বর্নপ্রথা

হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হবার কারন কি,বর্নপ্রথা ? না অন্য কিছু? ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

“হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হবার কারন কি “বর্নপ্রথা”? না অন্য কিছু?” মানুষ নিজের পুর্ব পুরুষের আচার, বিচার, ধর্ম, সংষ্কার এমন কি ‘রাজনৈতিক মত পথ’ পরিবর্তন কেন করে? কারন নানাবিধ।  

 

আমি পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েছি। তার মধ্যে এমন কিছু দেশে গিয়েছি যেখানে ধর্ম পরিবর্তন করার এক এবং একমাত্র কারন ‘ভয়’ বা শুধু মাত্র মৃত্যুর হাত থেকে বেচে থাকার জন্য। পেরু, মেক্সিকো, বা অন্য ল্যাতিন আমেরিকার দেশে যান, দেখবেন সেখানকার মানুষ আজ সবাই খ্রীষ্টান।

 

সেই সঙ্গে তাদের পুর্ব পুরুষের আচার,বিচার, ধর্মীয় পদ্ধতির নিদর্শন আজো বিদ্যমান। রোমান ক্যাথলিক ‘স্প্যানিয়ার্ডরা যখন ওই সব জায়গায় গেলো, তখন মেতে উঠলো মানুষ মারার উন্মাদনায়। তবে যদি ধর্ম পরিবর্তন করে ‘ রোমান ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহন করো’ তাহলে মরতে হবে না। নিরীহ মানুষ কি করবে?

 

এই কিছুদিন আগে, আই এস আই এস যখন ইরাকে তান্ডব চালাচ্ছিলো তখন ওই সব জায়গায় বসবাস কারী ‘ইয়াজিদি’ এবং খ্রীষ্টানরা দল বেধে মুসলিম হয়ে গেছে। খবরের কাগজে পড়েছিলাম মাত্র একদিনে “মসুল” শহরে ১৫০০০ খ্রীষ্টান মুসলিম হলো। এতো সেদিনের ঘটনা। একটূ খোজ নিন জানতে পারবেন। 

আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গে বেশ কিছু মানুষ আছেন তারা দলে দলে মুসলিম হবার পিছনে ‘জাতি প্রথা বা বর্ন প্রথাকে’ দ্বায়ী করেন। এই কথা আজকাল খুব বেশী করে বলা হচ্ছে, রাস্তার পাশে মিটিং মিছিল করেও বলা হচ্ছে। আমি নিজে কোনো উচ্চ বর্নের নই।

 

কিন্তু মাইক লাগিয়ে উচ্চ বর্নের নামে যে সব কথা বলা হয় তা আমার কানে আসে। ভাষাগুলো শুনেই কানে আঙ্গুল দিতে ইচ্ছে করে। 

আমি নিজে মনে করি, যারা বলেন, তাদের বেশীর ভাগ এই “বর্ন প্রথা’ কি তার কিছুই জানেন না। তবুও বলে যান। তাদের মুল বক্তব্য “ বর্ন প্রথার চাপে দলে দলে নিম্ন বর্গের হিন্দুরা মুসলিম হয়ে গেলো”। একটু তলিয়ে ভাবুন। 

৬৩২ সালের পর মাত্র ৭ বছরের মধ্যে মিশর, ইরাক এবং ইরান ৯৯% মুসলিম কেনো হলো? আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার দেশ গুলি, সেখানকার উপজাতিরা সামান্য কয়েক বছরের মধ্যেই মুসলিম হয়ে গেলো।

 

পুর্ব ইউরোপের যে সব অঞ্চল মুসলিম দখলে এসেছিলো সেখানেও সেই একই কথা, “মুসলিম হও বেচে যাও”। ভিয়েতনামের চম্পা রাজ্যের হিন্দুরা ( যাদের বলা হয় ‘চাম’,) তারা আজো ঘর ছাড়া। মেকং নদীর মোহনায় নৌকা তে থাকে।

 

তাদের বলা হয় “বোট পিপল”। এরা হিন্দু ছিলো। উচ্চ বর্নের হিন্দুদের জন্য ভারতের হিন্দুরা সব দলে দলে মুসলিম হয়েছে, এই কথা যারা বলেন,  হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন, এই উপরি উক্ত দেশ গুলির কোন দেশে “বর্ন প্রথা” ছিলো???????

