তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের জঙ্গি প্রশ্নে দৃঢ়তা এবং অনমনীয়তার সুবাদে তারা সেখানে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেশিক্ষণ চালাতে পারেনি, তাদের অন্যতম নেতা মওলানা আব্দুল আজিজ নিতান্তই নির্লজ্জের মত বোরকা পরে পালাতে যেয়ে ধরা পড়েন ।

সূত্রঃ https://www.youtube.com/watch?v=SdktqJ5k_XI

✅ ২) ২০১০ সালে পাকিস্তানের কোহাটে একটি রিফিউজি ক্যাম্পে বোরকা পরিহিত দুই ইসলামিক জঙ্গিবাদী আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ৪১ জনের মৃত্যুর কারণ হয়। একই বছর পাকিস্তানের খার এলাকায় বোরকা পরিহিত জঙ্গিবাদীর বোমা হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়।

সূত্রঃ

১) http://www.nydailynews.com/news/world/burqa-clad-suicide-bombers-kill-41-pakistan-blast-article-1.170168

২) http://www.foxnews.com/world/2010/12/25/suicide-bombing-kills-pakistan-1309716232.html

✅ ৩) প্রখ্যাত লেখক তথা পলিটিক্যাল ব্লগার ড্যানিয়েল পাইপসের Niqabs and Burqas as Security Threats নামক আর্টিকেল থেকে পাওয়া যায়, বোরকার আড়ালে অপরাধী সন্ত্রাসী ও ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গিবাদীদের সন্ত্রাসী ও জেহাদী অপতৎপরতার অজস্র ছবি ও বর্ণনা –

সূত্রঃ http://www.danielpipes.org/blog/2006/11/niqabs-and-burqas-as-security-threats

✅ ৪) আফগানিস্তানে ইসলামিক জিহাদী জঙ্গিবাদীরা কিভাবে বোরকার মাধ্যমে আত্মগোপন করে এবং বোরকার আড়ালে বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র, রাইফেল ও গোলাবারুদ লুকিয়ে চলাফেরা করে সে সম্পর্কে জেনে নিন –

সূত্রঃ https://www.frontpagemag.com/fpm/97860/terrorists-drag-bombs-beneath-burqa-phyllis-chesler

✅ ৫) বোরকার মাধ্যমে সংঘটিত চুরি ডাকাতিঃ চুরি ডাকাতির ক্ষেত্রে বোরকা চরমভাবে ব্যবহৃত একটি পোশাক যার মাধ্যমে চোর ডাকাতেরা নিজেদের চেহারা লুকিয়ে ইচ্ছেমত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ধরা সম্ভব হয় না।

সূত্রঃ

১) http://www.cbc.ca/news/canada/toronto/burkas-worn-by-robbers-in-500k-toronto-jewelry-store-heist-1.2840489

২) https://www.mid-day.com/articles/burqa-clad-women-steal-gold-jewellery-worth-rs-75-l-mumbai-crime-govandi/18140168

📛 প্রশ্নঃ সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বোরকার ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী?

☑ উত্তরঃ বোরকা পরিধান করা নারীরা বিভিন্ন সৃষ্টিশীল তথা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না এবং তাদের খ্যাতির পথে একটি বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

✅ ১) অভিনয়কলাঃ অনেকটাই নয়নাভিরাম ফিগার ও অপরূপ মুখশ্রী নির্ভর চলচ্চিত্রাঙ্গনে বোরকা পরে একজন নায়িকা বা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্পূর্ণরূপেই অসম্ভব।

✅ ২) নৃত্যকলাঃ বোরকা পরে নৃত্যকলা করা কিংবা দক্ষ নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব।

✅ ৩) সঙ্গীতকলাঃ বোরকা পরিধান করলে বর্তমানের মিউজিক ভিডিওনির্ভর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে একজন গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব।

✅ ৪) চিত্রকলাঃ বোরকার শতচ্ছিদ্র দিয়ে ছবি আঁকা খুবই সমস্যাজনক। এছাড়া তুলি নাড়ানোর সময় বোরকার কাপড় হাতকে টেনে ধরবে ফলে ভুল জায়গায় তুলির আঁচড় পড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।

🎲 সিদ্ধান্তঃ কথায় আছে – প্রাণ থাকলে প্রাণী হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না। বোরকা পরিহিতা নারীদের প্রাণ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তারা প্রাণহীন কেননা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ একজন মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন। বোরকা পরিধান সেই সাংস্কৃতিক জীবনের অধিকার একজন নারী থেকে কেড়ে নেয়। সমাজে একজন বোরকাওয়ালীর অবস্থা হয় অনেকটাই অথর্ব জড় পদার্থের মত করুণ, জীবন্মৃত প্রাণীর ন্যায়।

📛 প্রশ্নঃ খেলাধুলা ও শরীরচর্চার ক্ষেত্রে বোরকার ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী?

