আরব-সাম্রাজ্যবাদ

আরব সাম্রাজ্যবাদ: ভারতের কাশ্মীর, ইসরাইল ফিলিস্তিন ছাড়লে যারা মনে করে সমস্যা মিটে যাবে, তারা আরব সাম্রাজ্যবাদ কি জানে না। আর নয় ভণ্ডামি করছে।

আরব সাম্রাজ্যবাদ: ভারতের কাশ্মীর , ইসরাইল ফিলিস্তিন ছাড়লে যারা মনে করে সমস্যা মিটে যাবে, তার আরব সাম্রাজ্যবাদ কি জানে না। আর নয় ভণ্ডামি করছে। আর নয় ভণ্ডামি করছে।কাস্মিরের বর্তমান উত্তেজনা নিয়ে নানা মুণির নানা মত।

ফেইসবুকের নোয়াম চমেস্কি-দেরিদারদের শিষ্যদের প্রেসক্রিপশন মতে সাম্রাজ্যবাদ ভারত আর মার্কিনদের বিনাশই কেবল কাস্মির সমস্যা সমাধান করতে পারে। একদল মডারেট মুসলমানদের দাবী মুসলমানদের উপর অত্যাচার বন্ধ করলেই সব অশান্তি বন্ধ হবে।

যদি তর্কের খাতিরে মনে করি কাস্মিরকে ভারত ছেড়ে দিলো আর ইজরাইল রাষ্ট্র বাতিল করে ইহুদীরা ইউরোপে বিভিন্ন দেশে আগের  নীতি তুলে নিয়ে নিজ দেশে মনোযোগ দিলো- তাহলে কি প্যালেস্টাইন ও উপমহাদেশের সমস্যা চিরতরে মিটে যাবে?

মনে রাখতে হবে চাঁদের মাটিতে মানুষের পায়ের ছাপ পড়লেও ভারতে আজো হনুমানের পুজা হয়! এখনো সেখানে গরুর পুজা হয়! এখনো মানুষ বিশ্বাসের কারণে গরুর মুত আর উটের মুত খায়। মিডলইস্টে উটের মুত প্যাকেটজাত করে বিক্রি হয়। এটাই ধর্ম বিশ্বাস। এটাই মানবজাতির আত্মঘাতি বিশ্বাস। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার ধর্ম আছে। 

কুসংস্কার আর বিজ্ঞান বিরোধীতার কারণ হিসেবে এই ধর্মগুলো কাজ করলেও একটি মাত্র ধর্ম ভৌগলিক রাজনীতি ও ঘৃণাবাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে বড় রকমের দ্বন্দ্ব অশান্তি বিরাজ করে রেখেছে। ইসলামের হাজারটা কুসংস্কার আর বিজ্ঞান বিরোধীতা যা করতে পারেনি সেটাই করতে পেরেছে তার ভারত প্যালেস্টাই নিয়ে সরাসরি কথা বলায়। 

পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারীরা বিশ্বাস করে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানদের যুদ্ধ হবে এবং তাতে মুসলমানরা জিতবে। কারণ হাদিসে আছে- ‘আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দল রয়েছে, আল্লাহ তাদের উভয়কে দোযখ থেকে মুক্তি দিবেন। (১) হিন্দ (ভারত)-এর সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করনেওয়ালা দল এবং (২) ঈসা ইবনে মানইয়াম আ.-এর সঙ্গী দল।’(সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩১৭৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২৩৯৬)।

পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার ধর্মের মধ্যে আপনি আর একটি ধর্মের মধ্যে এরকম দেশের নাম ধরে সন্ত্রাস করার কথা পাবেন না। ভারতে জিহাদ ঘটবে এবং হিন্দুদের পরাজিত করে তারা জর্ডানের দিকে ধাবিত হবে যেখানে তাদের ইমাম মাহদির সঙ্গে সাক্ষত হবে।

তারপর ইমাম মাহদির সঙ্গে যোগ দিয়ে ইহুদীদের পাইকারী হারে হত্যা করে বাইতুল মোকাদ্দেশ দখল করে নেয়া হবে। হাদিসে আছে- ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মুসলমানরা ইহুদীদের সাথে ক্বিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) করে। পরে মুসলমানরা তাদেরকে কতল করবে। 

এমনকি (মুসলমানদের ধাওয়া খেয়ে) ইহূদীরা পাথর ও গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়বে। তখন পাথর বা গাছ বলবে: ‘হে মুসলীম! ওহে আল্লাহ’র বান্দা !

এই যে আমার পিছনে ইহূদী (লুকিয়ে আছে)’। তখন সে এসে তাকে কতল করবে। শুধু বাবলা গাছ স্বতন্ত্র (সে একথা বলবে না), কারণ সে ইহূদীদের গাছ’ (সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯২২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৭৫০২; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪৪৯; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৮/১১৪)।

এবার বলুন যতদিন ইসলাম থাকবে আর সেই ইসলামে গভীরভাবে অনুরক্ত মুসলিম থাকবে- তার পক্ষে কি ইহুদীদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হওয়া সম্ভব হবে? এই যে প্যালেস্টাইন কেন্দ্রিক বিভিন্ন জঙ্গি দল গজে উঠেছে তারা তো এইসব হাদিস দ্বারাই প্রভাবিত। 

এসব হাদিস তৈরি করা হয়েছিলো খলিফাদের সময় যুদ্ধে মুসলমানদের সংম্পৃক্ত করার জন্য। কিন্তু একজন ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান সেকথায় কান দিবে না। সে বিশ্বাস করে ভারতে হিন্দুদের হত্যা করে পরাজিত করে সেখানে ইসলাম বিজয় হবে। তাই কাস্মির সমস্যা এই মুহূর্তে মিটে গেলোও আপনি গ্যারান্টি দিতে পারেন না ভারত কেন্দ্রিক ইসলামিক জঙ্গিদল তখনো থাকবে না। 

আরব-সাম্রাজ্যবাদ
আরব-সাম্রাজ্যবাদ

ইজরাইল রাষ্ট্র সরে গেলোও বাইতুল মোকাদ্দেশে ইহুদী ধর্মীয় ঐতিহ্য ধ্বংস করে কথিত ইমাম মাহাদির ইসলামের পতাকা উত্তোলন থেকে মুসলিমদের বিরত রাখবে কে? ইসলাম ছাড়া স্পষ্ট করে কোন জাতি ধর্মের নাম ধরে হামলা আক্রমন করার কথা অন্য ধর্মগুলোতে নেই। 

একমাত্র ইসলামে আছে বলেই ভারতের ঠিক কতজন মুসলমান ভারতে জিহাদের অপেক্ষায় আছে বলা মুশকিল। অন্তত দেওবন্ধের হাদিসের ক্লাশগুলোতে সুনানে নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ তো পড়ানো হয়। এইসব ক্লাশে মুফতিরা ছাত্রদের বুঝান- ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ মানে হচ্ছে হিন্দুস্থান যেখানে মুসলমানরা বিজয়ী হবে হিন্দুদের পরাজিত করে…।

চমেস্কির শিষ্যদের একবার বলব ইন্টারনেট থেকে পাকিস্তানের ‘মুনির কমিশনের’ রিপোর্টটা একবার পড়ে দেখতে। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে কাদিয়ানী মুসলমানদের উপর সুন্নি মুসলমানদের ভয়াবহ জেনোসাইড চালানোর পর পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমদের কমিশনে এসে তাদের মতামত দিতে অনুরোধ করা হলে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তারা কুরআন সুন্না অনুসারে তাদের মতামত দেন। 

মাওলানা আবুল হাসনাত, সৈয়দ মোহাম্মদ আহমদ কাদরী, মাওলানা আহমদ আলী, তোফায়েল মাহমুদ, মাওলানা আবদুল হামিদের মত তখনকার বিশিষ্ট আলেমদের কাছে কমিশন প্রশ্ন করেছিলো- ‘চার কোটি ভারতীয় মুসলমানরা কি তাদের দেশের বিশ্বস্ত নাগরিক হতে পারবে? (Will it be possible for the four crore of Indian Muslims to befaithful citizens of their State?) 

উত্তরে ওলামারা বলেছিলেন,  ‘না! It is not possible that a Musalman should be a faithful citizen of a non-Muslim Government.  এটা কিছুতে সম্ভব নয় যে, মুসলমান অমুসলিম সরকারের বিশ্বস্ত নাগরিক হতে পারবে।মুনির কমিশন এরপর প্রশ্ন করেন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে ভারতের মুসলিমদের কার পক্ষ নেয়া উচিত বলে মনে করেন? (What will be the duty of Muslims in India, in case of war between India and Pakistan? )। 

ওলামাদের উত্তর ছিলো, ভারতীয় মুসলমানদের উচিত হবে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়া এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইট না করা (Their duty is obvious, namely, to side with us and not to fight against us on behalf of India.)। মুনির কমিশনের রিপোর্ট পড়ুন এখান থেকে- পাকিস্তানের আলেমরা বানিয়ে বানিয়ে যে কিছু বলেনি তার প্রমাণ তো এই লেখাতেই হাদিস থেকে দেখিয়েছি।

এবার বলুন তো ভারতের কাস্মির সমস্যা, ফিলিস্তিন ইজরাইল সমস্যার রাজনৈতিকভাব মিটে গেলেও ধর্মীয়ভাবে কিভাবে মিটানো সম্ভব? মাদ্রাসা শিক্ষা, ইসলামি শিক্ষা কেমন করে এই সমস্যাগুলোকে জিইয়ে রাখবে একবার চিন্তা করে দেখুন।