অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়?

অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়? ফি নারি জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা।

অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়? ফি নারি জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা। অমুসলিম মারা গেলে বিধান কি? (দোয়া, মাগফিরাত, জানাযা পড়া জায়েজ কিনা?

কোরানে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَلَا تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونَ.
অনুবাদঃ কখনো তাদের কেউ মারা গেলে তুমি তার জানাযা পড়ো না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িও না (দুআ-ইস্তিগফারের জন্য বা দাফন-কাফনের জন্য)। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং না-ফরমান অবস্থায় মারা গেছে।-সূরা তাওবা: ৮৪।
[তরজমা : তাফসীরে উসমানী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]

অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়?

মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ করার বিধান:

মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের জন্য দুআ করা জায়েজ নেই।

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয় একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।” (সূরা তওবা: ১১৩)

➧ ইমাম নববী রহ. বলেন,
الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع .
“কোনো কাফিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (funeral) করা এবং তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা কুরআনের আয়াত ও উম্মতের ইজমা দ্বারা হারাম” (আল মাজমু: ৫/১১৯)

➧ শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ(রাহ.) বলেন- অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়?
فإن الاستغفار للكفار لا يجوز بالكتاب والسنَّة والإجماع
“নিশ্চয় কাফিরদের জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত অনুযায়ী নাজায়েয।” (মাজমুঊল ফাতাওয়া:১২/৪৮৯)

জানাযা পড়া হবে একমাত্র মুসলমানের। কাফের, মুশরিক তথা বিধর্মীর জানাযা পড়া হারাম। শুধু ঐ মৃতের জানাযা পড়তে হবে, যিনি মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মুসলমান পরিবারের কোনো সদস্য যদি নাস্তিক হয়, যদি সে আল্লাহ-রাসূলকে অস্বীকার করে অথবা আল্লাহ রাববুল আলামীন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরআন মজীদ বা শরীয়তের অকাট্য অন্য কোনো বিধিবিধান নিয়ে কটূক্তি, কটাক্ষ করে তবে সে কাফের; বরং মুসলিম-পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বা জীবনের একটি অংশে মুসলমান থেকে পরবর্তীতে অবিশ্বাসী হওয়ায় সে নিকৃষ্টতম কাফের।

শরীয়তের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘মুরতাদ।’ এদের শাস্তি কাফেরদের চেয়েও বেশি। এ সকল অবিশ্বাসী ও মুরতাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, তাদের জানাযায় ইমামতি করা সুস্পষ্ট হারাম। এমনকি তাদের নিকটতম মুসলমান আত্মীয়দের জন্যও এদের জানাযা পড়া জায়েয নেই। এমনিভাবে যারা প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মুসলমান বলে, কিন্তু বাস্তবে সে কাফের ও অবিশ্বাসী, এরা হল মুনাফিক। আর মুনাফিকের অবিশবাসের বিষয়টি যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তবে তার জানাযা পড়ারও সুযোগ নেই। কাফের, মুশরিক, অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদ তথা অমুসলিমের জানাযার নামায হারাম হওয়ার বিষয়টি শরীয়তের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়?

মাগফিরাত কামনা করা যাবে কি নাঃ
উত্তর হল না, মাগফিরাত কামনা করা যাবে না। যাদের কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণের সংবাদ শরীয়তের দলীল দ্বারা প্রমাণিত তাদের মাগফিরাত কামনা করা হারাম। এবং কাউকে জাহান্নামে যাবে এমন নিশ্চয়তাও দেয়া যাবে না। কারন আল্লাহ্‌ ছড়া অন্য কেউ গায়েব জানেন না এবং পরকালে কি হবে তার নিশয়তা কোন মানবের জ্ঞানের ভিতরে নয়। আল্লাহ বলেছ “ তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী।

পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। (ক্ষমতাবান করেন না)” (সূরা জীন, আয়াত ২৬)। কিন্তু আল্লাহ্‌ তায়লা কাফেরদের চিরজীবন জাহান্নামে থাকতে হবে এমন সতর্ক বানী নবী কারিম (সাঃ) এর মাধ্যমে বারবার মানব জাতিকে বার বার অবহিত করেছেন। অমুসলমানদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা যাবে না।

ইবনু মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহ.) হতে বর্ণনা করেন, যখন আবূ তালিবের মুমূর্ষু অবস্থা তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গেলেন। আবূ জাহলও তার নিকট উপবিষ্ট ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ কলেমাটি একবার পড়ুন, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকট কথা বলতে পারব। তখন আবূ জাহাল ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি ‘আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে একথাটি বারবার বলতে থাকল।

সর্বশেষ আবূ তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তাহল, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়।

এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হলঃ (নাবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী *আত-তাওবাহ ১১৩)। আরো নাযিল হলঃ (আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে হিদায়াত করতে পারবেন না- আল-কাসাস ৫৬)। [রেফারেন্সঃ (সহীহ বুখারী- আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬০১)]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁরই সামনে তাঁর চাচা আবূ তালিবের আলোচনা করা হল, তিনি বললেন, আশা করি কিয়ামাতের দিনে আমার সুপারিশ তার উপকারে আসবে। অর্থাৎ আগুনের হালকা স্তরে তাকে ফেলা হবে, যা তার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছবে আর এতে তার মগয ফুটতে থাকবে।

[রেফারেন্সঃ (সহীহ বুখারী- আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬০২) ইয়াযিদ (রহ.)-ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আরো বলেছেন, এর তাপে মস্তিষ্কের মূল পর্যন্ত ফুটতে থাকবে। (৬৫৬৪, মুসলিম ১/৯০, হাঃ নং ২১০, আহমাদ ১১০৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬০৩)]

লেখাটি প্রথম প্রকাশ ইসলামিক জার্নাল

অমুসলিম মারা গেলে কি বলতে হয়?

আমাদের পাশে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।-ধন্যবাদ

আর পড়ুন….