৩৭০ উঠে যাবার পর কাশ্মিরী হিন্দু পন্ডিত সম্প্রদায় ফের কাশ্মিরের ফিরে যেতে পারে।।

অভিযোগ উঠেছে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মিরের চরিত্র বদলানোর উদ্দেশ্যেই ৩৭০ বিলোপ করা হয়েছে। স্পষ্ট করেই বিরোধীরা বলেছেন, ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ- যেখানে মুসলিম সংস্কৃতি ও ইসলামিক চেহারা ৩৭০ দ্বারা সংরক্ষিত ছিলো এখন সেটা উঠে যাবার ফলে তা ব্যাহত হবে। কারা এমন আকুতি বা সর্বনাশের হাহাকার নিয়ে কথা বলছেন? তারাই বলছেন যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী কারণ ট্রাম্প অভিবাসন বিরোধী এবং হোয়াইট সুপ্রিমিটির পক্ষে পরোক্ষভাবে কথা বলেন। কাশ্মিরকে ‘মুসলিম’ চরিত্র ধরে রাখতে মরিয়া তারাই যারা ইউরোপের ডানপন্থিদের বিরোধী যে ডানপন্থিরা মনে করে বাইরে থেকে আসা লোকজন সাদা ইউরোপীয়ানদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে এবং এই ননহোয়াইট অভিবাসীরা এসে ক্রমশ সাদাদের সংখ্যালঘু করে ফেলার তালে আছে। আমাদের মানবতাবাদীদের কাছে এগুলো হচ্ছে বর্ণবাদ ইউরোপীয়ান উগ্র ডানপন্থা। কিন্তু কাশ্মিরের ‘মুসলিম চরিত্র’ অটুট রাখা, সেখানকার ইসলামিজম ধরে রাখার জন্য কাশ্মিরে ভারতের অন্য প্রদেশের কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়া, কাশ্মিরে ভারতীয় সংবিধান মান্য না করা, কাশ্মির থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ করা সবই ছিলো স্বাভাবিক?

৩৭০ উঠে যাবার পর কাশ্মিরী হিন্দু পন্ডিত সম্প্রদায় ফের কাশ্মিরের ফিরে যেতে পারে। একইভাবে ভারতের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠি ব্যবসা বাণিজ্যসহ যে  কোন কারণে কাশ্মিরে স্থায়ী হতে পারে। এতে যদি কাশ্মিরে মুসলিম জনসংখ্যা থেকে অন্যরা মিলিতভাবে সংখ্যায় বেশি হয়ে পড়ে তো তাতে কি সমস্যা? আপনারা না ইউরোপের ডানপন্থিদের এসব কারণেই ফ্যাসিস্ট বলেন? কাশ্মিরের মুসলিম চরিত্র ও ইসলামিক জেল্লা বিঘ্ন ঘটা ছাড়া ৩৭০ উঠে যাওয়ায় কাশ্মিরের বড় কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে তা কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিস্কার করে মানবতাবাদীরা বলতে পারেনি। তবে ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিকভাবে কাশ্মীরের যে অনন্য চরিত্র, কলমের এক খোঁচায় বিজেপি সেটাই বরবাদ করে দিতে চাইছে’।

কাশ্মিরে এখন শিল্পায়নের দুয়ার খুলে যাওয়া, বহু জাতি মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া, মিশ্র সংস্কৃতি সংস্পর্শে এসে কাশ্মিরী মানুষের মধ্যে আন্তর্জাতিকবাদ গড়ে উঠা যে তাদের ইসলামিজ জিহাদী জোশ থেকে দূরে রাখতে পারে, কর্ম সংস্থান ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা তাদের মানসিকভাবে পাল্টে দিতে পারে- সে সম্ভাবনাগুলোকে বাতিল করে সকলের কাছে প্রধান ইস্যু- কাশ্মির ভারতের ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের’ আসন হারাতে পারে!

