“ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়”–ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এই ভাবেই বোধহয় হয়।

“ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়”–ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এই ভাবেই বোধহয় হয়।

ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

প্রবাদ বাক্যের একটি দাম আছে, সত্যতা আছে। যে গরুর ঘর পুড়েছে একমাত্র সেই গরু ই আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলে সাবধান হয়। ভাবে আবার সেই আগুন আসছে না তো ?

আমি ঘর পোড়া গরু। ১৯৬৪ সালে আমার পুর্বপুরুষের ঘর পুড়েছে। আমি ৩রা জানুয়ারী ১৯৬৪ সালে এক জ্বলন্ত বাড়ি থেকে পালিয়ে বেচেছিলাম।   ছাদের ওপরে লুকিয়েছিলাম, দেখেছিলাম খুলনা শহরের হিন্দুদের ঘর জ্বলতে লাগলে কি অপুর্ব সৌন্ধর্য্য দেখা যায়। বেশীক্ষন দেখতে পারি নি, কারনঃ বাড়িটা হুড় মুড় করে পড়ে গিয়েছিলো। আমি কোনো ক্রমে বেচে গিয়েছিলাম। সারা পিঠ পুড়ে যায়, হাটুতে চোট লাগে। সেই পোড়া দাগ এখনো মিলিয়ে যায় নি, আর আমাবস্যা পুর্নিমায় হাটুর ব্যাথা বেশ ভোগায়।

বেচে গ্রামে ফিরে আসার পর, দেখেছিলাম, একদিন বিকেলে বাবা হাতে একটি কাগজ নিয়ে এসেছেন। ওতো বড় ডাকসাইটে মানুষ, রীতি মতো ভীত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বাবার হাতের কাগজে (ছাপানো) লেখা ছিলো,
“ ২৪ ঘন্টা সময় আছে, তিনটির যে কোনো একটি বেছে নাও। ধর্ম পাল্টাও, না হয় ঘর বাড়ী ফেলে ইন্ডিয়াতে পালাও, এগুলোর কিছু না করলে আমরা আসছি, বেচে থাকবে না। প্রায় দেড় কোটি হিন্দুরা দ্বিতীয় পথ বেছে নিয়েছিলো। আমার পরিবার সেই থেকে “আহাম্মখ উদবাস্তু” নামে পরিচিত।

আজ , এতোদিন পরে (৫৩ বছর পর), আমি সেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছি, ডরাচ্ছি। নিজের জন্য আর ডরাই না। আমার কি করবে? ছেলে মেয়েকে, নাতি নাতনী দের তো পাবে না। বাবা,মা বেচে নেই। ভাই বোনেরা আমার সাথে সাথে বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে। আমার কিছুই করতে পারবে না।

কিন্তু, পশ্চিম বংগে যে কয়েক কোটি হিন্দু আছে, তাদের হাতে ওই ছাপানো চিরকুট আসার সময় হয়ে গেছে। ভাবি এরা কি করবে। কোথায় যাবে ? হ্যা, তবে প্রথম অফশান টা আছে বেচে যাবার। ধর্ম পালটানো। বেচে যাবার ঐ একটিই উপায়। না হলে এখুনি পশ্চিম বংগ ছেড়ে পালানো অন্য কোনো প্রদেশে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এই ভাবেই বোধ হয় হয়।