পশু কুরবানী

পৃথিবীর বর্বর পশু কুরবানী, নারীর প্রতি অমানবিক শরীয়া আইন কি মানুষের ধর্মীয় অধিকারের পর্যায়ে পড়ে হে লিবারাল?

পৃথিবীর বর্বর পশু কুরবানী, নারীর প্রতি অমানবিক শরীয়া আইন কি মানুষের ধর্মীয় অধিকারের পর্যায়ে পড়ে হে লিবারাল? ২০১৯ সাল থেকে বেলজিয়ামে অচেতন না করে পশু কুরবানী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ একটা গরুকে সবাই মিলে জাপটে ধরে গগণবিদারী চিৎকার করে আল্লাহ আকবর বলে জবাই করার উৎসব বেলজিয়ামে নিষিদ্ধ। ডয়চে ভেলে এই সংবাদ দিচ্ছে। এখন জার্মানিতেও একই প্রক্রিয়া শুরু হবার পথে। আর এতেই এক গ্রুপ ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার’ বিলাপ শুরু করে দিয়েছে!
দেশেশুনে মনে হচ্ছে কথিত লিবারালদের একাংশই মুসলিমদের পক্ষ নিয়েছে। যদিও ডয়চে ভেলে ইহুদীদের কথাও উল্লেখ করেছে, কিন্তু আমরা জানি ইহুদীরা দুধভাত, আসল ফয়দা তো নিবে মুসলমানরা। তারা সেইদিনের স্বপ্ন দেখে যখন লন্ডন বার্লিনের মত শহরে ঢাকা করাচির মত রাস্তায় প্রকাশ্যে পশু কুরবানী দিয়ে উৎসব করবে! রক্তাক্ত হাত-মুখের সেলফি পোস্ট করবে। আর ফেইসবুকও এইসব ছবিকে সহিংসতার ক্যাটাগরিতে না ফেলার রুলস বাজারে আনবে!
যেটা বিস্মত লাগে কুরবানীর বিরোধীতা করলেই একদল লোক এসে মাংস খাই কিনা জিজ্ঞেস করে। এরা ধরে নেয় মাংস খেলেই এই রক্তাক্ত উৎসবের বিরোধীতা করা যাবে না। একই দিনে হাজার হাজার পশুকে জবাই, সাধারণ মানুষের কসাই সাজা, রক্তের হোলি খেলার যে উৎসব তার সঙ্গে মাংস খাওয়া না খাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। যেমন বেলজিয়াম পশুকে অচেতন করে কুরবানী করার কথা বলেছে। বলে নাই এটা এখন থেকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। অথচ আমি আপনাদের দেখাতে পারি নেপালের গাধিমাই উৎসবে মহিষ বলির যে উৎসব ছিলো- সরাসরি তার বিরোধীতা করে প্রতিবাদ প্রচার চালিয়ে গেছে বিভিন্ন সংগঠন। সরাসরি এই ধর্মীয় উৎসবকে বর্বর বলে আখ্যা দিয়েছে।
২০১৫ সালে এই পশু বলি মন্দির কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়ার আগে চেঞ্জ.অর্গের লরা গোল্ডম্যান বলেছিলেন, ‘নেপালের দাশাইন উৎসবের সময়ে মোষের বদলে চালকুমড়া বলী দেয়া হোক।”
নেপালের পশু কল্যান নেটওয়ার্ক (এডাব্লিউএনএন) স্পষ্ট করে বলি প্রথার বিরোধী করে বলেছিলো, ‘মোষ বলী না দিয়ে তার স্থলে কেননা চালকুমড়া বলী দেই? ছাগলের বদলে একটা নারিকেল? এর ফলেও তো বক্তব্য পৌঁছাবে, কিন্তু অনেক বেশী মানবিক হবে’।
অবশেষে নেপালে এই বলির রক্তাক্ত উৎসব বন্ধ হয়েছে। কোথাও ধর্মীয় স্বাধীনতা হারানোর হাহাকার শোনা যায়নি! কেউ পর্দা করতে চাই্রলে আপনি বাধা দেয়ার কে- এই যুক্তিতে যদি কেউ সতিদাহ ফের চালু করতে যায় তখন কি আপনার মানবাধিকার জেগে উঠবে না? কেউ ইরানের নারীদের হিজাব খোলার পক্ষালম্ব করে দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করেনি কিন্তু আমেরিকায় নাজমা বেগম নামের একজন বাংলাদেশী মহিলা ঠিকই ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’ আদায় করে নিয়েছে! যেমন গাধিমাই উৎসবে বলি নিষিদ্ধ করেছে বিভিন্ন সংগঠন, দেখা যাবে সেরকম সংগঠনগুলোই বেলজিয়াম-জার্মানিতে কুরবানীর অধিকার নিয়ে মুসলমানদের পক্ষে গলা ফাটাবে! ডয়চে ভেলের ক্রিস্টোফ স্ট্র্যাক তো বলেই ফেলেছেন, ‘ইউরোপে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে’!
বাংলাদেশের খবরের কাগজ গাধিমাই উৎসবের নিউজ করতে সব সময়ই ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় রক্তাক্ত উৎসব’ তকমা ব্যবহার করত। তাহলে কুরবানীতে কি কুমড়া জবাই দেয়া হয়? ঢাকার রাস্তায় বৃষ্টির জলে গরুর রক্তের লাল ধারার ছবিগুলো কি সভ্য কোন দেশের প্রমাণ দেয়?
পৃথিবীর বর্বর পশু কুরবানী, নারীর প্রতি অমানবিক শরীয়া আইন কি মানুষের ধর্মীয় অধিকারের পর্যায়ে পড়ে হে লিবারাল? গাধিমাইয়ের বলির বিপক্ষে সোচ্চার হওয়া গেলে কুরবানীর বিরুদ্ধে নয় কেন?