☑ উত্তরঃ পুরুষের মত নারীদেরও খেলাধুলা করার অধিকার ও ইচ্ছে রয়েছে। বোরকা পরিধান করে খেলাধুলাতে অংশগ্রহণ এবং দক্ষতার পরিচয় রাখা একেবারেই অসম্ভব।

✅ ১) বোরকা পরে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, বেসবল, হ্যান্ডবল কোন খেলাই খেলা সম্ভব নয়।

✅ ২) বোরকা পরে সম্ভব নয় দৌড়নো কিংবা সাঁতার কাটা, হার্ডলস, লংজাম্প, হাইজাম্প, ডিসকাস থ্রো, পোলভল্টে অংশগ্রহণ করা।

✅ ৩) বোরকা পরে রেসলিং, বক্সিং, জুডো, কুংফু, কারাতে করা সম্ভব নয়।

🎲 সিদ্ধান্তঃ নারীদের কি জন্মই হয়েছে শুধু পুরুষের যৌনচাহিদা মেটানো আর প্রতি বছর বছর বাচ্চা পয়দা করার জন্য ? নারীদের কি স্বাদ-আহলাদ বলতে কিছুই নেই? বাংলাদেশের কত নারী ক্রিকেট কিংবা ফুটবল-পাগল, সমাজব্যবস্থা ইসলামিক এবং কট্টর পুরুষতান্ত্রিক না হলে তারাও আজকে পুরুষদের মতই একই সংখ্যায় ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলত, কিন্তু জন্ম থেকেই যে সিস্টেম দেখে আসছে তারা, তাতে এসব খেলাধুলায় শুধুমাত্র দল সমর্থন করা ছাড়া তাদের আর কোন গত্যন্তর থাকে না। ভারতের টেনিস প্রতিভা সানিয়া মির্জা যখন তার যোগ্যতা দেখাতে গেছেন তখন মৌলবাদীরা তার শর্টস পরা নিয়ে বিরুদ্ধাচারণ ও নোংরামিতে রত হয়েছে ! যাই হোক, নারীরা মানুষ এবং তাদেরও খেলাধুলা করার অধিকার রয়েছে এবং তাদের মানবাধিকারে কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

📛 প্রশ্নঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোরকা পরার সমস্যাগুলো কী কী?

☑ উত্তরঃ বোরকার অংশ নিকাবের ২টি কিংবা শতচ্ছিদ্র দিয়ে কোন বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা চরম অসুবিধাজনক।

✅ ১) স্কুল কলেজে পড়াশোনা করা, ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখা, বইয়ের লেখা পড়া, খাতায় বা নোটপ্যাডে কিছু লেখা চরম বিরক্তিদায়ক ও অনীহা উদ্দীপক।

✅ ২) ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি ল্যাবরেটরীতে বোরকা পরিহিত অবস্থায় প্র্যাকটিক্যাল করা অসুবিধাজনক এবং এতে যে কোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

✅ ৩) শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক শিক্ষিকারাও সমস্যায় পড়ে যাবেন কেননা বোরকা পরিহিতা শিক্ষার্থীদের কে কোনটা তা নির্ধারণে সমস্যা দেখা দেবে এবং তাদের ওপর শিক্ষক শিক্ষিকাদের নজর কম পড়বে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভাইবা ও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময়।

✅ ৪) ক্লাস রোল কলেও সমস্যার সৃষ্টি হবে, বোরকা পরিহিত বলে চেহারা দেখার অবস্থা নেই যার সুযোগ নিয়ে অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকে না বা অনুপস্থিত বান্ধবীদের জন্য প্রক্সি দেয়। কাজটি অন্যায়।

