দেখেশুনে মনে হচ্ছে, দেশে একমাত্র প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সুরেন্দ্র সিনহা দুর্নীতিগ্রস্ত, বাকিরা সবাই ফেরেস্তা?

আইনমন্ত্রী হটাৎ সিন্হা-প্রেমী হলেন কেন? 

প্রধান বিচারপতি অষ্ট্রেলিয়া নামার আগেই তার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ উত্থাপিত হলো। বলা হলো, রাষ্ট্রপতি এগুলো এনেছেন। যেকোন বিচারকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা দেশের আইন অনুযায়ী ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে’ জানানো নিয়ম। বিশ্বাস করা কঠিন যে, একজন উকিল রাষ্ট্রপতি সেটা জানেন না বা তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন? তাই প্রশ্ন, রাষ্ট্রপতি জানতেন তো যে উনি এসব অভিযোগ এনেছেন?

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে এগুলো কি বাংলাদেশের ওপর তলার প্রায় সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়? ২০০৭-২০১৭-তে সবার সম্পদের হিসাব নিলে এখন যারা এসব লম্বা লম্বা কথা বলছেন তারা সবাই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে যাবেন না? দেখেশুনে মনে হচ্ছে, দেশে একমাত্র প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সুরেন্দ্র সিনহা দুর্নীতিগ্রস্ত, বাকিরা সবাই ফেরেস্তা? এতো ফেরেস্তার দেশে সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত্র কেন?

প্রধান বিচারপতি যাবার সময় বিচার বিভাগ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ঢেলে সাজাবেন? আইনমন্ত্রী একথা বলতে পারেন না, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তা করতে পারেন না? কারণ প্রধান বিচারপতি পদটি সাংবিধানিক হলেও ভারপ্রাপ্ত পদটি সাংবিধানিক নয়? মাননীয় আইনমন্ত্রী, এত তাড়া কেন? প্রধান বিচারপতি অবসরে যাবার পরই নাহয় ঢেলে সাজালেন?

বলা হলো, ৫জন বিচারপতি সিনহার সাথে একই বেঞ্চে বসবেন না? ষোড়শ সংশোধনী রায়টি কি সর্বসম্মত ছিলো না? প্রশ্ন হলো, বিচারপতিরা জানেন তো যে ওনারা ওকথা বলেছেন? আর সিন্হার সাথে যে অসভ্য আচরণ করা হয়েছে, তারপর অন্য বিচারপতিদের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তারা টু-শব্দ করেন? তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে যে তাদের শাসানো হয়নি তা কি আমরা জানি? বিচার বিভাগের পক্ষে তো মানুষের অভাব নেই, তারা কাদের ভয়ে কথা বলতে পারছেন না? আমি দেশে থাকলে কি এখন যেসব কথা বলছি তা বলতে পারতাম?

এটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি যে আবার এসে চেয়ারে বসবেন সেটা দুরাশা’? একজন এটর্নি জেনারেল কি এমন কথা বলতে পারেন? স্মর্তব্য যে, তিনিও বলেছিলেন যে, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ? আইনমন্ত্রীর মতো তিনিও হয়তো এখন বলবেন, ‘জীবনে মিথ্যা কথা বলিনি’? বাংলাদেশে কেউ মিথ্যা কথা বলেনা, সবাই ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির?

আজ দেখলাম আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে তাড়াহুড়া করাটা ঠিক হবেনা? উনি হটাৎ করে সিন্হা-প্রেমী হয়ে গেলেন কেন? কারণ সিনহাকে দণ্ডিত বা বরখাস্ত করলে তার দেয়া রায়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? সেগুলো পূর্বিবেচনার করতে হতে পারে বা এমনকি অপরাধীদের সাজা মওকুফ হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে  এ ধরণের নজির আছে। প্রধান বিচারপতি অসৎ হলে তার রায় সৎ হওয়ার কোন কারণ নেই?

সুখের বিষয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আর কোন কথা না বলতে। কারণ তিনি হয়তো উপলব্ধী করেছেন যে, এতে দেশের বা তার সরকারের কোন লাভ হচ্ছেনা, বরং ক্ষতি হচ্ছে, মানুষ এখন আর এসব বিশ্বাস করছে না? আমার ধারণা সিনহাকে যারা ‘হিরো থেকে জিরো’ বানাতে চাচ্ছেন, তারা শেষপর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেবেন।