মুসলিমরা একটা নিন্ম সংস্কৃতি দ্বারা প্রচন্ডভাবে পরিচালিত যার নাম ‘ইসলামি সংস্কৃতি’।

কয়েকজনের পোস্টে দেখলাম কোলকাতার একটা দুর্গা পুজার মন্ডব থেকে নাকি সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে আজান প্রচার করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় একদল সম্প্রীতি বলে বলে ধন্য ধন্য করছে। আরেক দল পাল্টা সম্প্রীতির দাবী করে বলছে, মসজিদ থেকে এবার উলো ধ্বনি দিয়ে সম্প্রীতি দেখানো হোক…।

ধর্মকে রেখে ধর্মীয় সম্প্রীতি যে কতটা হাস্যকর তার একটা উদাহরণ হতে পারে দুর্গা পুজার মন্ডবে আজান প্রচার। পুজার মাইক থেকে যখন আজান প্রচার হচ্ছিল সেখানে কি বলা হচ্ছিল? ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে  ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই’। এটা তো সংঘাতের কথা বলছে। হিন্দুরা দুর্গাকে ভগবান জেনেই তার শক্তিকে পুজা করছে। একই অনুষ্ঠানে আবার বাজানো হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই’- দারুণ মজার না! আচ্ছা সম্প্রীতির কথাই যদি এত ভাবেন তাহলে মানুষগুলোকে ধর্ম ছাড়া সম্প্রীতিতে আনার কথা ভাবেব না কেন?

তবু সত্যি কথা বলতে কি, মন্দিরে তারাবীর নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা, মঠে ইফতার করানো, গুরুদুয়ারে নামাজের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ঘটনাগুলো এই সময়কালেই ঘটেছে যার এক তরফা সম্প্রীতি ভোগ করেছে ইসলাম ও মুসলমানরা। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার পর সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আজান প্রচার, প্রধানমন্ত্রীর হিজাব পরিধান করে মুসলিমদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশের বিপরীতে শ্রীলংকায় ইস্টার সানডেতে ঘটা জঙ্গি হামলায় শতাধিক মানুষ মারা গেলেও মুসলিম বিশ্বে কোন আচড়ই লাগেনি। তারা কেউ কি খ্রিস্টানদের পাশে থাকার কোন প্রতীকী কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলো? মুসলমানদের পাল্টা ফিরিয়ে দেয়ার কোন নজির নেই কেন?

ঈদ আসলে তথাকথিত অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো থেকে মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। দলাই লামার মত ধর্মীয় নেতারা, পোপ ঈদ পুজাতে শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব কখনই অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানান না। মুসলিম ধর্মীয় গুরুদের কথা বাদই দিলাম। যদি আমরা ধর্মগুলোর দিকে তাকাই, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী- এগুলো কোন উদার ধর্মমতই না। ইসলামে যতখানি বিদ্বেষ আছে কম বেশি এই ধর্মগুলোতেও আছে। কিন্তু মানুষ তো পকেটে ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ঘুরে না। ধর্মে কত রকমের অন্ধ বিদ্বেষ, ঘৃণা প্রকাশ করে রেখেছে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি। বেশির ভাগ মানুষ এসব অনুসরণ করলে পৃথিবী এতেদিনে টিকে থাকত না। মুশকিল হচ্ছে কেবল মুসলমানদের নিয়ে। ‘ইসলামি সংস্কৃতি’ নামে এক ধরণের বিদ্বেষ বিরোধীতার দেয়াল চর্চা করে তারা। অনেক মুসলিম প্রধান দেশের সরকার প্রধানরা ভোট হারানোর ভয়ে অমুসলিমদের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানান না। পাকিস্তানের কোন সরকার প্রধান দিয়ালীতে শুভেচ্ছা জানান না। বাংলাদেশের সরকার প্রধান শুভেচ্ছা জানালেও জনগণ এটাকে ভালো চোখে নেয় না। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এরকম শ্লোগান তাদের কাছে ইসলাম বিরোধী। এবার মেয়র আতিকুল ঢোল বাজিয়ে, গান গেয়ে পুজা মন্ডব পরিদর্শন করেছেন বলে সেই নিউজের নিচে হাজার হাজার মানুষের কমেন্টে জানা গেলো, মেয়র আতিকুল শিরক করেছেন। আল্লাহ তাকে হেদায়াত করুন। হিন্দুদের উৎসব করতে আমরা বাধা দিবো না কিন্তু তাদের অনুষ্ঠানে যাওয়া তো দূরের কথা চোখের সামনে পড়ে গেলেও চোখ সরিয়ে নিতে হবে….। এরকম শত শত কমেন্ট। ভিপি নুরের দুর্গা পুজার শুভেচ্ছা পোস্টেও একই রকম বিশ্রী পরিস্থিতি। বেচারা ক্রিকেটার লিটন দাস তো মানুষের ঘৃণা বিদ্বেষের জ্বালায় টিকতে না পেরে তার দুর্গা পুজার পোস্ট ডিলিটই করেছিলেন। যদি খেয়াল করে দেখেন, আমাদের দেশের তারকা সেলিব্রেটিরা নিজেরা কখনো দুর্গা পুজা, ক্রিসমাসে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন না। এর দুটো কারণ। জনপ্রিয়তা হারানো ভয় করেন অথবা তারা নিজেরাই এসবকে শিরক মনে করেন। অথচ তথাকথিত অমুসলিম তারকারা ঈদে মুসলিমদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বেতিক্রম হিসেবে যখন ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফ, জহির খান ক্রিসমাসে উৎযাপনের ছবি দিয়ে পোস্ট করছেন তখন বাংলাদেশী আর ভারতীয় মুসলমানরা সেখানে গিয়ে বিশ্রী সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্ম ছড়িয়ে এসেছে। এসবের কারণ মুসলিমরা একটা নিন্ম সংস্কৃতি দ্বারা প্রচন্ডভাবে পরিচালিত যার নাম ‘ইসলামি সংস্কৃতি’। মুসলিম সমাজ যে ন্যুনতম অগ্রগতি হয়নি, প্রগতিশীলতা যে সেখানে তিমিরে তা স্পষ্ট অন্য ধর্মের মানুষ ও তাদের কালচারের বিষয়ে তাদের বিরূপতা দেখে।