মুক্তি ???? ভক্তি বিনা মুক্তি নাই ।

“ শুধু ভক্তিতেই মুক্তি ???”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

শীতকাল পড়েছে। হাবড়ার চারিদিকে ভক্তি ধর্মের নানা অনুষ্ঠান চলছে। হরিনাম যজ্ঞ যত্র তত্র। বয়ষ্ক বয়ষ্কা দের ভীড়। কম বয়ষীরা ক্রিকেট এবং বড়দিনের আনন্দানুষ্ঠান নিয়ে খুব ব্যস্ত।  আমি গীতা প্রবচন করে চলেছি।

সব প্রবচনকারীরা ভক্তিকে শধু প্রাধান্যই নয় একমাত্র উপায়, এটাই বলছেন। আমি একটু অন্য কথা বলি, বেসুরো লাগে। 
ঈশ্বরে ভক্তি কি করে হবে ? যাকে ভক্তি করবো, তাকে যদি তত্বত না জানি,তাহলে কাকে ভক্তি করবো ??? শুধু মুখে হরি হরি বললে কি হরি ভক্তি হবে ? মনে ভক্তি আসবে ? ভক্ত
হওয়া যাবে ? ঈশ্বরের ‘ভক্ত’ হওয়া কি অতো সহজ????

গীতাতেই বলে আছে, এক হাজার ঈশ্বর তাত্বিকের ( যিনি ঈশ্বর তত্ব জানেন,ঈশ্বরকে তত্ত্বত জানেন) মধ্যে একজন “নিষ্কাম কর্মী” হতে পারেন, ত্যাগী হতে পারেন, কামনা বাসনা ত্যাগ করতে পারেন। এক হাজার কামনা বাসনা ত্যাগী সাধনা করে একজন সত্যিকারের “কৃষ্ণ ভক্ত” হতে পারেন, তার কৃষ্ণ লাভ হয়। তিনি ‘মোক্ষ’ লাভ করেন। এই জীবনেই সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে পরমাত্মার সংগে যুক্ত হতে পারেন।

আপনি রাজ দর্শন করবেন,রাজাকে দর্শন করবেন। কারন আপনি মনে করেন আপনি রাজাকে ভক্তি করেন। কিন্তু আপনি জানেন না ‘রাজা কে বা কি? তিনি কেমন ? যাকে জানেন না, যার স্বরুপ চেনেন না, তার প্রতি ভক্তি আসবে কি করে ???? ডাক্তার পাশ করা না হাতুড়ে, তার চিকিৎসা জ্ঞান কতোটুকু, তার হাত যশ আছে কি না, তা না জেনে তাকে দিয়ে কি চিকিৎসা করাবেন ?? মনে হয় না ।

তাহলে আপনাকে প্রথমে ‘রাজা’ (ঈশ্বর কে) কে ভালো করে জানতে হবে, তার স্বরুপ জানতে হবে। সেই জানার জন্য “স্বাধ্যায়” ( আধ্যাত্ম জ্ঞান লাভ করার জন্য নিয়মিত শাস্ত্র পাঠ করা) অভ্যাস করতে হবে। এটাই জ্ঞান যোগ।

আপনি রাজাকে জানলেন, রাজ বাড়ি কি করে যেতে হয় জানলেন, আপনি জ্ঞানী হলেন।  আপনার জ্ঞান নিয়ে আপনি ভাবলেন “আমি তো জ্ঞানী,পন্ডিত। আমার আর কি চাই ? নাম যশ তো হয়েছে, সেই যশ ভাংগিয়ে বেশ অর্থ ও আসছে। বাঃ, আর কি চাই ? আপনার জ্ঞান দিয়ে কিছুই হলো না। বৃথা গেলো। আপনি জ্ঞানী মুর্খ, অজ্ঞান ই রয়ে গেলেন।

রাজবাড়ি যেতে হলে আপনাকে পায়ে হেটে, কষ্ট করে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টায় “রাজার সান্নিধ্য লাভ’ ই হবে একমাত্র কামনা, অন্য কিছুই নয়। রাজার কাছে কি প্রার্থনা করবেন বা মনে কি কামনা সেটাই থাকবে না। শুধু রাজ দর্শন (ঈশ্বর দর্শন ছাড়া অন্য কিছুই নয়)। রাজা কি দেবেন (আপনার প্রচেষ্টায় ) সেটা মনে আসবেই না । এটাই হচ্ছে “নিষ্কাম কর্ম” পদ্ধতি। এই নিষ্কাম কর্মই আপনাকে ভক্ত বানাবে।

আপনি রাজবাড়িতে পৌছে দেখলেন দরজা বন্ধ। ঈশ্বরের সংগে সাযুজ্য লাভ করতে “নিষ্কাম কর্ম “ করে ‘চিত্ত শুদ্ধি’ না করলে ওই দরজা কোনোদিন খুলবে না। চিত্ত শুদ্ধ না হলে ভক্ত হওয়া যায় না।

ডঙ্কা বাজিয়ে, মুখে শুধু “বোল হরি বোল” বা কৃষ্ণ নামের ঘটা করবেন, কিন্তু ‘জ্ঞানী হয়ে নিষ্কাম কর্মের যজ্ঞ করবেন না, তাতে ভক্তি আসবে না, ভক্তও হতে পারবেন না। আর সেই ‘অপরা ভক্তি’ না আসলে “ঈশ্বর দর্শন হবে না, রাজ দর্শন হবে না।

মুক্তি ???? ভক্তি বিনা মুক্তি নাই ।