যে জাতি নিজের ইতিহাস জানে না সে দুর্বল এবং অন্যের গোলাম হয়ে কালাতিপাত করে |

ইতিহাস নিয়ে গর্ব কোন জাতি করেনা? যে জাতি নিজের ইতিহাস জানে না সে দুর্বল এবং অন্যের গোলাম হয়ে কালাতিপাত করে | যা আজকের বাঙালিদের দেখলে বেশ ভালো ভাবে বোঝা যায় |

বাঙালিকে দুর্বল জাতির তকমা দেওয়া আজকের ঘটনা নয় কিন্তু | ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যাবে যে বিংশ শতকের একদম শুরুর দিকের সময় পর্যন্তও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই মিথটা প্রচলিত ছিল | মানে অনেকেই বাঙালিকে ভীতু ও দুর্বল বলতো | তখন তারা বা বাঙালি নিজেও গঙ্গারিডি,শ্রীগুপ্ত,শশাঙ্ক,ধর্মপাল,দেবপাল,ভবশঙ্করী,সীতারাম বা বারোভুঁইয়াদের জানতেন না | জানলে ঐ ট্যাগটা লাগতো না | যাইহোক এই ট্যাগটা অনেকের গায়ে লেগেছিল | গায়ে লাগার পরিণাম হলো এই যে কয়েকদশক পড়েই এই তথাকথিত দুর্বল জাতির ব্রেইণ ও মাসল্ এর সামনে সষ্টাঙ্গ প্রণাম করা শুরু করে সারা ভারত | অজস্র বাংলার বাইরের বিপ্লবীরা বাঙালির হাতে গড়া ছিলেন | জয়চন্দ্র তর্কালংকার,যোগেশ চ্যাটার্জি,শচীন্দ্রনাথ সান্যাল এঁরা না থাকলে ভগৎ সিং,চন্দ্রশেখর আজাদকে পেতাম? কিন্তু দুঃখের কথা হলো ভগৎ সিংয়ের ডিপি যে বাঙালিরা লাগান তাদের অনেকেই এঁদের নাম জানেন না | কেউ আবার আমাকে ভগং সিংয়ের বিরোধী বলে দাগাবেন না আবার | বলে রাখি যে আমি ভগৎ সিংকে ততটাই শ্রদ্ধা করি যতটা ক্ষুদিরামকে | আমি শুধু ফ্যাক্ট দেখাচ্ছি |

যদিও বাংলায় দেহ চর্চা,ধর্মচর্চা ইত্যাদির শেকড় রয়েছে হিন্দু মেলা তে(১৮৬৭) কিন্তু এটা উগ্র রূপ তখনও ধারণ করেনি | তখন পলিটিক্স মডারেট ছিল | ধীরে ধীরে এক্স্ট্রিমিজম্ এবং পরে আসে মিলিট্যান্ট ন্যাশনালিজম্  | যার তাত্বিক ভিত্তি তৈরী হয় বঙ্কিমের লেখায়,বিবেকানন্দর শিক্ষায়,ভাগবৎগীতার শ্লোকে এবং তারপরেই ‘গুলি ,বন্দুক,বোমার আগুনে’ জ্বলে উঠে সারা দেশ |

রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন যে ঐ সময় বাঙালি নিজের ইতিহাস তেমন জানত না | ঠিকই বলেছেন কারণ তাঁর বা নীহাররঞ্জনের মতো বিখ্যাত ঐতিহাসিকরা তখনও লেখা শুরু করেন নি | তিনি এটাও বলেন যে এই কারণেই আইকন হিসেবে সারা ভারত থেকে ঐতিহাসিক চরিত্রদের উপর স্টাডি করেন জাতীয়তাবাদীরা | তাদের উপর সাহিত্য,কবিতা,নাটক লিখে জাতীয়তাবোধ তৈরীর কাজ করেছেন অনেক সাহিত্যিক |
সেটা বেশ কিছুটা কার্যকরী হলেও প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল বঙ্গভঙ্গ – যা বাঙালি হিন্দুকে মুহূর্তে শেষ করে দেওয়ার এক সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল | প্রত্যাঘাত চরম আকার নিল তখন থেকেই | ঝামেলা যতক্ষণ ব্যাক্তিগত না হয় কেউ সেইভাবে জাগে না | এটা তার প্রমাণ | আজকের বাঙালিরা কোনোকিছুতেই সেইভাবে রিয়্যাক্ট করেনা এটারও মূল কারণ ইতিহাসবিস্মৃতি | প্রথমত বাংলার ইতিহাস সেইভাবে চর্চাই হয়নি যদি বাকিদের সাথে তুলনা করা হয় | তার উপর যেটুকু আছে সেটাও পড়তে দেয়া হয়না ঠিক মতো | সৌজন্যে বিশ্বমানবতাবাদী গাম্বাটের দল | যারা পরিবর্তন চান তারা এদিকটায় দেখবেন একবার | বাঙালিকে মারমুখী করতে চান অথচ সে কি তা জানাতে কোনোরকম এফর্ট দেন না | তাহলে তো হবেনা বাবা | ইন্টেলেকটুয়াল ও ফিজিক্যাল কম্বিনেশন না হলে কিছুই হবার নয় |
বাঙালি ঠিকঠাক তখনই জাগবে যখন সে নিজের ইতিহাস আরও ঠিকমতো জানবে | পাড়ার হিরোর কথা জানলে সবাই খুশি হবে কিন্তু যখন জানবে যে তার দাদু নিজেই একজন যোদ্ধা ছিলেন তখন তার উত্তেজনার স্তর আরও বেশি হবে |
সেটা তৈরী করতে হবে | কারুর উপর ভরসা নয় | নিজেদেরই করতে হবে | বাংলার ইতিহাস কে লিখবে ? কে জানাবে সবাইকে? ‘আমি লিখব ,তুমি লিখবে’ – বাংলার ইতিহাসহীনতার আক্ষেপশেষে বঙ্কিমচন্দ্র তো এই সদর্থক আহ্বান করেছিলেনই |
Rudrangshô Ray