রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার পর, এই সাম্প্রদায়িক হামলায় উশকানি দেয়া মাওলানা হামিদীকে গ্রেফতার না করে যার ঘরে আগুন লেগেছিলো সেই টিটু রায়কে গ্রেফতার করার পর দুইজন ব্যক্তির বক্তব্য জানতে খুব কৌতূহল হয়েছে। একজন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, অপরজন কবি নির্মেলেন্দু গুণ। মুনতাসির মামুন, বদরুদ্দিন উমার কিংবা অন্যান্য ভামরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে একটি ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’ দল বলে এখন নিষেদ্ধের দাবী উঠালে অবাক হবো না। বিশেষত গতকাল ঐক্য পরিষদ নেতা সুব্রত চৌধুরীর বক্তব্য দেয়ার পর। তার আগে কবি গুণের কথায় আসি। কবি নির্মেলেন্দু গুণ রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতনের সময় সরকারের কাছে একটা বন্দুক চেয়েছিলেন বার্মা গিয়ে বৌদ্ধ মারার জন্য। অনেকেই মনে করেছিলো কবি মনে হয় বার্মা থেকে এখনো যুদ্ধ করে ফেরেননি। কিন্তু পরে দেখা গেলে বিডিনিউজে তিনি রাজু আলাউদ্দিনের সঙ্গে ফোনে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। সেখানে একটি ‘নির্মেলেন্দীয় থিউরী’ পাওয়া গেছে। এই থিউরী দিয়ে আপনি নাসিরনগর বলেন আর ঠাকুরপাড়া- সব জায়গাতেই তাত্ত্বিকভাবে আমেরিকাকে দায়ী করতে পারবেন! কারণ কবি গুণের ভাষায়, ‘(নাইন ইলেভেন) ঘটনার পর মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে আমেরিকা যে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করল, হত্যাযজ্ঞ শুরু করল, এটা মুসলমানদেরকে আতঙ্কিত করেছে ভেতর থেকে। তারা ভেবেছে, এটাকে শুধু অস্ত্র আর অর্থ দিয়ে মোকাবেলা করলে হবে না। ইমলামিক চেতনা দিয়ে এটাকে মোকাবেলা করতে হবে। এরপর থেকে তারা ইসলামিক চেতনাকে বেশি করে আকড়ে ধরেছে। ফলে কোথাও একটু আঘাত আসলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে’।
অথচ আমরা দেখেছিলাম নাসিরনগর হামলার পর কবি ‘ক্ষিপ্ত’ হবার বদলে আড়ালে লুকিয়ে কাঁদতে চেয়েছিলেন! নিজের মুখেই তখন ফেইসবুকে লিখেছিলেন, ‘পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের অত্যাচারে জন্মভূমিতে টিকতে না পেরে ১৯৭১ সালে তো আমরা মালাউনরা ভারতেই চলে গিয়েছিলাম। …ভারত আমাদের খুব বেশিদিন থাকতে দিল না। নয় মাসের মাথায়, ১৬ ডিসম্বরে পাকি মুচুয়ার দল মিত্রবাহিনীর কাছে ( মতান্তরে ভারতের কাছে) রমনা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে বসল। আর সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থী শিবিরগুলো বন্ধ করে দিয়ে ভারত ভদ্রভাবে আমাদের সদ্যোজাত বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিল। সবাই যে ধাক্কা খাইয়া দেশত ফিইরা আইল, তা কিন্তু না। অনেকেই আমার মতো, আপনের মতো মহানন্দে নাচতে নাচতে ফিইরা আইল তার সাত পুরুষ ( মতান্তরে সাতশ’ পুরুষ)-এর জন্মভিটায়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগও অন্তত মুখে মানা করল না। বলল- ‘আয়, আয়। ভোটের সুময় তোরারে কামে লাগব। তয় দেহিস আবার ইলেকশনে দাঁড়াইচ না কুনু। তোরা দরকার পড়লে ভোট দিবি, আর মাঝেমইধ্যে আমলীগের পক্ষে মিছিল করবি, কবিতা, গান, নাটক এসব লেখবি। আয়। আইয়া পড়।’
বাংলাদেশে এমন কোন হিন্দু ধর্মালম্বী পাওয়া যাবে না যিনি এই বোধের মধ্য দিয়ে যাননি। হিন্দু হওয়াটাই যেন এ দেশে পাপ! তবু একবার ক্ষিপ্ত হলেন না কেন কবি? একটা বন্দুক চাইলেন না কেন কারোর কাছে? উল্টো রাজু আলাউদ্দিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে’ তাল দিয়ে গেলেন…। বললেন, ‘হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যকে সাতচল্লিশের সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে আলাদা করা যায় না’। বার্মার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত কবি, সাতশ’ পুরুষের