✅ ৫) পরীক্ষার সময়ে বোরকা পরে একজনের পরীক্ষা আরেকজন দিয়ে দিতে পারে যা অন্যায়।

🎲 সিদ্ধান্তঃ অতএব, বোরকা যে ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় দিক থেকে চরম ক্ষতিকর, তা উপরিউক্ত আলোচনা থেকেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত । তবে এগুলোর বাইরে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, সেগুলো হলো –

✅ ক) ধর্মীয় গল্প মোতাবেক, যে আল্লাহ একেবারেই কাপড়চোপড়হীন অবস্থায় সম্পূর্ণ নগ্নভাবে পৃথিবীতে নর ও নারী প্রেরণ করেন, সেই আল্লাহরই আবার নারীর নগ্ন বক্ষ নগ্ন বাহু নগ্ন উরু নগ্ন নিতম্ব দেখে বিচলিত হওয়ার কারণ কি? তিনি যখন ‘সর্বজ্ঞ’ তখন কেন আদম (আঃ) তথা সৃষ্টির শুরু থেকে বোরকা প্রথা চালু হল না ? কেন হঠাৎ তার এমন মন পরিবর্তন? আর সর্বজ্ঞ আল্লাহ কি ভিটামিন ডি সম্পর্কে জানতেন? জানলে কি বোরকা প্রচলিত হতে দিতেন?

🎲 সিদ্ধান্তঃ অতএব, আল্লাহ বলে কিছু নেই, এটি সম্পূর্ণ প্রাচীন যুগের মানুষের দুর্বল মনের অলীক কল্পনা।

✅ খ) নারীদেহ বা নারীদের নগ্নদেহ দেখলে পুরুষ কতিপয় হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার ও নার্ভের কার্যক্রিয়ায় কামার্ত কামাতুর হয়ে উঠতে পারে – এটি খুবই স্বাভাবিক। বিপরীতক্রমে নারী যদি একজন পুরুষকে পোশাকহীন অবস্থায় বা খালি গায়ে দেখে, তাহলে নারী কী কামার্ত কামাতুর হয়ে উঠবে পারে না ? – অবশ্যই পারে। নারীদেহেও এরকম হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার ও নার্ভ আছে। ফলে তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে, বোরকা চাপাতে হলে শুধু নারীর ওপর চাপানোটা হবে চরম পক্ষপাতদুষ্টতা। ইসলাম যদি নারী পুরুষের সমতায় বিশ্বাস করে তবে নারী পুরুষ সমতা রক্ষার্থে বোরকা নারীর ওপর চাপালে পুরুষের ওপরও চাপাতে হবে। অর্থাৎ পুরুষকেও নারীদের মত বোরকা পরতে হবে। বাস্তবে, বিভিন্ন ক্ষতির কারণে বোরকা নারী পুরুষ কারোরই দরকার নেই।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বোরকা পরিহিতা নারীরা প্রচণ্ডরূপে কামার্ত কামাতুর কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে তারা সেটি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারেন না। ইরানের অনেক নারী কারণে অকারণে বোরকার নিচে কিছু না পরেই ডাক্তারের কাছে যান এবং চেকআপ করান বলে প্রমাণ মেলে। পাকিস্তানের মত ইসলামিক রাষ্ট্রে যেই নারী দিনের বেলায় কিংবা পাবলিক প্লেসে বোরকাওয়ালী, সেই নারীই রাতের বেলা প্রাইভেট প্লেসে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে মুজরা নাচ নাচে । আবার এমনও খবর মেলে যে পাকিস্তানে নারী কর্তৃক পুরুষও ধর্ষিত হয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ কেন পুরুষদের জন্য পর্দা কিংবা বোরকা চালু করলেন না?

