আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যার নায়ক এডলফ হিটলারকে ধরা হলেও আর্মেনিয়ান গণহত্যা ছিল নিখুঁতভাবে একটি সম্পূর্ণ জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টার প্রথম নজির। প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আয়োজিত আর্মেনিয়ান গণহত্যা এতটাই পরিকল্পিত ছিল এবং ঠাণ্ডা মাথায় বাস্তবায়ন করা হয়েছিল যে গত ১০০বছর ধরে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এর পরবর্তী সকল গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।
বর্তমানে তুরস্ক এবং আর্মেনিয়া পৃথক দুইটি সার্বভোম রাষ্ট্র হলেও বিংশ শতকের শুরুতে তুর্কী এবং আর্মেনিয়ানরা অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে তুরস্ক রাষ্ট্রের অন্তর্গত ছিল। অটোমান সাম্রাজ্যে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীষ্ঠান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ানরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে গণ্য হতেন। ১৯০৮ সালে এক বিপ্লবের মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট সুলতান আবুল হামিদকে উৎখাত করে “ইয়াং টার্ক” বা “তরুণ তুর্কী” দল ক্ষমতায় এলে আর্মেনিয়ানরা সমঅধিকারের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন যা ভুল প্রমাণিত হতে বেশি সময় নেয়নি। অটোমান সাম্রাজ্যের মত তরুণ তুর্কী শাসকেরাও আর্মেনিয়ানদের অবিশ্বাসের চোখে দেখতো এই ভেবে যে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশ রাশিয়ার সাথে একই ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আর্মেনিয়ানরা কোনো সীমান্ত যুদ্ধে রুশদের পক্ষ হয়েই যুদ্ধ করবে। তরুণ তুর্কী দলের শাসনক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন তাদের “তিন পাশা” – তালাত পাশা, আনোয়ার পাশা ও জামাল পাশা। এর মধ্যে সকল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতো তালাত পাশার মাধ্যমে, আনোয়ার পাশা এবং জামাল পাশা তালাতের দুই হাত হিসাবে কাজ করতেন।
তালাত পাশা, আর্মেনিয়ান গণহত্যার নায়ক
১৯১৪ সালে শুরু হওয়া ১ম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানীর পক্ষাবলম্বন করে এবং একই সাথে “মিত্র রাষ্ট্র ব্যতীত সকল খ্রীষ্ঠান”দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। যা ছিল আর্মেনিয়ান গণহত্যা সংঘটনের প্রথম রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এই জিহাদের প্রথম ধাপ হিসেবে তুর্কীরা তাদের সেনাবাহিনীর অন্তর্গত সকল আর্মেনিয়ানকে বিভিন্ন অজুহাতে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং পরবর্তীতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে হত্যা করে। এসব অজুহাতের মধ্যে অন্যতম ছিল রুশ আক্রমণ মোকাবেলা করতে গিয়ে ১৯১৪ সালের শেষভাগে ককেশাসের যুদ্ধে আনোয়ার পাশার নেতৃত্বাধীন তুর্কী বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়। কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী এই অভিযানে ৯০ হাজার তুর্কী সেনা মারা যায়। তুর্কীরা এই ব্যর্থতার অজুহাত হিসাবে দেখায় আর্মেনিয়ান সেনাদের “বিশ্বাসঘাতকতা”কে। তাদের দাবী ছিল বেশ কিছু আর্মেনিয়ান সেনা দলত্যাগ করে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় ও তুর্কী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর বাদ বাকি আর্মেনিয়ানরা দলত্যাগ না করলেও যথেষ্ঠ আন্তরিকতার সাথে যুদ্ধ করে নাই। তুর্কীরা তাদের এই বক্তব্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সারাদেশে প্রচার করে যেন আসন্ন গণহত্যাটাকে সাধারণ তুর্কী জনগণ আর্মেনিয়ানদের জন্য “উচিৎ শিক্ষা” হিসেবেই মেনে নেয়।