জন্মভিটা থেকে মালাউন গালি খেয়ে তাড়া খাওয়া সম্প্রদায় থেকে আসা কবি এইসব ন্যাতা ন্যাতা ভাসা ভাসা অসাম্প্রদায়িক কাল্পনিক ইতিহাস আওড়ান আর আড়ালে কি চোখের পানি মুছেন? অন্তত একবার ক্ষিপ্ত হয়ে যুদ্ধ না হোক একটা বিদ্রোহী কবিতা তো লিখতে পারতেন। সেটা না পারেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের বক্তব্যকে সত্য বাস্তব বলে কলম ধরতে পারতেন। ঐক্য পরিষদের নেতা সুব্রত চৌধুরী রংপুরের ঘটনার পর বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে শূন্যের কোঠায় নিয়ে যেতে সরকার জিরো টলারেন্সের নামে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে’। কবি গুণ যে এ বিষয়ে নিরব থাকবেন স্বাভাবিক। তবে অধ্যাপক মামুন স্যার এই বিষয়ে কি একমত? জানা যায়নি এখন পর্যন্ত। তবে অনুমান করা যায় বৈকি। ঐক্য পরিষদের নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভারতকে নিজের দেশ মনে করা এদেশের হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে মামুন স্যার জনকন্ঠে কলাম লিখেছিলেন যখন রানা দাশগুপ্ত ভারতের বিজেপি’র সঙ্গে মিটিংয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনকে তুলে ধরেছিলেন। এতে ‘ক্ষিপ্ত’ হয়ে উঠেছিলেন মামুন স্যার। কারণ তাদের সরকার এখন ক্ষমতায়। খালেদা ক্ষমতায় থাকলে অবশ্য স্যার নিজেই ঐক্য পরিষদের সফর সঙ্গী হলেও হতে পারতেন। আসলে ঐ যে কবি গুণ ফেইসবুকে লিখেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগও অন্তত মুখে মানা করল না। বলল- আয়, আয়। ভোটের সুময় তোরারে কামে লাগব। তয় দেহিস আবার ইলেকশনে দাঁড়াইচ না কুনু। তোরা দরকার পড়লে ভোট দিবি, আর মাঝেমইধ্যে আমলীগের পক্ষে মিছিল করবি, কবিতা, গান, নাটক এসব লেখবি…’ -মামুন স্যারদের চোখে হিন্দুরা এদেশে এরচেয়ে বেশি কিছু না। মামুন স্যাররা হিন্দুদের কারণে পিছিয়ে ছিলেন তাই পাকিস্তান করেছিলেন হিন্দু খেদিয়ে। তারপর ২৩ বছর পাকিস্তানের সঙ্গে ঘর করে ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ বানিয়েছেন। সুব্রত চৌধুরীদের কথা তাদের কাছে তাই ‘উগ্র হিন্দুর’ মত লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ রংপুরের ঘটনায় সুব্রত চৌধুরী কারোর বিচার চাননি। এটা তো বিএনপি-জামাতের মত ‘স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিকে’ ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র! সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, বলেছেন, ‘এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, যেসব সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বা পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- কারও বিচার চাইতে এখানে আসি নাই। কারণ আমি জানি, আমি বিচার চাইলে যারা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা সুরক্ষা পাবে, এবং যারা প্রশাসনে থাকবে তাদের প্রমোশন হবে। বিচার কোনো দিন বাংলার মাটিতে হবে না’।
এ সত্য তিতা তাই ‘স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ’ কারোরই জুত লাগে না। আসল সত্য এটা যে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খুশি। এ কারেণই টিটু রায় নামের একজনকে ধর্মীয় উশকানির সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে যার পরিবার মুসলমানদের দেয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু যে মাওলানা হামিদী ফেইক পোস্ট শেয়ার দিয়ে ঘৃণা উশকে দিয়েছে তাকে ধরা হয়নি। আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানকে খুশি করতেই টিটু রায় নামের অশিক্ষিত গরীব একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যার পরিবার সাম্প্রদায়িক ঘৃণার শিকার। এই বাংলাদেশই সবাই চেয়েছিলো। সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন বাংলাদেশই চেয়েছিলো…।