ইসলামিক লোকজনের কাশ্মিরকে ‘দারুল ইসলাম’ গড়ার স্বপ্ন বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই। আমাদের আলোচনা সেসব লোকজন নিয়ে যারা ভারতে হিন্দুত্ব চেহারা নিয়ে শংকিত। হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের মুসলিম শাসনের ইতিহাস পারলে মুছে ফেলে। মুঘলদের সময়কার নামধাম পাল্টে হিন্দুত্ববাদী চেহারা দেয়ার প্রবণতা আমরা আগেও দেখেছি। সেসব নিয়ে তীব্র সমালোচনাকারীদের কেন এখন কাশ্মিরের ‘মুসলিম চেহারা’ বহুজাতিত্ববাদের ফলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে হতাশ? সমগ্র ভারত সেক্যুলার থাকবে কেবল মুসলিম আর ইসলামিক কালচারওয়ালা প্রদেশগুলো ধর্মীয় চেহারা নিয়ে অটুট থাকবে?

আন্তর্জাতিক পিউ রিসার্চ সেন্টার যখন তাদের গবেষণায় দেখায় মুসলিমদের দ্রুত জন্মহার ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ করে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে- তখন যদি অমুসলিম ইউরোপীয়ানরা তাদের সংস্কৃতি ও দেশীয় চরিত্র ধরে রাখতে মুসলিমদের তাদের দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামে সেটাকে কি ধরণের আন্দোলন বলা হবে? এখন যারা কাশ্মিরের ৩৭০ ধারা উচ্ছেদের বিরোধী তারা কি ইউরোপে অনুরূপ ৩৭০ ধারার মত কোন আইন জারি হলে স্বাগত জানাবেন? বার্মিজরা যদি মনে করে মুসলিমরা সেখানকার বার্মিজ চরিত্র ও সংস্কৃতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং সংখ্যায় তাদের পরাজিত করে ফেলছে তাহলে তাদেরও ৩৭০-এর মত আইন করা উচিত? শ্রীলংকার সিংহলিজদের কি উচিত হবে তামিলরা সংস্কৃতিগতভাবে ও জাতিগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিজ চরিত্র যাতে নষ্ট করতে না পারে তার জন্য ৩৭০-এর মত রক্ষাকবচ জারি করা? শ্রীলংকান সমাজে ইসলাম হচ্ছে গির্জায় হামলা চালিয়ে আড়াইশো মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করা। লংকানদের কি উচিত হবে ৩৭০ অনুরূপ আইন জারি করে ইসলামের জিহাদ হতে নিজেদের রক্ষা করা?

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন কোন দেশ নেই যাদের ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ বলা হয় না। এমন না বাইরের লোক তাদেরকে মুসলিম দেশ বলছে, ৫৭টা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যেখানে অমুসলিম নাগরিক আছে, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি বিদ্যামান হাজার বছর ধরে- তবু তারা মুসলিম পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করেছেন ওআইসি। এসব স্বঘোষিত ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ ভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতিদের সংস্কৃতিগতভাবে দমন ও বিলুপ্ত করার কাজে রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগায়। এসব দেশের তথাকথিত প্রগতিশীল মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের নির্বাচনে জিতে আসায় শংকিত হযে পড়েন যেখানে নিজ দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম! বিসমিল্লাহ না বলে যাদের সংবিধান পড়া যায় না তারা বার্মায় বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের কারণে চিন্তিত!

…বাপরে বাপ, এটা মনে হয় লুঙ্গি খোলার মৌসুম! কাশ্মির ইস্যুতে ফের লুঙ্গি খুলে গেছে সকলের। মূল কথা হচ্ছে কাম্মির ‘মুসলিম প্রদেশ’ হিসেবে বজায় থাকবে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্থান, সৌদি আরব… সবাই ‘মুসলিম দেশ’ হয়ে বেঁচে বর্তে থাকুক- তাতে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই- খালি ট্রাম্প সাদাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বললেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে! যারা বিজেপির ‘হিন্দু ভারত’ গড়ার আশংকা প্রকাশ করে বিদ্রুপ করছেন তারাই আবার কাশ্মিরের মুসলিম চরিত্র এবার ভেস্তে যাবে ভেবে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন- কিভাবে এরকম দুমুখিতা সম্ভব কে জানে!