আর্মেনিয়ান গণহত্যা শুরুর আনুষ্ঠানিক তারিখ ধরা যায় ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল। এই দিনে সমগ্র তুরস্কব্যাপী এক অভিযানে ২০০’রও বেশি নেতৃস্থানীয় আর্মেনিয়ানকে গ্রেফতার করে তুরস্ক সরকার যাদের মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ। পরের এক সপ্তাহও এই অভিযান জারী থাকে যাতে গ্রেফতার হন আরো বেশ কয়েকশত আর্মেনিয়ান। তাদের বেশির ভাগকেই বন্দি অবস্থাতেই হত্যা করা হয়, বাকিরা জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি থাকেন। এভাবে অভিযানের শুরুতেই জাতিগতভাব আর্মেনিয়ানদের মাথা কেটে দেওয়া হয় যেন তারা কারো নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে।
আর্মেনীয়দের মৃত্যুর পথে যাত্রা
এর আড়াই মাস পর ২৮ জুন সরকারি ঘোষণা আসে সমগ্র তুরস্কের সকল আর্মেনিয়ানকে ৫দিনের মধ্যে তুরস্ক ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মাধ্যমে সূচনা হয় আর্মেনিয়ান গণহত্যা সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায়টির। এই ঘোষণার ব্যাপারে তরুণ তুর্কী সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল রাশিয়ার সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে রুশ-বৎসল আর্মেনিয়ানদের দেশে রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তাদের তুরস্ক থেকে সিরিয়ার আলেপ্পোতে স্থানান্তর করা হবে। এ ঘোষণা সম্প্রচারের সাথে সাথে সমগ্র দেশজুড়ে একযোগে আর্মেনিয়ানদের উপর যেন অত্যাচারের লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়। তুর্কী পুলিশ, তরুণ তুর্কী দলের নেতকর্মীরা এবং সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যেখানে যে অবস্থায় আর্মেনিয়ানদের পেয়েছে, সেখান থেকেই বিনা নোটিশে তাদের ধরে নিয়ে আসা শুরু করে। আর যারা কিছুটা সময় পেয়েছিল সামনের লম্বা সফরের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার, তাদের অবস্থা যে খুব একটা ভাল ছিল তা-ও না। তারা বাধ্য হয়েছিল নামেমাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে তাদের সকল সহায়-সম্পত্তি স্থানীয় তুর্কী প্রতিবেশীদের হাতে তুলে দিতে। এই ঘোষণা এতই আকস্মিক ও এর প্রভাব আর্মেনিয়ানদের উপর এভাবে পরেছিল যে কনস্টান্টিনোপলে নিয়োজিত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হেনরি মরগানথাউ একে বর্ণনা করেনঃ
ভিসুভিয়াসের লাভার স্রোত যেভাবে পম্পেই নগরীর উপর নেমে এসেছিল, ঠিক সেরকম আকস্মিকতা ও ভয়াবহতা নিয়ে তুর্কী পুলিশ সাধারণ আর্মেনিয়ানদের উপর হামলে পরে।
খুব কম সময়ের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় তুরস্কের বিভিন্ন শহর থেকে আর্মেনিয়ানদের ধরে ধরে সিরিয়া পাঠানোর প্রক্রিয়া। এই জোরপূর্বক দেশত্যাগ প্রক্রিয়ার পুরোটাই ছিল এক নিশ্চিত মৃত্যুফাঁদ। লক্ষ-লক্ষ আর্মেনিয়ানকে কোনো যানবাহন ছাড়াই পায়ে হেঁটে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে সিরিয়া যেতে বাধ্য করা হয়। তাদের কোনো খাবার কিংবা পানি সরবরাহ হয়নি। সাথে ছিল তুর্কী প্রহরীদলের অত্যাচার। কেউ ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেই প্রহরীদল তাকে মেরে উঠিয়ে আবার হাঁটতে বাধ্য করতো। আর এভাবেই রাস্তার দু’ধারে বড় হতে থাকে অপুষ্ট হাড্ডিসার মানুষের লাশের স্তূপ।