চুপ করে থাকবেন না। উত্তর দিন। এরা কেনো মুসলিম হলো? পৃথবীর সব চেয়ে মুসলিম সংখ্যাধিক্য দেশ ‘ইন্দোনেশিয়াতে’ কোন কালে উচ্চ বর্নের হিন্দুরা নিম্ন বর্নের হিন্দুদের উপরে অত্যাচার করেছে? তো, এরা কেনো মুসলিম হলো??? কোন চ্যাটার্জী, মুখার্জী, গাঙ্গুলী, ব্যানার্জী, ভট্টাচার্য, এই সব দেশ গুলিতে আছে? কোথাও নেই??? তাহলে??? 

ঐতিহাসিক কে এস লাল, শ্রী বাস্তব, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, স্যার যদু নাথ সরকার এদের লেখা পড়েছেন কি???? না পড়েন নি। পড়লে দেখতে পেতেন, মাথায় বুদ্ধি থাকলে বুঝতে পারতেন, কতো অত্যাচার এই আরবী, তুর্কি, আফগানী, উজবেকী, ঘুরী, বুখারি এরা আমাদের দেশে করেছে। সুফি দরবেশ নিজামুদ্দিন আউলিয়া, খান জাহান আলি এবং আরো শত শত রা কি ভাবে ছল, বল, কৌশল করে আমাদের পুর্ব পুরুষ দের ধর্মান্তরিত করেছে। 

আপনারা যে ‘তৈমুর’ এর নামে নানা কথা টিভি তে দেখেন সেই তৈমুর আলি খান, যে তৈমুরের নাম অনুসরন করে নাম পেয়েছে, তার বানী শুনুন— জেহাদী তৈমুর বলেছিলো, আমি ভারতে গিয়েছিলাম শুধু দুটি কারনে, এক, অবিশ্বাসীদের সংগে যুদ্ধ করে তাদের খতম করা।

 

আর দুই, ইসলামের সৈনিক রা অবিশ্বাসীদের সম্পত্তি লুট করে সম্পদ পাবে”. He said, “My main objective in coming to Hindustan has been to accomplish two things. The first was to war with the infidels, the enemies of the Mohammadan religion.—- The other was that the army of Islam might gain something by plundering the wealth and valuables of the infidels”. এই তৈমুর উজবেকিস্তানের সমস্ত হিন্দুদের মেরে তাদের মাথার খুলি একটি মিনার বানিয়ে সেই মিনারের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।

 

বিবি খানুম নামে সমরখন্দে এক মসজিদ আছে। সেটা বহু প্রাচীন এক শিব মন্দিরের রুপান্তর ঘটিয়ে বানিয়েছিলো এই তৈমুর। নাম ‘বিবি খানুম মসজিদ’। (নিজের স্ত্রীর নাম অনুসারে)। সেই বিবি খানুম মসজিদের পাশেই সেই মিনার আছে। আপনাদের প্রিয় বাবুর একটি নয় দুটি ওই রকম মিনার বানিয়েছিলো যা আজো আছে। 

জানেন কি, চেঙ্গিজ খানের এক বংশধরের নাম? জানেন না। আপনাদের অতি অতি প্রিয় এক বলিউড অভিনেতার নাম। 

পৃথিবীতে যতো ধর্ম আছে, তার মধ্যে একমাত্র ‘জেহাদী ধর্মে’ বলা আছে কাফের দের মারলে “গাজী” উপাধি পাওয়া যায়। “ হজ করলে হাজি কাফের মারলে গাজী”। 

