মহাবিশ্ব সৃষ্টি: সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে হিন্দু ধর্ম কি বলছে? বিগ ব্যাং বনাম হিন্দু ধর্মের মতবাদ কি?
বিজ্ঞান আর ধর্ম ‘ – এই দুই উপাদান মিলিয়েই আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু প্রায়ই নান বিষয়ে ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে লেগে যায় ঠোকাঠুকি। বিজ্ঞান বিশ্বাস করতে গেলে ধর্ম থাকে না, আবার ধর্মীয় মতবাদ মানতে চাইলে হতে হয় পশ্চাদগামী।
মহাবিশ্বে সৃষ্টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতবাদ ’বিগ ব্যাং’, এটা মানতে চাইলে বাদ সাঁধে ধর্মীয় মতবাদ। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলে এককথা আর আর বিভিন্ন ধর্মে আছে নানা কথা।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতবাদ আর ধমীয় মতবাদগুলোর প্রতি চোখ রাখা যাক –
বিগব্যাং
মহাবিশ্ব সৃষ্টির আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলো বিগ ব্যাং । এই তত্ত্ব অনুসারে ১৫০০ কোটি বৎসর আগের কোন এক সময় একটি বিশাল বস্তুপিণ্ডের বিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটর (Georges Lemaitre) এই তত্ত্ব প্রথম প্রকাশ করেন।
তাঁর মতে সৃষ্টির আদিতে মহাবিশ্বের সকল বস্তু আন্তঃআকর্ষণে পুঞ্জীভূত হয় এবং একটি বৃহৎ পরমাণুতে পরিণত হয়। এই পরমাণুটি পরে বিস্ফোরিত হয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। এই মতবাদকে সমর্থন ও ব্যাখ্যা করেন এডুইন হাবল (Edwin Hubble)।
হাবল পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রমাণ পান যে— মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে ক্রমান্বয়ে নির্দিষ্ট গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁর মতে, আদিতে মহাবিস্ফোরণের ফলে গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলোর দূরে সরে যাওয়ার আচরণ বিগ-ব্যাংকেই সমর্থন করে।
এই ভাবে বিস্ফোরণের ফলে যে বিকিরণের (radiation) সৃষ্টি হওয়ার কথা, তার অস্তিত্ব প্রথম দিকে প্রমাণ করা যায় নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। ১৯৬৪ সালে Arno Penzias এবং Robert Wilson নামক দুজন বিজ্ঞানী বিকিরণের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। ফলে বিগব্যাং-এর ধারণা আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মহাবিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এই তত্ত্বকেই সত্য বলে বিবেচনা করা হয়।
বিগব্যাং মতবাদ অনুসারে মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য
আদিতে মহাকাশের বস্তুপুঞ্জ বিক্ষিপ্তাকারে ছড়ানো ছিল। অবশ্য এই আদি বস্তুপুঞ্জ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলোর বিন্যাস কিরূপ ছিল, তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন নি। বিগব্যাং তত্ত্ব অনুসারে— প্রায় ১৫০০ কোটি বৎসর আগে এই সকল বিক্ষিপ্ত বস্তুগুলো আন্ত-আকর্ষণের কারণে পরস্পরের কাছে আসতে থাকে এবং ধীরে ধীরে একটি ডিমের আকার ধারণ করে।
বিজ্ঞানীরা একে নামকরণ করেছেন মহাপরমাণু (Supper Atom)। উল্লেখ্য এই সময় কোন স্থান ও কালের অস্তিত্ব ছিল না। অসীম ঘনত্বের এই মহাপরমাণুর ভিতরে বস্তুপুঞ্জের ঘন সন্নিবেশের ফলে এর তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছিল- যে কোন পরিমাপ স্কেলের বিচারে ১০১৮ ডিগ্রী। বিগ ব্যাং-এর পরের ১ সেকেন্ডে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল, তা কালানুক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো-
১ থেকে ১০-৪৩ সেকেণ্ড : কোয়ান্টাম সূত্রানুসারে বিগব্যাং-এর ১০-৪৩ সেকেন্ডের [এই সময়কে প্লাঙ্ক-অন্তঃযুগ (Planck epoch) বলা হয়] ভিতর চারটি প্রাকৃতিক বলের (force) সমন্বয় ঘটেছিল। এই বলগুলো হলো- সবল নিউক্লীয় বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল, বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল ও মহাকর্ষীয় বল। সবগুলো মিলে একটি অতি বৃহৎ বলের (super force) সৃষ্টি হয়েছিল।
প্লাঙ্ক-অন্তঃযুগ থেকে ১০-৩৫ সেকেণ্ড : প্লাঙ্কের সময় অতিবাহিত হওয়ার কিছু পরে মহাকর্ষীয় বল, অন্য তিনটি বল থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। ফলে মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তির কারণে, মহাপিণ্ডটি সর্বোচ্চ সংকোচন মাত্রায় পৌঁছেছিল। তখন ঘনত্বের বিচারে মহাপরমাণুর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে বস্তু ছিল ৫১০+৯৩ গ্রাম। এই সময় এর তাপমাত্রা ছিল ১০৩২ কেলভিন।
১০-৩৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে এই তাপমাত্রা এসে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১০২৭ কেলভিন। এই সময় কোয়ার্ক ও লেপ্টন কণার সৃষ্টি হয়েছিল। একই সাথে তৈরি হয়েছিল— কিছু বস্তু এবং প্রতিবস্তুসমূহ (antiparticles)। পরে বস্তু ও তার প্রতিবস্তুর মধ্যে সংঘর্ষ হলে উভয় ধরনের বস্তুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে শুধু কোয়ার্ক ও লেপ্টন রয়ে যায়।
১০-৩৫ থেকে ১০-১০ সেকেণ্ড : পরবর্তী ১০-১০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা নেমে আসে ১০১৬ কেলভিনে। এই তাপমাত্রা পরে আরও কমে গেলে দুর্বল নিউক্লীয় বল ও বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল পৃথক হয়ে যায়। এই সময় কোয়ার্কসমূহ সবল বলের প্রভাবে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করে ফোটন, প্রোটন এবং নিউট্রন।
১ সেকেন্ড পরে : ১ সেকেন্ড পরে তাপমাত্রা নেমে আসে ১০১০ কেলভিনে। কিন্তু এই তাপমাত্রায় পরমাণু সৃষ্টি অসম্ভব ছিল।
ধারণা করা হয় বিগব্যাং-এর ৩ সেকেণ্ড থেকে ১০০,০০০ বৎসরের মধ্যে সৃষ্ট কণাগুলো শীতল হয়ে উঠে। এই অবস্থায় বস্তুপুঞ্জে বিরাজমান ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন মিলিত হয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজন ও হিলিয়াম পরমাণু। এ ছাড়া এই দুটি পদার্থের সাথে ছিল প্রচুর ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগ ব্যাং-এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল।
এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে- কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে বিপুল পরিমাণ বস্তুপুঞ্জ পৃথক পৃথক দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই পৃথক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পত্তন ঘটেছিল গ্যালাক্সি’র (Galaxy)। আমাদের সৌরজগতও এরূপ একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অবস্থান করছে। এই গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ (Milky Way)।
হিন্দু ধর্মমতে সৃষ্টি তত্ত্ব
হিন্দু ধর্মের যে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা, তার নাম হলো ব্রহ্ম। ঈশ উপনিষদের ব্রহ্মের প্রকৃতি হিসাবে বলা হয়েছে-
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাত্ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে
মহাবিশ্ব সৃষ্টি
সরলার্থ : উহা (পরব্রহ্ম) পূর্ণ, ইহা (নামরূপে স্থিত ব্রহ্ম) পূর্ণ; এই সকল সূক্ষ্ম ও স্থূল পদার্থ পরিপূর্ণ ব্রহ্ম হইতে উদগত বা অভিব্যক্ত হইয়াছে। আর সেই পূর্ণস্বভাব ব্রহ্ম হইতে পূর্ণত্ব গ্রহণ করিলেও পূর্ণই অর্থাৎ পরব্রহ্মই অবশিষ্ট থাকেন। ত্রিবিধ বিঘ্নের (আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক) শান্তি হোক। ঈশ উপনিষদ। শান্তিপাঠ। [অতুলচন্দ্র সেন, সীতানাথ তত্ত্বভূষণ, মহেশচন্দ্র কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত- উপনিষদের অখণ্ড সংস্করণ থেকে উদ্ধৃত করা হলো।]
উপনিষদে বর্ণিত ব্রহ্ম অদ্বিতীয় সত্তা। ইনি সূক্ষ্ম ও স্থূল সকল কিছূরই উত্স। এই উত্স থেকে জগতের বিভিন্ন উপকরণের সৃষ্টি হয়। এর সমর্থন পাওয়া যায় অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে। যেমন- মার্কেণ্ডয় পুরাণে আছে-
যা অব্যক্ত এবং ঋষিরা যাকে প্রকৃতি বলে থাকেন, যা ক্ষয় বা জীর্ণ হয় না, রূপ রস গন্ধ শব্দ ও স্পর্শহীন, যার আদি অন্ত নেই, যেখান থেকে জগতের উদ্ভব হয়েছে, যা চিরকাল আছে এবং যার বিনাশ নেই, যার স্বরূপ জানা যায় না, সেই ব্রহ্ম সবার আগে বিরাজমান থাকেন। মার্কেণ্ডয় পুরাণ/শ্রীসুবোধকুমার চক্রবর্তৗ।
উপনিষদ ও মার্কেণ্ডয় পুরাণ অনুসারে- দেখা যাচ্ছে, সৃষ্টির আদিতে পরমব্রহ্ম বিরাজ করেন। এবং সেই পরমব্রহ্ম থেকেই জগতের সব কিছু সৃষ্টি হয়। এই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার স্তরগুলো সম্পর্কে মার্কেণ্ডয় পুরাণে যা বিবৃত হয়েছে, তা হলো-
সত্ত্ব (প্রকৃতি) রজ (যার প্রভাবে অহংকারসহ অন্যান্য মন্দগুণের জন্ম হয়) ও তম (অন্ধকার) এই তিন গুণ তাঁর মধ্যে পরস্পরের অনুকূলে ও অব্যাঘাতে অধিষ্ঠিত আছে। সৃষ্টির সময়ে তিনি (ব্রহ্ম) এই গুণের সাহায্যে সৃষ্টিক্রিয়ায় প্রবৃত্ত হলে প্রধান তত্ত্ব প্রাদুর্ভূত হয়ে মহত্তত্ত্বকে (মহৎ নামক তত্ত্ব) আবৃত করে।
এই মহত্তত্ত্ব তিনগুণের ভেদে তিন প্রকার। এর থেকে তিন প্রকার ত্রিবিধ অহঙ্কার প্রাদুর্ভূত হয়। এই অহঙ্কারও মহত্তত্ত্বে আবৃত ও তার প্রভাবে বিকৃত হয়ে শব্দতন্মাত্রের সৃষ্টি করে। তা থেকেই শব্দ লক্ষণ আকাশের জন্ম। অহঙ্কার শব্দমাত্র আকাশকে আবৃত করে এবং তাতেই স্পর্শতন্মাত্রের জন্ম। এতে বলবান বায়ু প্রাদুর্ভূত হয়। স্পর্শই বায়ুর গুণ।
শব্দমাত্র আকাশ যখন স্পর্শমাত্রকে আবৃত করে, তখন বায়ু বিকৃত হয়ে রূপমাত্রের সৃষ্টি করে। বায়ু থেকে জ্যোতির উদ্ভব, রূপ ঐ জ্যোতির গুণ। স্পর্শমাত্র বায়ু যখন রূপমাত্রকে আবৃত করে, তখন জ্যোতি বিকৃত হয়ে রসমাত্রের সৃষ্টি করে। তাতেই রসাত্মক জলের উদ্ভব।
সেই রসাত্মক জল যখন রূপমাত্রকে আবৃত করে তখন জল বিকৃত হয়ে গন্ধমাত্রের সৃষ্টি করে। তাতেই পৃথিবীর জন্ম হয়। মার্কেণ্ডয় পুরাণ/শ্রীসুবোধকুমার চক্রবর্তৗ।
পুরাণের এই বিবৃত থেকে বুঝা যায় ব্রহ্মা প্রকৃতিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।
মহাভারতের আদিপর্বের সৃষ্টিবর্ণন অংশের- সৃষ্টি তত্ত্ব থেকে যে ধারণা পাই তা কিছুটা আধুনিক বিজ্ঞানের সমার্থক বলেই বোধ হয়। আধুনিক বিজ্ঞান বলে- আদিতে বস্তুপুঞ্জ একত্রিত হয়ে একটি পিণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল। উক্ত পিণ্ডের বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে বর্তমান মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল। তবে মহাভারতে এর সাথে ঐশ্বরিক সত্তার মহিমা যুক্ত করার কারণে- এই বর্ণনা ভিন্ন মাত্রায় রূপ পরিগ্রহ করেছে। যেমন-
প্রথমতঃ এই বিশ্বসংসার কেবল ঘোরতর অন্ধকারে আবৃত ছিল। অনন্তর সমস্ত বস্তুর বীজভূত এক অণ্ড প্রসূত হইল। ঐ অণ্ডে অনাদি, অনন্ত, অচিন্তনীয়, অনির্বচনীয়, সত্যস্বরূপ নিরাকার, নির্বিকার, জ্যোতির্ময় ব্রহ্ম প্রবিষ্ট হইলেন।
অনন্তর ঐ অণ্ডে ভগবান্ প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং জন্ম পরিগ্রহ করিলেন। তত্পরে স্থাণু, স্বায়ম্ভু মনু দশ প্রচেতা, দক্ষ, দক্ষের সপ্ত পুত্র, সপ্তর্ষি, চতুর্দশ মনু জন্মলাভ করিলেন।
মহর্ষিগণ একতানমনে যাঁর গুণকীর্তন করিয়া থাকেন, সেই অপ্রমেয় পুরুষ, দশ বিশ্বদেব, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু, যমজ অশ্বিনীকুমার, যক্ষ, সাধুগণ, পিশাচ, গুহ্যক এবং পিতৃগণ উত্পন্ন হইলেন। তত্পরে জল, পৃথিবী, বায়ু, আকাশ, দশ দিক্, সংবত্সর, ঋতু, মাস, পক্ষ, রাত্রি ও অন্যান্য বস্ত ক্রমশঃ সঞ্চাত হইল। (কালীপ্রসন্নসিংহ কর্তৃক অনূদিত সংস্করণ থেকে।)
হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে সৃষ্টি-তত্ত্বের রূপ মোটামুটি এই ভাবেই বিবৃত হয়েছে। এই সকল বর্ণনা অনুসারে যে সার কথা পাওয়া যায় তা হলো- আদিতে ব্রহ্ম নামক পরম সত্তা ছিল। উক্ত সত্তা প্রকৃতিকে একটি বিশাল অণ্ডে রূপান্তরিত করলেন। উক্ত অণ্ড থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্ব-চরাচর এবং দেবতাসহ অন্যান্য সকল প্রাণী।
মহাবিশ্ব সৃষ্টি সুত্র ধরে—
আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত এ যেন মানুষের এক অনন্ত জিজ্ঞাসা।
সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বেদ এর বিখ্যাত নাসাদিয় সুক্ত এবং হিরন্যগর্ভ সুক্ত এর কথা অনেকেই জানেন।ধর্মবিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী মহলে বহুল আলোচিত এই দুটি সুক্তের আলোকে সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
ঋগবেদ ১০/১২৯/১
“নাসাদাসিস নঃ সদাসিত্ তদানীম নাসিদ রজ ন ব্যামাপ্রো যৎ…”
“শুরুতে কোন অস্তিত্ব(সৎ) বা অনস্তিত্ব(অসৎ) ছিলনা।সেখানে ছিলনা কোন বায়ুমন্ডল”
ঋগবেদ ১০/১২৯/৩
“তম অসিৎ তমস… তপসস্তন্মহিনাজায়াতৈকম”
“চারদিক ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। সমস্ত জিনিস একত্রে পুন্জীভুত ছিল।সেখান থেকে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হল”
একইভাবে
ঋগবেদ ১০/১২১/১
“হিরন্যগর্ভ সামাভরতাগ্রে..”