🎲 সিদ্ধান্তঃ এখান থেকে বোঝা যায়, ইসলাম সম্পূর্ণরূপেই পুরুষতান্ত্রিক একটি ধর্ম যা চরমভাবে পক্ষপাতিত্বশীল ও নারী পুরুষের সমতায় বিশ্বাস করে না। উপরন্তু নারীর যে যৌনাকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনা থাকতে পারে – এই অধিকারকে খর্ব কিংবা অস্বীকার করতে চায়।

✅ গ) কামার্ত কামাতুর মানুষ অহরহই হচ্ছে কিন্তু তাই বলে কী বিদেশের রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ধর্ষণ হচ্ছে? সাধারণ ও ন্যুড বিচগুলোতে কী বিকিনি পরিহিতা কিংবা সম্পূর্ণ নগ্নদেহী নারীদের দেখে সেখানকার পুরুষগুলো একদম হিংস্র বাঘের মত ঝাপিয়ে পড়ে যে যাকে পারছে, তাকে ধর্ষণ করে দিচ্ছে? উত্তর হচ্ছে – নাহ। দিচ্ছে না। তাদের তো কোরান শরীফ নেই। তাহলে তারা কিসের কারণে নগ্নদেহ দেখেও ধর্ষণে রত হচ্ছে না ? উত্তর হচ্ছে – তাদের ভেতরের নৈতিকতাবোধ প্রসূত আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আইনের শাসন ও তার যথাযথ প্রয়োগ। পক্ষান্তরে কোরান শরীফ যৌনবুভুক্ষু মুসলিমদের যৌনতাড়না মেটাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ যার প্রমাণ ইসলামিক দেশগুলোতে সংঘটিত ইভ-টিজিং, যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ।

🎲 সিদ্ধান্তঃ পোশাকহীনতা বা নগ্নতা যে ধর্ষণের কারণ নয় তার প্রমাণ পশ্চিমা দেশগুলোর রাস্তাঘাট ও বিচগুলো। নারীকে বোরকাবন্দী করার মাধ্যমে পুরুষ তাকে নিজের অধীনস্ত একটি অক্ষম প্রজাতিতে রূপান্তরিত করে তুলছে যা মানবতা ও নৈতিকতার দিক থেকে চরম অন্যায়। তাছাড়া বোরকাবন্দী করার ফলে তার ক্ষতিকর প্রভাব হিশেবে একটি লৈঙ্গিক বা শুধুমাত্র লিঙ্গনির্ভর সংস্কৃতির সৃষ্টি হচ্ছে।

📛 প্রশ্নঃ ইসলামিক দেশগুলোতে কী আসলেই ধর্ষণের হার কম ?

☑ উত্তরঃ

ইসলামিক দেশগুলোতে ধর্ষণের হার পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু কর্তৃত্ববাদী পুরুষতান্ত্রিক ও নারী অধিকারবিহীন চরম বদ্ধ তথা রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার কারণে কোন নারীই ধর্ষণের মামলা করে না। মধ্যপ্রাচ্যে এটি ০% এবং আমাদের দেশে এটি ১% ও নয়। ফলে, ধর্ষণের ঘটনাগুলো ইসলামিক দেশগুলোতে আড়ালেই থেকে যায়, এগুলো নিয়ে কোন মামলা হয় না, যার ফলে পরিসংখ্যানও মেলে না এবং অন্ধ মুসলিম এই পরিসংখ্যানহীনতার সুযোগ নিয়ে দাবি করে বেড়ায় যে ইসলামিক দেশগুলোতে ধর্ষণ কম হয় যা সম্পূর্ণ মিথ্যে। পুরুষকে স্তন দেখাতে হবে বলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারীরা ব্রেস্ট ক্যান্সারের ব্যাপার তারা চেপে যায় । একইভাবে ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করলে সমাজে অচ্ছুৎ হয়ে যাবে তথা প্রমাণিত না হলে বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে হত্যার মত নির্মম শাস্তি পেতে হবে – এমন আশংকায় সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের কেস রিপোর্টই হয়না। সৌদি আরব চরম পুরুষতান্ত্রিক দেশ। সেখানে নারীরা পদে পদে ধর্ষিতা হলেও তারা মুখ খোলে না, জানে যে এর বিচার তো হবেই না বরং নিজেকে শাস্তি পাওয়া লাগবে এবং এটি প্রকাশ পেলে তার বিয়েও হবে না। ৪ জন পুরুষ সাক্ষীর সাক্ষ্যের অদ্ভুত ইসলামিক আইন – এমন অবাস্তব নিয়মের কারণে সৌদিতে প্রচুর ধর্ষণ হলেও সেটির কোন প্রতিকার নেই। পর্ণো সাইটগুলোতে আরবীয় সেক্স ক্লিপগুলোর আধিক্য দেখে সৌদি আরবে কী ঘটে – সেটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় ।

