স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, সাধুতা, পবিত্রতা এবং দয়া দাক্ষিণ্য পৃথিবীর কোন ধর্মের নিজস্ব সম্পদ নয়, তা সর্বদেশের, সর্বধর্মের ঐশ্বর্য।

কৃষিবিদ রায় |
||আগামীকাল ‘জাতীয় যুবদিবস’ – স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন||
স্বামীজী একবার নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন : অামি ‘Condensed India’ – ভারতবর্ষের ঘনীভূত রূপই অামিই। ভারতবর্ষকে ভালবেসে স্বামীজী হয়ে উঠেছিলেন স্বয়ং ভারতবর্ষ। নিবেদিতাও সেই কথাই বলেছেন : ‘ভারতবর্ষ ছিল স্বামীজীর গভীরতম অাবেগের কেন্দ্র … 

ভারতবর্ষ নিত্যস্পন্দিত হত তাঁর বুকের মধ্যে, প্রতিধ্বনিত হত তাঁর ধমনীতে, ভারতবর্ষ ছিল তাঁর দিবাস্বপ্ন, ভারতবর্ষ ছিল তাঁর নিশীথের দুঃস্বপ্ন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন ভারতবর্ষ – রক্তমাংসে গড়া ভারত-প্রতিমা। … ভারতের অাধ্যাত্মিকতা, তার পবিত্রতা, তার প্রজ্ঞা, তার শক্তি, তার স্বপ্ন এবং তার ভবিষ্যৎ – সবকিছুর তিনি ছিলেন প্রতীকপুরুষ।’

মিস্ ম্যাকলাউড একবার স্বামীজীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন : ‘স্বামীজী, অামি কিভাবে অাপনাকে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করতে পারি?’ স্বামীজী উত্তরে বলেছিলেন : ‘ভারতবর্ষকে ভালবেসে।’
স্বামীজীর জীবনী পড়লে সেইজন্য মনে হয় ভারতবর্ষের গর্বে এত গর্বিত বুঝি অার কেউ হননি, ভারতবর্ষের দুঃখে এত বেদনা অার কেউ বুঝি পাননি, অাবার ভারতবাসীর অক্ষমতায় এত নির্মম কশাঘাতও বুঝি অার কেউ করেননি। কারণ, ভারতবর্ষকে এত অাপনার করে অার কেউ চেনেননি। মা যেমন সন্তানের সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ, দুর্বলতা, প্রয়োজন, বিপদ এবং সম্ভাবনার কথা সন্তানের নিজের চেয়েও বেশী করে জানেন, ঠিক তেমনি ভাবে স্বামীজী ভারতবর্ষকে চিনেছিলেন। তাই, অতীত বর্তসান ও ভবিষ্যৎ ভারতের এক একটা পরিপূর্ণ ছবি তাঁর চিন্তায় রূপ পেয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোমাঁ রোলাঁকে বলেছিলেন :” যদি ভারতবর্ষকে জানতে চাও তো বিবেকানন্দ পড়।”
নেতাজী বলেছেন— ” চরিত্র গঠনের জন্য ব্যক্তিগত জীবনে আমি রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য অপেক্ষা উৎকৃষ্ট সাহিত্য কল্পনা করিতে পারিনা। ”
কাজী নজরুল বলেছেন— ”ভারত অরিন্দম।”
গান্ধীজী বলেছেন— ”স্বামী বিবেকানন্দের রচনাবলী পড়ে মাতৃভূমির প্রতি আমার প্রেম সহস্রগুণে বেড়ে গিয়েছিল।”
ঋষি অরবিন্দ বলেছেন— ” বিবেকানন্দই আমাদের জাতীয় জীবন গঠনকর্তা। তিনিই ইহার প্রধান নেতা।”
জওহরলাল নেহেরু বলেছেন— ” বিবেকানন্দ ছিলেন ভারতের আধুনিক জাতীয় আন্দোলনের একজন স্রষ্টা। ”
সি.রাজগোপালচারী বলেছেন— ” বিবেকানন্দই ভারতীয় স্বাধীনতার জনক, আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার তিনি পিতা। ”
লিও টলস্টয় বলেছেন— ” ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ”
রোমারোলা বলেছেন— ” বিবেকানন্দের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর রাজকীয়তা, আজন্ম সম্রাট তিনি। কি ভারতবর্ষে, কি আমেরিকায়, কোথাও কেউ তাঁর পাশে আসেননি, তাঁর সেই রাজকীয়তার প্রতি যিনি সম্ভ্রম প্রদর্শন করেননি। ”
বারাক ওবামা, ৮ নভেম্বর, ২০১০, নতুন দিল্লীঃ
”রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী এবং স্বামী বিবেকানন্দ– এঁরা শুধু ভারতবর্ষের নন, তাঁরা সমগ্র পৃথিবীর। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, সাধুতা, পবিত্রতা এবং দয়া দাক্ষিণ্য পৃথিবীর কোন ধর্মের নিজস্ব সম্পদ নয়, তা সর্বদেশের, সর্বধর্মের ঐশ্বর্য। স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের কাছে এক আলোকদিশারী। নতুন আমেরিকা গঠনে তিনি আমার প্রেরণাদাতা।”
ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার স্থপতি ও মহান নেতা, রাষ্ট্রপতি সুকার্নো  Vivekananda —The Wonderful Man বইটিতে, স্বামী বিবেকানন্দের কাছে ঋণ স্বীকার করে লিখেছেন-  ”স্বামীজী স্বদেশের সেবা এবং জগতের কল্যাণের জন্য সর্বস্ব সমর্পণ করতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।’ স্বামীজীর কথার প্রতিধ্বনি করে তিনি তাঁর দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন,’আমরা এতকাল ধরে খুব কেঁদেছি। হে আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আর শুধু শুধু কেঁদো না, এখন নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াও, সত্যিকারের মানুষ হও।”