শরৎচন্দ্রকে কাজি মোতাহার হোসেন জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি মুসলিম সমাজ নিয়ে লিখেন না কেন? সেখানেও তো অনেক অনিয়ম। শরৎচন্দ্র জবাবে বলেছিলেন, আমি তো মুসলিম সমাজ সম্পর্কে ভাল জানি না…। আমিও মুসলিম সমাজ থেকে আসা একজন মানুষ। হিন্দুদের মনের গহীনে থাকা গোপন কথাটি আমাকে কেউ না জানালে আমি জানতে অক্ষম। গতকালের পোস্টের পর প্রচুর ইনবক্স পেয়েছি। সেক্যুলার, নাস্তিক, উদার এমন হিন্দু পরিবার থেকে আসা অনেকে আমার কাছে কিছু নিমর্ম সত্যকে তুলে ধরেছেন। আমার নিজের চোখে দেখা কিছু সত্যকেও তখন উপলব্ধি করতে পারলাম। আমরা এই পোস্টটি তাই গতকালের পোস্টের বিপরীতে ১৮০ ডিগ্রী বললে অস্বীকার করবো না।
উপমহাদেশে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু, বিশেষভাবে উল্লেখ করলে মুসলিমদের মাঝে সংখ্যালঘু হিন্দুরা “”সনাতন হিন্দু পারিবারিক আইনের” ঘোর সমর্থক হয়। এদের মধ্যে সেক্যুলার, নাস্তিক পর্যন্ত আছেন। কারণটি কি?
আমার পরিচিত এক খ্রিস্টান বড় ভাইকে তার মুসলিম প্রেমিকা ইসলাম গ্রহণ করিয়ে মুসলমান বানিয়ে বিয়ে করেছিল। প্রেমিকার শর্তই ছিল ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। আমার সেই সাবেক খ্রিস্টান বড় ভাইয়ের প্রেমিকা “লাভ জিহাদ” সম্পর্কে যে কোন ধারণাই রাখতেন না আজ থেকে ১৫ বছর আগে তা বলাই বাহুল্য। তবে এটি মুসলিমদের চেতনাগত। কাফের-অমুসলিমদের ইসলামের ছায়াতলে আনতে পারলে চৌদ্দ পুরুষ পর্যন্ত বেহেস্তের টিকিট কমফার্ম!
মুসলিম অধ্যষ্যিত অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের একটি বড় ফাঁদ হচ্ছে “লাভ জিহাদ”! বিশেষত পাকিস্তানে এটি ব্যাপকভাব প্রচলিত। হিন্দু নারীকে মুসলিম বানিয়ে বিয়ে করে তার প্রাপ্য সম্পত্তি দখল করা। পাকিস্তানে হিন্দু নারীদের কিডন্যাপ করে জোরজবরদস্তির মাধ্যমে বিয়ে করা হয়। বাংলাদেশে অতখানি মগের মুল্লু এখনো হয়নি। হয়নি সম্ভবত হিন্দু নারীরা বাপের সম্পত্তিতে ভাগ পায় না বলে। এখানে তাই পাকিস্তানের মত দস্যুগিরির মত নয়, প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক করে একটা হিন্দু নারীকে মুসলিম বানানো হয়। অবশ্য ইসলাম ধর্ম প্রসারের চিন্তা নিয়েই যে একটা মুসলিম ছেলে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় তা বলছি না। তবে প্রেমের সফল পরিণতি বিয়ে তো ইসলাম গ্রহণ পূর্ব সম্ভবই না। সেক্ষেত্রে হিন্দু নারীর তার বাপের সম্পত্তির ভাগ তার মুসলিম স্বামীর হাতে চলে যাবে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু নারীদের জোরজবরদস্তির মাধ্যমে তুলে নিয়ে বিয়ে করা হতো। আমার ছেলেবেলার বন্ধু শিমুলের মা-ই ছিল এমনই একজন। ৭১ সালের সেই বিপদসঙ্কুল দিনে বন্ধুর বাবা অসহায় একটা হিন্দু পরিবারের সুন্দরী নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে করেছিলেন। লজ্জ্বা-ঘৃণায় সেই হিন্দু পরিবারটি ভারতে চলে যায় যুদ্ধচলা কালেই।বন্ধুর মাকে নিরুপায় হয়ে জীবন কাটিযে দিতে হয় একদা তাকে লুট করা তার স্বামীর সঙ্গেই। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্চের হিন্দু পরিবারগুলির সবচেয়ে ভয়ের কারণ হচ্ছে তাদের মেয়ে সন্তানকে নিয়ে। কোন মুসলমান ছেলের প্রেমে না পড়ছে কিংবা মেয়েকে না তুলে নিয়ে যায়। মুসলিমদের “লাভ জিহাদ” শব্দটি আইএস উত্থানের পর বেশি শোনা গেলেও এটি মুসলিমদের মজ্জাগত। এই ধর্মান্তকরণে চেষ্টা মুসলিমদের সচেতন বা অচেতন দুভাবেই কাজ করে।
তাহলে সংখ্যালঘু হিন্দু নারীদের ধর্মীয় বৈষ্যম কি অনন্তকাল পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে? সম্ভবত না। কারণ হিন্দুদের অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে সংখ্যালঘু হয়ে থাকতে হবে না। তাদের ক্রমবর্ধমান দেশান্তরীন যাত্রা সামনের দনিগুলিতে আরো ব্যাপক হাড়ে বাড়তে থাকবে। একটা বাংলাদেশী সংখ্যালঘু হিন্দু নারী বর্ডার ক্রস করে ভারতে প্রবেশ করে ভারতের নাগরিক হয়ে গেলেই তার পিতৃ সম্পত্তিতে অধিকার জন্মে যাবে। কি আর বলার আছে আমার?