আফগানিস্তান

আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া আমেরিকার পরাজয় কি ? আমেরিকা সেনা সরিয়ে পূর্ব-এশিয়ায় কেন নিয়ে আসছে ?

আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া আমেরিকার পরাজয় কি ? আমেরিকা সেনা সরিয়ে পূর্ব-এশিয়ায় কেন নিয়ে আসছে ? আপনি ইতিহাসে থেকে সমস্ত আমেরিকা যুদ্ধ সম্পর্কে পড়ুন, তাহলে আপনার মনে হবে যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সংরক্ষণে আমেরিকা একটি দায়িত্বশীল দেশের ভূমিকা পালন করেছে।

কিন্তু যদি আপনি তাদের বিশ্লেষণ করেন, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আমেরিকা এই সমস্ত যুদ্ধ তার নিজের স্বার্থ এবং তার পররাষ্ট্রনীতির জন্য এবং তার স্বার্থ পূরণের পর এই দেশগুলিকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেছে।

আমেরিকা শুধু আফগানিস্তান থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নি। এর আগে ভিয়েতনাম, কোরিয়া, ইরাক, যুদ্ধেও একই কাজ করেছে।

অপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সরে গিয়েছে। আসলে আফগানিস্তান থেকে কেউ সরছে না!! না আমেরিকা, না ইন্ডিয়া, না যুক্তরাজ্য। প্রত্যেকেই দূতাবাস রাখছে।

আমেরিকা তালেবানের সাথে কাজ করবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে!! এক সময় ভিয়েতনাম আমেরিকার শত্রু ছিল, এখন মিত্র।

চীনকে মোকাবেলায় আমেরিকার গত তিন বছরের তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে।

অথচ ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া ছিল কট্টর আমেরিকা বিরোধী। আপাতদৃস্টিতে তালেবান আসাতে পাকিস্তান কিংবা চীনের বিজয় মনে হতে পারে!

কিন্তু দিন শেষে এই দুটি রাষ্ট্রই ভুগবে। পাকিস্তান একটি মিক্সড রাষ্ট্র, গোত্র ভিত্তিক সংঘাত রাষ্ট্রটিকে ক্যান্সারে মত খাচ্ছে।

ফলে মারামারি কাটাকাটির জন্য একটি ভূমি পাকিস্তানের দরকার, মানে একটি এক্সপেরিমেন্ট ফিল্ড। আর সেটি হচ্ছে আফগানিস্তান, তা না হলে মারামারি কাটাকাটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হবে।

এতে করে রাষ্ট্রটির ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনাটি ত্বরান্বিত হবে। পাকিস্তান হাজার হাজার মাইল লম্বা, কিন্তু প্রস্থ ৩০০-৪০০ কিলোমিটার। গরম ছুড়ি লাগালে ব্রেডের মত কেটে যাবে।

এই অবস্থাটিকে বলা হয় স্ট্র্যাটিজিক্যাল ডেথ। পাকিস্তান তার এই অবস্থাটি ভাল করেই জানে। আর সেই জন্যই সব জায়গাতে চীনকে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে।

চীনের বড় মাথা ব্যথার কারণ হচ্ছে আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডর। ওপাশেই জিনজিয়াং মুসলিম প্রধান প্রদেশ, যেখানে রয়েছে বিশ্বের বড় ডিটেনশান ক্যাম্প।

চীনের আজকের বিবৃতিতে তালেবানকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে জিনজিয়াং-এর মুসলিম স্বাধীনতাকামী ইটিআইএমকে আফগানিস্তানে অপারেশন না করতে দেওয়ার শর্ত স্পষ্ট।

সেটি তালেবানের পক্ষে সম্ভব হবে না!!! তালেবানেরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে চীন থেকে আমেরিকা কিংবা দেশটির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক জোটের সাহায্য বেশি লাগবে।

তালেবানেরা আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের কারনে ইরান, উত্তর কোরিয়া কিংবা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা অবশ্যই বিবেচনায় নিবে।

সার্বিক অবস্থাতে পশ্চিমা শক্তির সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক চীন ও তার পালক পুত্র পাকিস্তানের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

আমেরিকা বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে সেনা সরিয়ে পূর্ব-এশিয়ায় নিয়ে আসছে কেন? চীনের সেই চিন্তায় ঘুম হারাম!! অনেকেই বলছে, আমেরিকার পরাজয় হয়েছে।

পাগলদের সুখ মনে মনে। এই গ্রহের সকল দেশগুলি এক হয়ে আমেরিকার বিপক্ষে যুদ্ধ করলেও পারবে কি না সেটিই বড় প্রশ্ন।

লিখা:- বিজন রাজবংশী।

আর পড়ুন….