শুনেছি সে এখন খুব সুখেই আছে। বর, ননদ, দেবরের নামাজ কালামের বালাই না থাকলেও তাকে প্রতিনিয়ত মুসলমানিত্বের প্রমাণ দিয়ে যেতে হচ্ছে।

ফেসবুকে যখন নিয়মিত ছিলাম। ভারতীয় এক বাঙালি মা আমার সাহায্য চেয়ে একদিন আমাকে ইনবক্স করে। তার মেয়ে এক মুসলমান ছেলের প্রেমে পড়েছে। আমি যেন তাকে বোঝাই, এবং এর থেকে বিরত রাখি। তখন কলকাতায় লাভ জেহাদের গল্প খুব চড়া লাইকে বিক্রি হচ্ছে। বললাম, আমি তো কোন প্রেমের বিরুদ্ধে নই। প্রেমের আবার জাত-ধর্ম কী? তা ছাড়া আপনার মেয়ের সাথে পরিচিতও নই। মা হাল ছাড়তে নারাজ। কোন এক অজানা কারণে সেই মায়ের আমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস জমে গেছে। এই বিশ্বাস ভাঙ্গা কষ্টকর। অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা আরো কষ্টকর। বললাম, মেয়ে কী আমার সাথে কথা বলতে চাইবে? বল্ল, ওর সাথে কথা হয়েছে। সেও আপনার লেখা পড়ে। আপনাকে চেনে। সে কথা বলবে।

মেয়ের সাথে ইনবক্স,

– তাকে আপনি কতটা ভালবাসেন?

– জান দিতে রাজি আছি।

– সেও কী রাজি?

– কীসে?

– জান দিতে?

– অবশ্যই।

– নিশ্চিত হয়ে বলছেন?

– বুঝলাম না!

– নিশ্চয়ই কোর্টমেরেইজ করছেন আপনারা?

– কোর্টমেরেইজ এবং মুসলমান রীতি।

– আপনি মুসলমান হচ্ছেন?

– হুম।

– মুসলমান হবার ইচ্ছা আপনার মনে আগে এসেছে নাকি এটা তার প্রস্তাব ছিল? সত্যি করে বলবেন।

অনেক্ষণ এর কোন উত্তর পাইনি। তার পর যা এলো …..

– এছাড়া কোন উপায় ছিল না। 

– শাহরুখ খান, গৌরীর বেলায় থাকলে আপনাদের বেলায় উপায় কী ছুটিতে গেছে? কোন কিছুর চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আপনি বরং নিশ্চিত হয়ে নিন সেই ছেলে আপনাকে কতটুকু ভালবাসে। সে যেভাবে আপনাকে মুসলিম হবার প্রস্তাব করেছে, আপনিও তাকে হিন্দু হবার প্রস্তাব করুন। সে রাজি হলে তখন বুঝবেন সেও আপনাকে ভালবাসে। না হলে বুঝবেন, জান তো দূরের কথা, সে আপনাকে মনটাও এখনো দিতে পারেনি।

– হিন্দু ধর্মে এমন কোন নিয়ম নেই।

– বেশ, তাহলে বলুন, বিয়ে হবে তিন নিয়মে। কোর্টমেরেইজ। হিন্দু রীতি ও মুসলমান রীতি। এর পর লাকুম দ্বীনুকুম ওয়াল ইয়া দ্বীন। যার যার চড়কায় সে সে তেল দাও।

– এভাবে কোন ধর্মই মেনে নেয় না।

-  যে ধর্মগুলো প্রেমকে মেনে নিতে পারে না, সেই ধর্মগুলোর একটিকে বেছে নিয়ে প্রেম সফল করতে হবে সে প্রেম কেমন প্রেম? যে প্রেমিক নিজের ধর্মের শেকল ভেঙ্গে জাত-ধর্মের উর্ধ্বে এসে প্রেমকে বেছে নিতে পারে না, অন্য ধর্মকে সম্মান দেখিয়ে প্রেমিকাকে মেনে নিতে পারে না সেই প্রেম কী আসলেই প্রেম না শরীরের ক্ষুধা? আপনি তো একূল-ওকুল দুই কূল হারাবেন। সংকটে না পারবেন নিজের ধর্মে-পরিবারে ফিরে আসতে। না পারবেন নতুন ধর্মের শেকল ভাঙতে। সেক্রিফাইসের পুরোটাই তখন আপনার ঘাড়ে। লোড সামলাতে পারবেন তো?

প্রশ্নগুলোর উত্তর পাইনি।

শুনেছি সে এখন খুব সুখেই আছে। বর, ননদ, দেবরের নামাজ কালামের বালাই না থাকলেও তাকে প্রতিনিয়ত মুসলমানিত্বের প্রমাণ দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার শাশুড়িটাও খুব ভালো, এক বেলার নামাজ ছুটে গেলে শাশুড়ি আদর করে বলে, মন কোথায় ছিল শুনি? কালির কাছে না দুর্গার কাছে যে নামাজ ছুটে যায়?

বরও খুব ভালো মানুষ। আম্মার সাথে তর্ক পছন্দ করে না। মুসলমান হয়েছো, ধর্মটা তো ঠিকঠাক পালন করতে হবে। বউকে হেজাব পড়িয়ে খাঁটি মুসলমান বানানোর চেষ্টা সফল হয়েছে। নিজেরটায় না হলেও নব ধার্মিক বউয়ের ফেসবুক আইডিতে সমস্যা। তাই মুসলিম ধার্মিক আদর্শ স্ত্রীর ফেসবুক আইডিটাও এখন ডিএক্টিভ।

কে জানে সুখের এমন গল্পগুলো সত্য কিনা! প্রকৃত গল্পটা তো সেই মেয়েই বলতে পারে। খুব ইচ্ছে ছিল, একদিন সেই গল্প শোনার।

MD. Amir Hossain

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=712274672301948&id=100005582653435