আমেরিকার হ্যানফোর্ডে যেখানে রয়েছে ‘লাইগো ডিটেক্টর’।-নাসা।
তখনই আমরা আনন্দে উদ্বাহু হয়ে উঠি! তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য হয়ে
উঠি কৌতুহলী।কিন্তু সেই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পিছনে আমাদের ভারতীয়দের, বাঙালিদের
কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সে সম্পর্কে জানার আগ্রহে বেশ কিছুটা
খামতি আমাদের থেকেই যায়। অথচ, বাস্তবটা এটাই যে, ওই সব বাঙালি বা ভারতীয়
বিজ্ঞানীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়া এই প্রথম সরাসরি
মহাকর্ষীয় তরঙ্গের
হদিশ মেলাটা হয়ত সম্ভবই হত না।
এ বার সেই গল্পটাই বলা যাক, মহাকর্ষীয় তরঙ্গের প্রথম সরাসরি হদিশ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাঙালি ও ভারতীয় বিজ্ঞানীদের ভূমিকাটা ঠিক কী ছিল।
ধরা পড়া মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কম্পাঙ্ক-মাত্রা। ছবি-নাসা।
এ দেশের যে সব বিজ্ঞানী মহাকর্ষীয় তরঙ্গের গবেষণার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা
বহু বছর ধরেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ ব্যাপারে কাজ করে চলেছেন। পুণের
‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড
অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে’র (আয়ুকা)অধ্যাপক, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সঞ্জীব এই
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ও অত্যন্ত ক্ষীণ মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সরাসরি হদিশ পাওয়ার
গবেষণায় অত্যন্ত বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। যা মার্কিন মুলুকে ‘LIGO
detector’ থেকে পাওয়া সঙ্কেতের (সিগন্যাল)তথ্য-বিশ্লেষণ করতে অনেকটাই
সাহায্য করেছে। এর আগে আরও এক বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সি. ভিশ্বেশ্বরা
দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষের পর যে বিপুল পরিমাণে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের
সৃষ্টি হয়, তা তত্ত্বগত ভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন। সাম্প্রতিক আবিষ্কারে
তারও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আরও এক বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানীর
নাম- বালা আইয়ার। বেঙ্গালুরুর ‘রমন রিসার্চ ইন্সটিটিউটে’র (আরআরআই) অধ্যাপক
বালা আইয়ার ফরাসি সহযোগী গবেষকদের নিয়ে যে গাণিতিক সূত্রটি দিয়েছিলেন, তা
দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষ থেকে জন্ম নেওয়া মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মডেল
বানাতে খুব সাহায্য করেছিল। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কারের ঘোষণা-পত্রে এই সব
অবদানেরই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যা আমাদের সকলের কাছেই অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
বহু বছরের লাগাতার চেষ্টার পরেও, মহাকর্ষীয়
তরঙ্গের সরাসরি হদিশ পাওয়াটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজ্ঞানী
মহলে। তার কারণ, খুব শক্তিশালী উৎস থেকে তাদের জন্ম হলেও এই তরঙ্গের মাত্রা