এই প্রহরীদল সম্বন্ধে শোনা যায় যে এই দলগুলো তৈরি করা হয়েছিল কারাগার থেকে বাছাই করা দাগী আসামীদের নিয়ে। এছাড়া ছিল তুর্কী পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর সৈনিক ও কর্মকর্তারা। কেননা, অনেক তুর্কী সরকারী কর্মকর্তা এবং সেনা এই অমানবিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন। এদের অনেককেই চাকুরীচ্যুত করে বিচারের সম্মুখীন হতে হয় আর্মেনিয়ানদের প্রতি “যথেষ্ঠ নির্মম” না হতে পারার কারণে। বিশেষভাবে নিযুক্ত এই প্রহরীদলগুলো দেশত্যাগী আর্মেনিয়ানদের নগ্নপদে ও নগ্নশরীরে মরুভূমির তপ্ত বালুর উপর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যেত। যখন-তখন তাদের খেয়াল খুশিমত বন্দী তরুণী ও শিশুদের তুলে নিয়ে যেত ও ধর্ষণের পরে তাদের হত্যা করতো। এমনও ঘটনার নজির রয়েছে যেখানে একদল আর্মেনিয়ান নারীকে পাশবিক অত্যাচারের পর ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
আর্মেনিয়ান নারীদের আজকের তুরুস্ক পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে
বর্বরতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যেতে কোনো দ্বিধাই করেনি এসব তুর্কী। এমনকি যখন কুর্দী ডাকাতদল এই দেশত্যাগীদের দলগুলোকে আক্রমণ করতো তাদের সাথে থাকা শেষ সম্বলগুলো কেড়ে নিতে, প্রহরীদলগুলো ডাকাতদের প্রতিহত না করে আর্মেনিয়ানদের পালাতে বাধা দিত যেন তারা ডাকাতদের সহজ শিকারে পরিণত হয়। দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া আর্মেনিয়ানদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তিই নিজেদের জীবন বাঁচাতে পেরেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন জানান, তার সাথের খুব অল্পসংখ্যক লোকই পুরো মরুভূমি পাড়ি দিয়ে শেষ গন্তব্যে পৌঁছুতে পেরেছিলেন। যারা বেঁচেছিলেন, তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলে তুর্কীরা। তিনি-ই ভাগ্যগুণে সেদিন জীবিত ছিলেন। তার কথার প্রমাণ মিলে বেশ সহজেই। এখনো দার-এস-জোর মরুভূমিতে প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় বধ্যভূমি, আর সেগুলো থেকে বের হয়ে আসে আর্মেনিয়ানদের দেহাবশেষ।
তরুস্কের মুসলমান সম্রাট আর্মেনিয়ানদের কচুকাটা করেছিল
সে সময় যে বিশ্ব সম্প্রদায় আর্মেনিয়ানদের উপর চলা এই হত্যাযজ্ঞের কথা জানতো না, তা না। জার্মান সরকার এই ব্যাপারে সম্পূর্ণরুপে অবগত ছিল তুরস্ক সরকারের মিত্র হিসেবে। তারপরেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এর বিন্দুমাত্র বিরোধিতা করেননি মিত্র তুরস্ক সরকারের সমর্থন হারানোর ভয়ে। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ আরো বিভিন্ন দেশের অনুরোধ তারা উপেক্ষা করে এটি তাদের “যুদ্ধকালীন জরুরী অবস্থা”র দোহাই দিয়ে। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্যসংস্থার অর্থ ও সরঞ্জামাদি আসার পথও বন্ধ করে দেয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ খরচে ও নিজ উদ্যোগে আর্মেনিয়ানদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তুরস্ক সরকার তা ফিরিয়ে দেয়। এ থেকেই পরিষ্কার হয় তরুণ তুর্কী নেতৃবৃন্দ কি গভীর সংকল্প ও ঘৃণা নিয়ে আর্মেনিয়ান জাতিটিকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অভিযানে নেমেছিলেন। এ বিষয়ে কূটনৈতিক পরিসরে সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনাটি বর্ণনা করেন সে সময় তুরস্কে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। ১৯১৫-১৯১৮ পর্যন্ত চলা এই গণহত্যার এক পর্যায়ে যখন যুদ্ধ চলাকালীন অর্থনীতিতে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টান পরে, তখন একদিন তালাত পাশা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠান। নিজের অফিসে বসে তালাত রাষ্ট্রদূতকে যা বলেন, তার সারমর্ম অনেকটা এরকম-