আমাদের দেশে ২০০১ সালের পরে অজস্র হিন্দু নারী বিএনপি জামাতপন্থী ধর্মান্ধ নরপশুদের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছে, পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হলেও ১% মামলাও পুলিশের খাতায় রেজিস্টার্ড হয়নি ।

সভ্য দেশগুলোতে ধর্ষণের মামলাগুলো ঠিকমতই পুলিশের খাতায় রেজিস্টার্ড হয় কেননা সেসব দেশে মানুষের মন মানসিকতা মুসলিমদের মনমানসিকতার মত বদ্ধ, সংকীর্ণমনা নয় বরং উদারমনা এবং নারী অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ফলে, তারা পুরুষের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা গোপন করে না। পশ্চিমে যদি কোন অন্যায় ঘটে তবে সেটি হচ্ছে, নারীদের একটি অংশ উচ্চবিত্ত পুরুষের সঙ্গে স্বেচ্ছায় যৌনসঙ্গম করে পরে পুলিশের কাছে যেয়ে ধর্ষণের মিথ্যে মামলা রেজিস্টার করে উক্ত বিত্তশালী পুরুষ থেকে অর্থ কিংবা সম্পত্তিলাভে আশায়।

📛 প্রশ্নঃ কোরান শরীফের অদ্ভুত নিয়ম ৪ সাক্ষী উপস্থাপন করা – তাহলে ধর্ষণের মামলা পুলিশের খাতায় রিপোর্টেড হবে কিভাবে ?

☑ উত্তরঃ

মুসলিম জাতি যে চরম ধর্ষকামী জাতি তা কোরান থেকেই সুস্পষ্ট। সুরা নিসার ২৪ নং আয়াত এবং সুরা আল মুমিনুনের ৬ নং আয়াত থেকে দেখা যায় –

✅ ১) Sura Nisa Verse 24: Also (prohibited are) women already married, except those whom your right hands possess

সূত্রঃ http://quranx.com/4.24

✅ ২) Sura Al Muminun Verse 6: Save from their wives or the (slaves) that their right hands possess, for then they are not blameworthy

সূত্রঃ http://quranx.com/23.6

এখান থেকে সুস্পষ্ট হয় ইসলাম চরম পুরুষতান্ত্রিক ও নারীবিরোধী এবং তারা নারীর অধিকারকে কোন অধিকারই মনে করত না যার কারণে নিম্নোক্তভাবে তারা ধর্ষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে –

✅ ১) দাসীদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম বৈধ করেছে – যা ধর্ষণ

✅ ২) যুদ্ধবন্দীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম বৈধ করেছে – যা ধর্ষণ

ইরানের ১৭ বছর বয়সী নাজানিন মাহাবাদ ফাতেহী ও তার ভাতিজিকে ধর্ষণ প্রচেষ্টাকালে ফাতেহী একজন ধর্ষককে ছুরিকাহত করলে উক্ত ধর্ষক মারা যায়। এতে ৪ জন সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফাতেহীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে ২ বছর অতিবাহিত করার পরে পরে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার ও আন্তর্জাতিক চাপে ইরান সরকার ফাতেহীকে ৪০০-৪৬৫ মিলিয়ন রিয়ালের রক্তপনের বিনিময়ে অনিচ্ছাসত্ত্বে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

সূত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Nazanin_Fatehi

৪ সাক্ষীর ব্যাপারটি সম্পূর্ণই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বা চরম উদ্ভট একটি বিষয়। কারণঃ

✅ ১) ধর্ষক কী সাক্ষী কিংবা প্রমাণ রেখে ধর্ষণ করে? উত্তরঃ কখনোই না।

✅ ২) ধর্ষকেরা যদি গণধর্ষণ করে তবে তারা কী কোনদিন ধর্ষিতার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে? উত্তরঃ কখনোই না।

✅ ৩) ৪ সাক্ষী জোগাড় করতে না পারলে উদ্ভট ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ব্যাপারটা আর ধর্ষণ হিশেবেই গণ্য হবে না, এটি হয়ে যাবে সতীত্ব হারানোর অপরাধ (Chastity Crime) অথবা অবৈধ যৌনসংসর্গ (Zinah) এবং এর দায়ে অভিযোগ আরোপকারী নারীকেই দোররা বা পাথর ছুঁড়ে হত্যার শাস্তিটি পেতে হবে।