অত্যন্ত ক্ষীণ। আর তার চেয়েও বড় কথা, ওই তরঙ্গের সঙ্গে কোনও মহাজাগতিক
বস্তুরই তেমন ভাবে ‘বনিবনা’ বা ‘ইন্টারঅ্যাকশান’ হয় না। এই বিষয়টিকে খুব
সহজ ভাবে বুঝতে আমরা এই ব্রহ্মাণ্ডের স্থান-কালকে (Space-Time) একটি
শক্তিশালী ‘স্প্রিং’-এর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এমন একটি ‘স্প্রিং’কে
বাঁকাতে প্রচুর শক্তি লাগে। একই ভাবে, দু’টি কৃষ্ণ গহ্বর যখন প্রায় আলোর
গতিতে ছুটতে ছুটতে এসে একে অন্যকে ধাক্কা মারে আর তার ফলে সৃষ্টি হয়
মহাকর্ষীয় তরঙ্গের, তখন সেই তরঙ্গের স্পন্দন আমরা পৃথিবীতে বসানো
ডিটেক্টরগুলিতে ধরতে পারি।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সরাসরি হদিশ পাওয়ার ডিটেক্টরগুলি তখনই সবচেয়ে বেশি
কার্যকরী হয় যখন সেগুলি একে অন্যের চেয়ে যতটা সম্ভব দূরে থাকে। আমাদের
দু’টো চোখ যদি একে অন্যের চেয়ে আরও বেশি দূরে থাকতো, তা হলে আমরা আরও অনেক
দূর পর্যন্ত দেখতে পারতাম। মহারাষ্ট্রের নান্দেরে বসানো হচ্ছে আরও একটি
‘LIGO detector’। যেহেতু ভারত ভৌগোলিক ভাবে রয়েছে কার্যত, আমেরিকার ‘বিপরীত
মেরুতে’, তাই এর ফলে মহাকাশের অন্য প্রান্তটাও দেখতে পারবেন
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাই ঠিক কোন জায়গা থেকে ওই তরঙ্গ আসছে, তা নির্ধারণ বা
‘লোকেট’ করা যাবে। তার ফলে অনেক অজানা মহাজাগতিক বস্তুরও আবিষ্কার হয়ে
যেতে পারে অনতিদূর ভবিষ্যতে।
গ্যালিলিওর সময় থেকে আজ পর্যন্ত মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের যাবতীয় ধারণা
গড়ে উঠেছে আলোরই সাহায্যে। যেহেতু মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আলোক তরঙ্গের থেকে
পুরোপুরি আলাদা, তাই তার উৎসগুলি থেকে আমরা এ বার যে সব তথ্য পাব, সেগুলিও
এত দিনের ধ্যান-ধারণা থেকে একেবারেই আলাদা হবে। সদ্য-আবিষ্কৃত এই তরঙ্গ বা
সঙ্কেতের কম্পনের মাত্রা আমাদের ‘শ্রবণ পরিসীমা’র (অডিব্ল
ফ্রিকোয়েন্সি)মধ্যে পড়ে। তাই আমার কিছু সহকর্মীর মতে, এ বার মহাকর্ষীয়
তরঙ্গের দৌলতে পরিস্থিতিটা এমন পর্যায়ে পৌঁছবে, যাতে বলা যায়- ‘The
universe has spoken’!ব্রহ্মান্ড কথা বলছে!
রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা যখন প্রথম চোখ রেখেছিলেন মহাকাশে,
তখন ‘কোয়েজার’(Quasar) নামে একটি খুব শক্তিশালী মহাজাগতিক বস্তুর হদিশ
মিলেছিল। আমার বিশ্বাস, একই ভাবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে এই
ব্রহ্মান্ডের অনেক অজানা প্রান্তে লুকিয়ে থাকা অনেক অজানা মহাজাগতিক
বস্তুরও সন্ধান কিছু দিনের মধ্যেই মিলবে।
এই ব্রহ্মাণ্ড আমাদের আবারও বড় চমক দিতে চলেছে!
- ইতিহাসের এক ভষ্কর অধ্যায় তৈমুর লং……………….
- বিজ্ঞানী নিউটনের পূর্বে বিজ্ঞানী ভাস্করাচার্য কি…
- আমাদের গণিত, গণিতের আমরা: মজার গণিতের সন্ধানে। লেখ…
- ক্যালকুলেটর ছাড়াই বড় বড় গণিত সমাধান করা সম্ভব ?? দ…
- কৃত্রিম কিডনি বানিয়ে চমক বাঙালি, বাজারে আসতে চলেছে…
- বেতার-বার্তায় বিপ্লব: বাঙালির বিজ্ঞানী কৌশিক ……..
- মহাকাশে এ বার ‘রূপকথা’ লিখবেন এই বঙ্গনারী! ……….
- নিজেই চলবে বাইক ! এ সাফল্য বাঙ্গালী হাত ধরেই………
- ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশে……………………….
- উপমহাদেশের বিজ্ঞানী আনন্দ কান্নন, সদ্যোজাতদের জন্ড…
- নয়া আদিপুরুষের খোঁজ দিলেন বাঙালি