ফেসবুকের একটি সেরা পোস্ট
জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্ম ছিল ইসলাম। নিজেকে মুসলমান বলতে একসময় গর্ব বোধই করতাম। কিন্তু হঠাত করে একদিন একটি ঘটনা আমার সবকিছু উল্টোপাল্টা করে দিল।
তখন আমি কলেজে ছিলাম। আমার এক বন্ধুর বাবা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেন। হ্যামোরেজিক ডেঙ্গু। প্লাটলেট কাউন্ট কমে যাচ্ছে, অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ল। ডাক্তার বলল রক্ত দরকার। ব্লাডগ্রুপের সাথে ম্যাচ করে এমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি হন্যে হয়ে খুজে দুইজন ডোনার পেলাম। একজনের নাম সন্দীপ গুপ্ত আরেকজন আরিফ হোসেন। আমার বন্ধুর বাবার জন্য দুইজনই রক্ত দিলো।
এরপরে তিনদিন কেটে গেল। প্লাটলেট কাউন্ট ধীরে ধীরে স্থির হতে শুরু করল। আমার বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম। তার বাবা ভালো আছেন। সে খুব আনন্দিত। কিন্তু আমাকে হাসপাতালে দেখে সে একটু বিচলিত হলো যেন। আমাকে অন্য রুমে ডেকে নিলো। আমি বললাম, “কি হলো? কিছু বলবি”?
-দোস্ত একটা ছোট্ট অনুরোধ ছিলো। তোর যে একজন বন্ধু বাবাকে রক্ত দিয়েছিল না, সন্দীপ গুপ্ত। এটা যেন বাবা ঘুনাক্ষরেও জানতে না পারে?
অবাক হয়ে বললাম, কেন? আরিফ দিছে, সন্দীপ দিছে, আরিফেরটা বলা যাবে, সন্দীপের টা বলা যাবে না কেন?
– আরে শোন, আমার বাপ যদি শুনে তার শরীরে হিন্দুর রক্ত ঢুকছে সে সহ্য করতে পারবে না। বুঝিসই তো, পরহেযগার লোক।
সেদিন বাসায় ফেরার পথে, রাস্তায়, ঘাটে এমনকি নিজের বাসায় পর্যন্ত গিয়ে আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। আমার বার বার মনে হচ্ছিলো, আমরা সবাই তো রক্ত মাংসের মানুষ। শুধুমাত্র কে কি বিশ্বাস করে সেটা নিয়ে মানুষে মানুষে এত ঘৃণা?
একথাটা আমি সন্দীপকে বললাম একদিন। সে হেসে উড়ায় দিলো।
কিন্তু এর পর থেকে মানুষে মানুষে এই বিভেদ মন্ত্রে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে। আল্লাহ, খোদা, ঈশ্বর কিংবা সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন। তবে তার মানে এই নয় তাঁকে বিশ্বাস করতে হলে আরেকজনকে ঘৃণা করে করতে হবে!
সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। সবাইকে সমান বুদ্ধি বিবেক দিয়েছেন। মুসলমানকে বেশি বুদ্ধি দিয়েছেন আর খ্রীষ্টানকে কম বুদ্ধি দিয়েছেন এমন তো নয়! কিংবা একজন হিন্দুর রক্ত কালো আর মুসলিমের রক্ত লাল এমনও তো নয়।
তিনিই কোনভাবেই তো তফাৎ করেন নাই। তাহলে আমরা কেন করি?
Regards : Sabnam Chaudhury
copy from
Imroz Ahmad