প্যান ইসলামিজমের…………………!!!

নিজেকে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তুলনা করে লোকজনের কাছে হাসির খোরাক হবার পর ফারুকীর ভাই-বেরাদারাই যে তার পক্ষে কথা বলতে এগিয়ে এসেছেন তা নয়, তার সমালোচক, মৃদু সমালোচকদেরও কেউ কেউ এগিয়ে এসেছেন। ফারুকীকে বাঁচাতে হলে সত্যজিতকে নামাতে হবে। এমন কি বাংলা সিনেমার দিকপালদের সবাইকেই বাদ দিতে হবে। এই বাদ দেয়াটা হবে হিন্দু মুসলমান পরিচয়ে। এই প্রক্রিয়াটাকে বলে প্যান ইসলামিজম। এই সম্পর্কে ধারণা না থাকলে উল্টো আমাকেই সাম্প্রদায়িক বলে ঠাউরাতে পারেন। আজকে কবি ব্রাত্য রাইসু ফারুকীর সত্যজিৎ বিতর্ক নিয়ে সত্যজিৎকে নিচে নামাইছে। তার এই এগিয়ে আসাটা মোটেই ফারুকীর দরদে নয়। এই দরদের কারণ মুসলমান পরিচয়। ব্রাত্যরা মুসলমানদের ভালোবাসে। মুসলমানের মঙ্গল কামনা করে। মুসলমান আধুনিক প্রগতিশীল হোক সেটাও চায়। তা যা-ই চাক চাইতে হবে নিজের মুসলমান পরিচয়ে। এটার নাম প্যান ইসলামিজম। হুজুরদের ইসলামবাদ কিন্তু এই জিনিস না। প্যান ইসলামিজমবাদীরা সাকুরাতে বসে মদের বোতল শেষ করে আধুনিক কবিতার ব্যবচ্ছেদ করতে বসে। ন্যুড শিল্পকলার নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে গভীর মুগ্ধতা প্রকাশ করে। নারী স্বাধীনতায় তারা সেক্যুলার প্রগতিশীলদেরও হার মানাতে পারে। তার মানে দেখতেই পারছেন ইনারা হুজুরদের ইসলাম ধর্মের আশপাশ দিয়া যান না। ইনাদের কাজ ‘মুসলমান পরিচয় নিয়ে’। তারা মনে করেন ‘মুসলমান’ পরিচয় বাদ দিলে ইনাদের নিজের বলে আর কিছুই থাকবে না। তাই সত্যজিতের সঙ্গে তুলনা করায় ফারুকী কৌতুকের শিকার হলে ইনাদের বুকে বড় বাজে। হিন্দুরা ভালো সিনেমা বানায়, ভালো উপন্যাস লেখে- তাই তাদের পিছনে লাইন দিতে হবে নাকি? রজনীকান্তের গান আছে না- মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই ; দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের তার বেশী আর সাধ্য নাই…। ফারুকীর যা সাধ্য আছে তা নিয়েই তার ভাই-বেরাদারদের সন্তুষ্ঠ হতে হবে। না হলে সত্যজিৎ-ঋত্বিকদের কাছেই পড়ে থাকতে হবে- এটাই রাইসুর এগিয়ে আসার দরদ।

আগেও বলেছি আবারো বলেছি, বাংলা ভাগ হয়েছিলো এই প্যান ইসলামিজমবাদীদের হাতেই, ইসলামপন্থিদের হাতে নয়। পাকিস্তান কায়েম হবার পর দ্বিজাতি তত্ত্বকে ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তানে এরাই মুসলমানের সাহিত্য, মুসলমানের কবিতা, মুসলমানের সিনেমা, মুসলমানের অভিনয়, মুসলমানের আর্ট- এরকম অবস্থানে পূর্ব পাকিস্তানের মূল কন্ঠস্বর হিসেবে আর্বিভূত হয়। মাঝে ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে এই ধারায় ছেদ পড়ে। দেশ স্বাধীন হবার পর দীর্ঘ একটা গ্যাপে পূর্ব পাকিস্তানের ফরুখ আহমদ, গোলাম মুস্তফাদের নেক্সট জেনারেশন হিসেবে ফারুকী, ব্রাত্য রাইসুদের আগমন ঘটে। ষাটের দশকের জহির রায়হান, আমজাদ হোসেন, সুভাষ দত্তদের আইডল ছিলো বিকাশ রায়, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া দুই পারের সাংস্কৃতিক নৈকট্য কোনভাবেই আটকানো যায়নি। পূর্ব পাকিস্তানের প্যান ইসলামিজমের বুদ্ধিজীবীদের মুঠি আলগা হয়ে পড়ছিলো ষাটের দশকের তরুণ কবি, সাহিত্যক, নির্মাতাতের প্রতিভার দীপ্তিতে। এখন সব কিছুই অনলাইন কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সেই অনলাইনে প্যান ইসলামিজমের বড় প্রচারক ব্রাত্য রাইসু আর পিনাকি ভট্টাচার্য…।