আপনে স্বীকার করেন আর নাই করেন, ইজরাইল ফিলিস্তিনি সংকট এখন ইহুদী মুসলমান সংকট।

মেসিকে ইজরাইলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলতে আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান জিব্রিল রাজুব। প্রথমত তিনি এমন অনুরোধ করতেই পারেন না যেহেতু ইজরাইল ফিফার সদস্য রাষ্ট্র। অলিম্পিকে যদি কাতারের কুস্তিগির ইজাইলের খেলোয়ারের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শাস্তি পান এক্ষেত্রে ফিলিস্তিন ফুটবলকেও এ ধরণের রাজনীতি প্রচারের জন্য ফিফার ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বলা হচ্ছে মেসির মত তারকা ইজরাইলের বিরুদ্ধে খেললে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইজরাইলের আগ্রাসনকেই স্বীকৃতি দেয়া হবে। আজব দাবী বটে! সৌদি আরব ইয়েমেনে যে পরিমাণ বিমান হামলা চালিয়ে মানুষ মেরেছে গত এক বছরে সে তুলনায় এরকম কোন হামলা আজতক ইজরাইল ফিলিস্তিনে চালায়নি। কেউ কি বলছে সৌদিদের বিরুদ্ধে খেলবে না? আবদুর নূর তুষার দেখলাম মেসিকে নিয়ে ঘৃণা ছড়াচ্ছে প্রসঙ্গ ইজরাইলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ। এই তুষাররা কি কখনো পৃথিবীর জঘন্নতম গণহত্যা চালানো পাকিস্তানীদের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে রাজনীতি টেনেছে? আজ পর্যন্ত গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারীভাবে ক্ষমা চায়নি তবু কি তাদের সঙ্গে আমাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে? ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইজরাইলের আগ্রাসনের কারণে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ইজরাইলের সহায়তা এবং স্বীকৃতিকে গ্রহণ করতে অপারগতা জানালেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা ও ধর্ষণ চালানো পাকিস্তানের স্বীকৃতি এবং সেদেশে সরকারী সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৪ সালে! এসব আর কিছুই না, অতি সরল আর তরল ‘মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই’।

আপনে স্বীকার করেন আর নাই করেন, ইজরাইল ফিলিস্তিনি সংকট এখন ইহুদী মুসলমান সংকট। ফিলিস্তিনি ফুটবল প্রেসিডেন্টের কথা থেকে বুঝে নিন তারা আসলে কি ধরণের রাজনীতি করেন। ফিলিস্তিন ফুটবল প্রধান জিব্রিল রাজুব মেসিকে হুমকি দিয়ে সর্বশেষ বলেন, ‘তিনি আমাদের কথা না শুনলে মুসলিম বিশ্বের সব তরুণদের বলব, তাঁর ছবি ও জার্সি পুড়িয়ে ফেলতে। মেসিকে বর্জন করতে’। অর্থ্যাৎ মুসলমানদের আহ্বান করা হবে মেসিকে বর্জন করার। ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ সেটা আদতে মুসলিম জাতীয়তাবাদই। কোনদিন ইহুদীদের থেকে নিজেদের সাতন্ত্র করতে সক্ষম হলেই সেটা মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিকট চেহারায় রূপ নিবে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ যেমন মুসলিম জাতীয়তাবাদই ছিলো তাই বাংলাদেশ হবার পর এখানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা টিকতে পারেনি তেমনি ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে সেখানকার খ্রিস্টান ফিলিস্তিনিরা এডওয়াড সাঈদের মতই শরণার্থী হবে দলে দলে। বাংলাদেশের ‘এডওয়াড সাঈদ’ ছিলেন যোগেন মন্ডল। তথাকথিত নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের এই নেতা পাকিস্তানে তার লোকজনদের নিয়ে যোগ দেয়ার সময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘হিন্দুদের আওতায় থাকিয়া ঘৃণিত জীবন যাপন করার চেয়ে মুসলমান অথবা অন্য কোন জাতির আওতায় স্বাধীন ও সম্মানের সহিত বাস করিতে তফসিলি জাতি বেশী পছন্দ করে’। বাংলার এই ‘এডওয়ার্ড সাঈদ’ ১৯৫০ সালে জান বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নিয়ে জীবনের অন্তিম উপলব্ধি করে বলেছিলেন, ‘আমার পক্ষে এটা বলা অন্যায্য নয় যে পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দুদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ‘নিজভূমে পরবাসী’ করা হয়েছে, আর এটাই এখন হিন্দুদের কাছে পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ চিত্র। হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করাটাই এদের একমাত্র অপরাধ’। ফিলিস্তিনের খ্রিস্টান এডওয়াড সাঈদ যদি বেঁচে থাকতেন সেইদিন পর্যন্ত যেদিন ফিলিস্তিনিরা তাদের সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র পাবে- সেদিন তিনি ভিএস নাইপলের কথাকে মেনে নিয়ে দু:খ প্রকাশ করে বলতেন, নাইপলের কথাই সঠিক। ইসলাম একটি উপনিবেশিক ধর্ম যা অন্য ধর্মালম্বীদের পদদলিত করে রাখে…।

পাকিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব জঘন্যতম গণহত্যা চালিয়েও তাদের কেউ বয়কট করে না। কারণটা হলো পাকিস্তানের গণহত্যার খবর অত্যন্ত সুচারুভাবে ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্ব গোপন করে রেখেছে। কারণ ইসলাম বলে এক মুসলমানের দোষ ত্রুতি অন্য মুসলমানকে গোপন রাখতে হবে (বুখারী, মুসলিম, আলবানী মিশকাত হা/৪৯৫৮; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৭৪১)। এ কারণে তুরস্কের আরমেনিয়ার বিরুদ্ধে গণহত্যা, সৌদির ইয়েমেনের বিরুদ্ধে গণহত্যা, পাকিস্তানের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণহত্যার কথা বিশ্ববাসী জানতেই পারেনি। এমনকি ভিকটিম মুসলিম হওয়াতে তারা এইসব গণহত্যা দ্রুত ভুলে গেছে ও যাবে। তাই বিশ্বে একমাত্র ধর্মীয় রাষ্ট্রের নাম ইজরাইল, একমাত্র আগ্রাসণকারী দেশের নাম ইজরাইল। আপনি কখনো আবদুর নূর তুষারদের মুখে শুনবেন না বেলুচিন্তানে পাকিস্তানের চালানো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে। তাদের কাছে কাস্মিরে মুসলমানদের উপর ‘হিন্দু ভারত’ আগ্রাসন চালাচ্ছে। ইজরাইল ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বরতা চালাচ্ছে। তাদের এইসব কোরাসে প্রচার পায় বিশ্বব্যাপী। তাই শাকিরা তেল আবিবে গিয়ে গান গাইতে অস্বীকার জানালেও কখনই পাকিস্তানে গিয়ে গান গাইতে অস্বীকৃতি জানাবে না কারণ বেলুচদের কথা শাকিরা জানেই না!   
https://pathoksusupto.wordpress.com/2018/06/05/%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%93%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8C%E0%A6%A6%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87/