আন্দামানে ‘উইম্বার্লিগঞ্জ’ নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে ‘মোপলা’ বিদ্রোহীদের নিয়ে রাখা হয়েছিলো। সেখানে আজো শুনতে পাবেন “ আমার বাবা —গুলো হিন্দুকে কচুকাটা করেছিলো’।  শুনেছেন কোনোদিন?? আমি অনেক দিন অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছি, শুনেছি। এই মারের হাত থেকে বাচার জন্য, হিন্দু হয়ে বেচে থাকার জন্য, জিজিয়া করের হাত থেকে বাচার জন্যই এতো নিম্ন বর্গের হিন্দু ভারত বর্ষে মুসলিম হয়েছে।

যে মনু সমহিতার দোহাই দিয়ে, অনেকে উচ্চ বর্নের হিন্দুদের গাল পাড়ে যেই মনু সমহিতা তৈরী হয়েছিলো প্রায় ৮০০০ বছর আগে। সাতজন মনুর শেষ মনু হচ্ছেন বিবস্বান মনু। তার আদেশে ভৃগুমুনি এই “ মানূষের জীবনের সংবিধান” রচনা করেন এবং দশজন মুনি সেই সংবিধান সারা জম্বুদ্বীপে প্রচার করেন। তার মধ্যে এই উচু নিচু কিছুই ছিলো না।

মুসলমানী অত্যাচারে যখন ব্রাহ্মনদের সব পাঠশালা, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলো, ধংস হয়ে গেলো, তখন পেটের দ্বায়ে এই কর্ম হীন ব্রহ্মন রা সেই মনুস্মৃতিতে অনেক নিয়ম কানুন যোগ করেছে। সেই দ্বায় তাদের ঘাড়ে না চাপিয়ে যাদের অত্যাচারে সেই সব করতে হয়েছে , তারা বাধ্য হয়েছে তাদের দোষারোপ করুন। 

 

সতীদাহ শুরু হয়েছে, মুহাম্মদ বিন কাসিমের অত্যাচারের ভয়ে যখন রাজা দাহিরের “আলোর দুর্গে” রানী রানীবাই ৬০০০ মহিলা সমেত অগ্নিকুন্ডে ঝাপ দেন ‘সহমরন’ হিসাবে। বিবাহিত মহিলাদের চেয়েও অবিবাহিত মেয়েরা ‘আদিম প্রবৃত্তি’র পুরনে বেশী ভালো, তাই অবিহিতা মেয়েদের জোর করে হারেমে বা খানকায় (পতিতা পল্লী) নিয়ে যাওয়া শুরু হলো, তখন থেকে ‘বাল বিবাহ চালু হলো’। এটাও ওই মুসলিম রাই করতে বাধ্য করেছে। 

কিন্তু সেই সমাজ কি আছে? না নেই। উচ্চ বর্নের আধিপত্য তো কবে শেষ হয়ে গেছে। মনুস্মৃতি হিন্দুদের মানসিকতায় গভীর ভাবে গ্রথিত হয়ে যাওয়ায়, আজো ভারতে বেশ কিছু হিন্দু আছে। নইলে মিশর, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আন্দুলেশিয়া হয়ে থাকতে হতো ভারতকে। হিন্দু বলে কেউ থাকতো না। 

চতুবর্ন হিন্দু সমাজে কারা কেন ধরমান্তরিত হয়েছিল ?— এই ইতিহাস বিকৃতির কাজ করেছে আপনার আমার পাশের বামপন্থি এবং সেই আরব বর্বরদের অনুগামীরা। যার সাধাররন ধর্ম পালন করে তারা কিন্তু নয়। এই প্রশ্নটা আজ সকালে আমাকে করা হয়েছে, তাই এতো কথা লিখলাম।

আর জানুন….বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা বর্নপ্রথা