যেহেতু ৪ সাক্ষী বাস্তবে কখনোই উপস্থাপন করা যাবে না, সেহেতু নারীরা কখনোই চাইবে না ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করতে কেননা এতে তাদের নিজেদের জীবনই হুমকির মুখে পড়বে এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করে শাস্তি কিংবা পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হবে। তাই ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষণ কম – এমন দাবী সম্পূর্ণই হাস্যকর ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার।

অতিরিক্ত পাঠঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Stoning

অনেক মুসলিমের মধ্যেই এই বিশ্বাস রয়েছে যে, নারী ধর্ষিতা হলে সেটি তারই দোষ কেননা সেই নারীরা নাকি যৌনবুভুক্ষু আর তারা নাকি সেই যৌনবুভুক্ষার জন্য ইচ্ছে করেই পর্দাহীনভাবে চলে পুরুষদের ধর্ষণের জন্য প্রলুব্ধ করতে চায়! এটি আসলে চরম খোঁড়া একটি যুক্তি এবং অসুস্থ মনমানসিকতার পরিচয়। এই ধরনের মূর্খ লোকজন প্রায়ই দাবী করে – “শেয়াল তো মুরগীর স্বাধীনতা চাইবেই”!

এই মূর্খ লোকজন মানুষকে শেয়াল ও মুরগী হিশেবে চিন্তা করে যা এদের অজ্ঞতা মূর্খতা ও শিক্ষাদীক্ষাহীনতাকেই সুস্পষ্ট করে তোলে এবং এই কারণেই এদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত সংকীর্ণ। ইসলামে নাকি বলা আছে – মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। তাহলে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এরা মানুষকে শেয়াল ও মুরগীর সঙ্গে তুলনা করে চরম অন্যায় করে।

🎲 সিদ্ধান্তঃ মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষণের বিচার চাইতে গেলে ৪ সাক্ষীর উদ্ভট আইনের মধ্যে পড়তে হয় এবং ধর্ষণকে প্রমাণ করা যায় না। উল্টো বিচার দাবীকারীকে চরম শাস্তি পেতে হয় যা ইসলামের আইন কানুন যে হাস্যকর এবং উদ্ভট – সেটিকেই প্রমাণ করে।

📛 প্রশ্নঃ নারী স্বেচ্ছায় বোরকা পরতে চাইলে কী তাকে নিরুৎসাহিত করা নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

☑ উত্তরঃ একদমই নয়। কারণ –

✅ ১) বোরকা নারীর নিজ বুদ্ধি-বিবেচনায় গ্রহণ করা পোশাক নয়। কোরান হাদীস ও ধর্মগুরুরাই নারীদের ওপর পর্দাপ্রথা তথা বোরকা আরোপ করেছে এবং এই নিয়ম না মানলে শাস্তির বিধান জারি করেছে। ‘আরোপ’ করা এবং পালনে অস্বীকৃতি জানালে ‘শাস্তির বিধান’ জারি করার অর্থই হচ্ছে ধর্মের মাধ্যমে তাকে জোরপূর্বক ওই বিধানটি পালন করতে বাধ্য করা যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে জন্মের শুরু থেকেই একটি মেয়ে তার পরিপার্শ্বে সকল নারীদের বোরকা পরিহিতা অবস্থায় দেখে এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের আইনে বাধ্যতামূলক আইন হিশেবে বোরকা পরিধানে বাধ্য হয়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের নারী-অধিকারহীন সমাজে নারীদের কোন বাকস্বাধীনতা নেই, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে তাদের অধিষ্ঠিত করা নিষিদ্ধ। ফলে তারা সম্পূর্ণরূপেই পুরুষের হাতের ক্রীড়নক – পুরুষের জন্য যৌনসামগ্রী বা ভোগবিলাসের উপকরণ এবং গৃহিণী জীবনের চার দেওয়ালে মাঝে বন্দী।

✅ ২) বোরকার এত শারীরিক, দৈনন্দিন কাজকর্মগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কুফল রয়েছে যে বোরকা পরিধানকে কখনোই ব্যক্তি-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ব্যক্তি-স্বাধীনতার দোহাই দিলে তো ধূমপান-সমকামিতা-যৌন স্বেচ্ছাচারিতা-মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি সকল কিছুকেই ব্যক্তি-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে চালানো যায়, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্য অপরিসীম ক্ষতি বয়ে আনে।

