#হালাল…একটি অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ ~
ঘটনাকাল ১৯৭৯ সাল। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতউল্লাহ আল খোমেনি অমুসলিম দেশ থেকে মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন। যা হবার হলোও তাই। কিছুদিনের মধ্যেই মাংসের ঘাটতি দেখা দিলো। ইসলামিক দেশগুলো যে পরিমান মাংস উৎপাদন করে তাতে নিজেদের ঘাটতিই মেটে না। রপ্তানি করে তাদের চলবে কেন!
চিন্তাগ্রস্ত খোমেনি ভাবলেন পশ্চিম থেকে মাংস আমদানি নিষেধাজ্ঞার পর পুনরায় সেটা চালু করলে পশু জবাইয়ের ইসলামী তরিকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এবং সেটা বিধিসম্মত নাও হতে পারে। বুদ্ধিমান চতুর খোমেনির মাথায় এলো ইহুদীদের “Kosher” সিস্টেমের কথা। ততোদিনে “Kosher” বেশ এগিয়ে গেছে। যদিও খুব কম সংখ্যক ইহুদি এসবের বাছবিচার করে। Kosher হলো সেই প্রক্রিয়া যাতে করে পশু জবাইয়ের আগে এবং জবাই শেষে সৃষ্টিকর্তার নাম নেয়া হয়। সে যাই হোক, খোমেনি ঘোষনা দিলেন ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হলে, তবেই মাংস আমদানি করবে ইরান..
ব্যস, তৈরি হয়ে গেল নতুন মুসলিম কনসিউমার ব্র্যান্ড “হালাল”। সাথে সাথেই মুসলিম বিশ্ব লুফে নিল । ইরানের পথে হাটা শুরু করে গালফ স্টেটস্, তুর্কি, মালয়েশিয়া। আর এখনতো সারা বিশ্বেই “হালাল”-এর জয়জয়কার। ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। হালাল ব্র্যান্ড না হয় পাওয়া গেল, কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ইসলামি সংস্থা যারা হালাল সার্টিফিকেট দেবে। প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং তার আশীর্বাদপুষ্ট সংস্থার তত্ত্বাবধানে তৈরি হতে লাগলো বিভিন্ন প্রতিষ্টান। শুরু হলো ধুন্ধুমার ব্যবসা…
হঠাৎ করেই ২০০৫ সালে গালফ স্টেটসগুলি অভিযোগ তুললো হালাল সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো মুসলমানদের নিয়ন্ত্রনে নাই। এবং এতে করে ” ইসলামিক স্ট্যান্ডার্ড” অক্ষুণ্ণ থাকছে না। হালাল স্ট্যান্ডার্ড হতে হবে শুধুমাত্র মুসলমানদের দ্বারা মুসলমানদের জন্য। হঠানো শুরু হলো সমস্ত অমুসলিমদের। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সাথে চুক্তি হতে লাগলো হালাল সার্টিফিকেট দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রতিটা প্যাকেট বা কার্টনের গায়ে “হালাল” ট্রেডমার্ক ব্যবহারের জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হয় কমিশন। ভেবে দেখুন কি বিপুল পরিমান অর্থ জমা হয় ওই হালাল সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থার কোষাগারে। এবং এভাবে মুসলিম কনসিউমার ব্র্যান্ডটির বার্ষিক আয় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার!!!
হালাল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ন্ত্রন এখন একটা শো অফ। “হালাল” বহু আগেই বিতর্কিত হয়ে গেছে। সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, আইসল্যান্ডে বহু আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে হালাল কষাইখানা। ড্যানিশ সরকারও নিষিদ্ধ করেছে অতি সম্প্রতি। কেননা পশুর অধিকার এবং মানবিকতা ধর্মের উর্ধে। শুকরের মাংসের প্যাকেট এবং শুকরের সসেজের উপর হালাল ট্রেডমার্ক নিয়েও কম জলঘোলা হয় নি। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে কমিশনপ্রাপ্ত অর্থ?
অস্ট্রেলিয়ান এবং ফ্রেঞ্চ দুটি সংস্থা এ নিয়ে জরিপ চালায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হালাল সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থা এ বিষয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ দেখায়। যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি অনেক সংস্থার মত। কোন কোন সংস্থা বলেছে তারা এই কমিশনের অর্থ মসজিদ এবং ইসলামিক স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করে।
ফ্রেঞ্চ এনথ্রোপলজিস্ট ফ্লোরেন্স বারজিউয়া ব্ল্যাকলা “হালাল” নিয়ে ২০ বছরের অধিক গবেষণা করেন। সালাফি মতবাদ এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সংগঠনের কাছে কমিশনের বিপুল অর্থ সম্পৃক্ততার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি তার বই “The Halal Market or The Invention of a Tradition” এ। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ন্যাশন এর প্রতিষ্ঠাতা পাওলিন হ্যানসন সরাসরি আঙ্গুল তুলেছেন সন্ত্রাসী খাতে এই কমিশনে অর্থ ব্যয়ে। যদিও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এ অর্থ ব্যয় হচ্ছেনা এমনটাই নিশ্চিত করেছে বেশ কিছু সংস্থা।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, “হালাল”-এর এতো টাকা যাচ্ছে কোথায়?? তাই হালাল খাদ্য এশং হালাল ইকোনমি বর্জন না করলে আমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন
#Halal_Imperialism #Halal_Monopoly #Boycott_Halal
C@ Joydeep Banerjee