
ভারতীয় ইতিহাসের কিছু বিস্মৃত ঘটনা – সমুদ্র–রেল (Boat Mail)
১৮৫৩ সালে ভারতে প্রথম রেলগাড়ি চলে বম্বে ও থানের মধ্যে। খুব তাড়াতাড়ি সেই রেলপথ ছড়িয়ে পরে সমস্ত উপমহাদেশে। এখন প্রায় ১৪ লক্ষ কর্মচারী নিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নিয়োগকর্তা। যদিও মূল ভারতীয় রেলের কিছু অংশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে চলে গেছে। আরো অল্প কিছু দৈর্ঘ্য আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারের মধ্যে।

১৯১৪ সালে পাম্বান ব্রিজ তৈরী হয়, তখন এই ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তন হয়। একটি টিকিট কেটে যাত্রা করা গেলেও যাত্রার ধরনটাও একটু বদলে যায়। আগে ছিলো রেলপথ–জলপথ, এখন হয় রেলপথ–জলপথ–রেলপথ। যাত্রীদের মাদ্রাসের এগমোর থেকে প্রায় মাত্র ৪৮০ কিমি অতিক্রম করে পৌঁছাতে হতো ধানুশকোদি স্টেশনে। ধানুশকোদি হলো ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একমাত্র স্থল–সীমান্ত আর যে কোনো দুই দেশের মধ্যে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সীমান্ত, মাত্র পঞ্চাশ গজ। এরপর মাত্র ৩৫ কিমি ফেরীপথে পৌঁছে যাওয়া যেতো শ্রীলঙ্কা ভুখন্ডের তালাইমান্নারে। সেখান থেকে ১০৬ কিমি আবার রেলপথে পৌঁছে যাওয়া যেত কলম্বোতে।
এখানে উল্লেখযোগ্য ধানুশকোদি থেকে তালাইমান্নারের মধ্যেই ৩০ কিমি লম্বা সেই ঐতিহাসিক রামসেতু, যার অধুনা নাম এডামস ব্রিজ – পৃথিবীর প্রথম সমুদ্র সেতু। এখন সমুদ্রের নিচে মাত্র ৩ ফুট থেকে ৩০ ফুট গভীরতায় এই সেতু নাকি আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরেই ছিলো এবং পায়ে হেঁটে ভারতের পাম্বান দ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপে যাওয়া যেত। কিন্তূ ১৪৮০ সালের এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে অধুনালুপ্ত রামমন্দিরসহ পুরো সেতুটাই সমুদ্রের গভীরে চলে যায়। পাম্বান ব্রিজ তৈরী হবার পরেই দক্ষিন রেলের একটা পরিকল্পনা ছিলো রামসেতু বরাবর একটা ১৯ কিমি রেলসেতু নির্মান করার। কিন্তূ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় নি।
স্বাধীনতার পরে প্রায় পঞ্চাশ বছর চালু থাকার পর, ১৯৬৪ সালে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ১৫০ যাত্রীসহ একটা পুরো ট্রেনই সমুদ্রে তলিয়ে যায়। ধানুশকোদি রেলস্টেশন ও রেলপথ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, যা এখনো আর নতুন করে তৈরী করা হয় নি। এরপর থেকে পাম্বান সেতু হয়ে ভারতীয় রেল রামেশ্বরম পর্যন্ত্যই যাতায়াত করে। বলা বাহুল্য ধানুশকোদি থেকে তালাইমান্নার ফেরীও তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। এখনো টিকে আছে ধানুশকোদি রেলস্টেশনের অবশেষ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।