✅ ৩) যদি ধর্মীয় আইন করে বোরকা পরাকে বাধ্যতামূলক করা না হতো এবং এই সেই আইন লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান করা না হতো এবং তারপরেও যদি নারীরা স্বেচ্ছায় বোরকা পরতো, তাহলে সেটিকে নারীদের পোশাকের স্বাধীনতা হিশেবে গণ্য করা যেত। কিন্তু বোরকা ধর্মের বিধান, বোরকা না পরলে শাস্তির বিধান – এসবের কারণে একজন নারী জন্মের শুরু থেকেই বোরকা পরতে বাধ্য হচ্ছে এবং এই বোরকায় সে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। অভ্যস্ত হওয়ার কারণে তার শরীরে যে একটু একটু করে ক্ষতি হচ্ছে – এটি সে উপলব্ধি করতে পারছে না এবং ভুলভাবে ভাবছে – বোরকায় চলছে তো, সমস্যা কী ? আসলে নিঃশব্দ ঘুনপোকার মত শরীরে ঠিকই ক্ষতি হচ্ছে যা একটি নির্দিষ্ট সময় পরে দৃশ্যমান হচ্ছে এবং ততদিনে সেই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া কর্তৃত্ববাদী পুরুষ তাদের অধীনে থাকা নারীদের বারবার ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদের মুখ থেকেই বোরকার সপক্ষে বুলি বের করিয়ে নিচ্ছে। বোরকা পরিহিতা নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা নেই বলেই তারা সেই গৎ বাঁধা বুলি আওড়ে পুরুষতন্ত্রকেই আরো শক্তিশালী করে তুলছে।

🎲 সিদ্ধান্তঃ নারীরা কী ধরনের পোশাক পরবে, তা নারী নিজে পছন্দ করবে। বোরকার বিরুদ্ধে যাওয়া মানেই সর্বত্র ‘নগ্নতা’ কিংবা ‘বিকিনি থং’ নয়। পাবলিক প্লেসে নারী তার ইচ্ছেমত মার্জিত ও রুচিশীল পোশাক আশাক পরিধান করবে। আর বিচে যদি নারী বিকিনি-থং পরে কিংবা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে থাকে, সেটি নারীর সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেধীন, এখানে ৩য় পক্ষের কিছুই বলার নেই। যেহেতু সমুদ্রের বিচগুলোতে নগ্নতার কারণে ধর্ষণ হচ্ছে বলে কোন সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না, সেহেতু এটি সুস্পষ্ট যে – নগ্নতা কোনভাবেই ধর্ষণের কারণ নয় বরং ইসলামের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও নারী পুরুষকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে বড় করার যে ভুল নিয়ম রয়েছে, সেগুলোই একজন পুরুষের ভেতরে চরম মাত্রার যৌনকাতরতা সৃষ্টি করে এবং সেই অবদমিত যৌনাকাঙ্ক্ষা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে পুরুষ নারীদের ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ করতে প্রবৃত্ত হয়। সুতরাং, ইসলামের আইনকানুন তথা দৃষ্টিভঙ্গিই ধর্ষণের প্রধান কারণ। সভ্যতার এই যুগে মানবাধিকার কিংবা নারী স্বাধীনতাই স্বীকৃতিযোগ্য, কারো জোরজবরদস্তি এই যুগে কেউ মানে না এবং মানবে না।

🎲 উপসংহারঃ

বোরকা উন্মোচন সিরিজ সমাপ্ত হল। আশা করি ৩টি পর্বই আপনাদের ভাল লেগেছে। লেখাগুলো লাইক ও শেয়ারের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন যাতে ভবিষ্যতে সেই অনুপ্রেরণা থেকে আরো চমৎকার লেখা উপহার দিতে পারি। আপনারা পাশে থাকলে আমার এই লেখাগুলোর মাধ্যমে অল্পদিনেই একটি বিশাল জনগোষ্ঠী সন্দেহ ও সংশয়বাদী হয়ে পড়বে বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। ‘আমার লেখাগুলো পড়ে ধর্মের প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে’ – এই মর্মে অনেকেই পাবলিক মন্তব্যে এবং আমার ইনবক্সে জানিয়েছেন। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ♥️✌️♥️