“প্রথমেই হিরন্যগর্ভ সৃষ্টি হল”
ঋগবেদ ১০/১২১/৭
“আপ হ য়দ বৃহাতিরিবিশ্বমা য়ান গর্ভম…”
“সেই হিরন্যগের্ভ ছিল উত্তপ্ত তরল যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ”
একই ধরনের কথা বলছে শতপথ ব্রাক্ষ্মন ১১.১.৬.১
“হিরন্যগর্ভানি অপঃ তে সলিলা…”
“প্রথমে হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহল।সেখানে ছিল উত্তপ্ত গলিত তরল।এটি ছিল মহাশুন্যে ভাসমান।বছরের পরবছর এই অবস্থায় অতিক্রান্ত হয়।”
ঋগবেদ ১০.৭২.২
“তারপর যেখানে বিস্ফোরন ঘটল গলিত পদার্থ থেকে,বিন্দু থেকে যেন সব প্রসারিত হতে শুরু হল”
ঋগবেদ ১০.৭২.৩
“সেই বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ,নক্ষত্র তৈরী হল”
ঋগবেদ ১০.৭২.৪
“তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল”
ঋগবেদ ১০.৭২.৮-৯
“তারপর সৃষ্ট ক্ষেত্রে সাতধাপে সংকোচন-প্রসারন সম্পন্ন হল।তারপর সৃষ্টি হল ভারসাম্যের।”
এই অংশটুকু পরলেই স্পষ্ট বোঝা যায় বেদের সৃষ্টিতত্ত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।সৃষ্টিতত্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল “Lambda-CDM Concordance Model” অনুযায়ী “the evolution of the universe from a very uniform, hot, dense primordial state to its present অর্থাৎ একটি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীভূত আদি অবস্থা থেকেই বর্তমান অবস্থার উত্থান।”এছাড়া বেদ এ উল্লেখিত বিস্ফোরণ বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত বিগ ব্যাংগ তত্তের সাথে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়।বেদ এর মতে সৃষ্টির শুরুতেই ওঁম উচ্চারিত হয় আর এর প্রভাবেই হয় বিস্ফোরন ।
বেদান্ত সূত্র(4/22)
“অনাবৃতিঃ শব্দহম”
অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টির শুরু যা মাত্র দুই বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন।
বিজ্ঞানীদের দেয়া নতুন STRING THEORY অনুযায়ী প্রথমেই একটা অতি নিম্ন তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্য এর শব্দ তড়ঙ্গ তৈরী হয় যার ধাক্কায় বিস্ফোরণ শুরু হয়!
তাই বেদের সৃষ্টিতত্ত পড়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর Dr. Kevin Hurley বলেছিলেন
“How could Aryan sages have known all this 6000 years ago, when scientists have only recently discovered this using advanced equipments which didn’t exist that time!”
তথ্যসূত্র VEDA, The infallible word of GOD