আলেপ্পো যাওয়ার পথে এমন অনেক আর্মেনিয়ান মারা গেছেন যাদের জীবনবীমা করা ছিল মার্কিন বিভিন্ন কোম্পানিতে। যেহেতু তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দও তাদের সাথে মারা গেছেন, সেহেতু তাদের বীমা বাবদ প্রাপ্য অর্থের দাবীদার বর্তমানে তুরস্ক সরকার। আপনি আপনার দেশে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব টাকাটা তুর্কী কোষাগারে জমা করার ব্যবস্থা করুন।
বলা বাহুল্য, এই অদ্ভুত “আবদার” শুনে রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে তালাতের কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন।
শুধু যে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডেই তুর্কীদের নৃশংসতা থেমে ছিল তা নয়। শিশুদের হত্যা করে তারা ক্ষান্ত হয়নি, মেয়ে শিশুদের অনেককেই তারা ধর্ষণ করে বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রয় করে দেয়। এছাড়া, যেসব আর্মেনিয়ান শিশু এই হত্যাযজ্ঞে কোনোভাবে বেঁচে ছিল, তাদের তুর্কী সেনারা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে দাসের মত গৃহপরিচারকের কাজে নিয়োগ দেয়। আর্মেনিয়ান গণহত্যা কেড়ে নেয় লক্ষ-লক্ষ শিশুর শৈশব ও কৈশোর। মূলত এই শিশুরাই বর্তমান আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর পূর্বসুরী।
আর্মেনিয়দের উপর তুরুস্কের মুসলিম শাসকদের নির্মমতা
১৯১৫ সালে শুরু হয়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর পরাজয় পর্যন্ত চলা এই গণহত্যার পূর্বে তুরস্কে আর্মেনিয়ান গোষ্ঠীর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০লক্ষের মত। এই নৃশংস গণহত্যায় তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১৫লক্ষ মানুষ জীবন হারান শুধুমাত্র কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তির রোষের শিকার হয়ে।
১৫লক্ষ মানুষের মৃত্যুর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে তুরস্ক কখনো এই গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া তো দুরের কথা, সরাসরি এই গণহত্যাকে অস্বীকার করে আসছে বিগত ১০০বছর ধরে! সমগ্র বিশ্বে ফ্রান্স, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডসহ মাত্র ২০টি রাষ্ট্র এই গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি, গণহত্যা চলাকালীন আর্মেনিয়ানদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষনেতারাও বিগত এক শতাব্দী এই গণহত্যা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেননি তাদের বর্তমান মিত্র এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র তুরস্কের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে।
গণহত্যা ও গণকবরগুলো স্বাক্ষী দিচ্ছে তুরুস্কের মুসলিম শাসকের বর্বরতা
এই গণহত্যার মূল নকশাকার ও কারিগর তালাত পাশা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর এক জার্মান যুদ্ধজাহাজে চেপে জার্মানীর বার্লিনে আত্মগোপন করেন। তবে তার কৃতকর্ম তার পিছু ছাড়েনি। ১৯২১ সালে আত্মগোপনে থাকা তালাতকে খুঁজে বের করে হত্যা করে এক আর্মেনিয়ান যুবক। তৎক্ষণাৎ ধরা পরা সেই যুবক আদালতে তার সকল দোষ স্বীকার এবং হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসাবে তালাত পাশার নির্মমতার খতিয়ান তুলে ধরলে জার্মান আদালত মাত্র তিনদিনের বিচারে তাকে বেকসুর খালাস দেয়। কেননা এই বিচারকার্য গণমাধ্যমের ব্যাপক মনযোগ কাড়তে শুরু করে এবং বিচার দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে জেরা-পাল্টা জেরায় এই গণহত্যায় জার্মানীর পরোক্ষ সম্মতির বিষয়টি জনসমক্ষে চলে আসতে শুরু করেছিল। মুখ বাঁচাতেই জার্মনারা আততায়ী যুবকটিকে ছেড়ে দিতে একরকম বাধ্য হয় বলা চলে।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ অনলাইন ও লাল সংবাদ