ইসলামী ভাতৃত্ব যখন বিপদ ডেকে আনে।

ইসলামী ভাতৃত্ব যখন বিপদ ডেকে আনে।
ইসলামে ধর্মীয় ভাতৃত্বের বন্ধনের উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামে ধনী দরিদ্র, শিক্ষিত অশিক্ষিত; সাদা কিংবা কালো সকলকে একীভূত করা হয়েছে। সকলেই একই স্থানে একই সময়ে উপাসনা করবে; একের দু:খ অপরে কাঁধে তুলে নেবে; শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সকলে একই সাথে মোকাবিলা করবে। এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে হত্যা করতে পারবেনা- ইত্যাদি অসংখ্য নিয়মে একটি উম্মাহ গড়ে তোলাই ইসলামের প্রাথমিক লক্ষ্য।যদি কোথাও একজন মুসলমান মারা যান তবে সকলকেই জানাজায় যেতে হবে। বিশ্বের কোথাও একজন মুসলমান আক্রান্ত হলে তা সকল মুসলমানের উপর আক্রমন বলে বিবেচিত হবে।
নি:সন্দেহে এতে যেকোন মুসলমান অন্য যে কোন ধর্মালম্বীর চেয়ে অনেক ভাগ্যবান। এটা মানসিক দিক দিয়ে মানুষকে শক্তি যোগাতে সর্বদাই খুব কার্যকর।
কিন্তু এরও কিন্তু একটা খারাপ দিক আছে। অন্তত আমি মনে করি এটা মুসলমানদেরও বিবেচনা করা উচিত। আপনাদের বুঝতে হবে যখন আপনারা এভাবে ধর্ম ভিত্তিক ভাতৃত্ব গড়ছেন তখন যারা সেই উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হতে পারলোনা তাদের সাথে কিন্তু মানসিক দিক থেকে আপনাদের একটা দুরত্ব সৃষ্টি হতে শুরু করল। এরপর সেই দুরত্ব ক্রমেই নতুন নতুন ভুলবুঝাবুঝির পথ তৈরী করে এবং পরিনতিতে তা শত্রূতায় পর্যবসিত হয়।
যদি বলা হয় বর্তমান রোহিনগা সংকটের জন্য এই ইসলামী ভাতৃত্ব অনেকাংশেই দায়ী তবে কি ভুল বলা হবে? আধুনিক বিশ্বে মুসলমান এমন কোন শক্তিশালী রাষ্ট্র নাই যা মুসলমানদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। শক্তি বলতে তো তুরস্ক, পাকিস্তান,ইরান, ইনদোনেশীয়া আর মালয়েশীয়ার মত কটি দেশ। অন্যদিকে চীন ভারত রাশিয়া আমেরিকা জাপান ইউরোপ, কেনেডা অষ্ট্রেলিয়া। এরা কেউ ইসলামী ভাতৃত্বের পক্ষের নয়। সুতরাং একজন মুসলমান আক্রান্ত হলেই “নারায়ে তকবির” বলে সমস্যাকে ইসলামী করনের ফলে সমস্যার মানবিক দিকটা আড়াল করে দেয়া হয়। একজন  মুসলমানের সমস্যা আর একজন মানুষের সমস্যা এক নয় বিশ্বের কাছে। সাম্প্রদায়ীক পরিচিতি মুসলমানদের অনুপ্রানিত করলেও অন্যরা এতে দ্দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে যায়। বিশ্ব মানবিক সমস্যার ডাকে এগিয়ে আসবে কিন্তু ইসলামী উম্মাহর কথা বিবেচনা করে উলটো পিছিয়ে যাবে।
রোহিংগাদেরকে যারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য উদ্ভুদ্ধ করেছিল তাদের অপরাধ ছিল তারা “ইসলামী রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল”- তেমনটাই তাদের বুঝিয়েছিল ইসলামপন্থীরা বিশেষত পাকিস্তান আর আমাদের জ্বেহাদী চেতনা ধারীরা। পথে পথে মসজিদ থেকে মিছিলে গর্জন উঠে “বৌদ্ধদের এ দেশ থেকে তাডাও। জ্বেহাদ করতে বার্মা চলো”।
এসব আস্ফালনের প্রতিক্রীয়া কি হল? জাপান, চীন, ভারত, রাশিয়া ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থান নিল। এখন কি হবে? তুরস্ক আর পাকিস্তান ইতিমধ্যে এসে গেছে। লাভের আশা না ক্ষতির আশংকা করবে বাংলাদেশের মানুষ?
জ্বেহাদ শ্লোগান বন্ধ করুন। মানুষের কথা বলুন আর সামপ্রদায়ীক এই ভাতৃত্ববোধকে দূরে ফেলে বারবার উচ্চারণ করুন “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”।