প্রশ্ন সততার বা অসততার নয়, প্রশ্ন নৈতিকতার এবং অনৈতিকতার। নিতী বিগর্হিত কাজ করে কেঊ সৎ হতে পারে না। । কিন্তু অনেকেই সততার বড়াই করে অনৈতিকতার আশ্রয় নিতেই পারে।
যে হস্তিনাপুর কে নিজের রক্ত দিয়ে রক্ষা করবেন বলে পিতামহ ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা বদ্ধ ছিলেন, সেই পুত চরিত্র ভীষ্ম হস্তিনাপুরকে দুই যুবরাজ দিয়ে , ভাগ করে মহাপাপ করেছিলেন। ৫২ লক্ষ (১৮ অক্ষোহিনী) মানুষের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে প্রান বিসর্জন তার সেই পাপের ফসল। যুদ্ধ শেষে তিনি নিজেই সেই দোষ স্বীকার করে গেছেন। কিন্তু ৫২ লক্ষ মানুষের প্রান ঘর সংসার কি ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন????
গান্ধীজী অসৎ ছিলেন একথা কেঊ বলবে না। কিন্তু নেতাজীকে নিয়ে যে ছলনা করেছিলেন সেটা চরম হিংসা এবং অনৈতিকতা। ‘নিজের মৃত দেহের উপর দিয়ে ভারত ভাগ হবে’ বলে যে প্রতিশ্রুতি গান্ধীজী দিয়েছিলেন, সেই দেশ ভাগে নিজের সাক্ষর রেখেছিলেন প্রথম ব্যাক্তি হিসাবে। কোনো নৈতিকতার মধ্যে এটা পড়ে না। তার সেই অনৈতিক কাজের জন্য, ভারতবাসী আজো মাশুল গুনে যাচ্ছে, এর শেষ কোথায় কেউ বলতে পারে না। সততার বড়াই অনেকেই করেন কিন্তু নীতি মেনে কেউ চলবেন না।
দার্শনিক এরিষ্টাটল তার “Ethics” নামে প্রতিপাদ্যে সেই নৈতিকতার প্রশ্ন বিচার করেছেন। সনাতনী দর্শনে আছে “ন্যায় শাস্ত্র”। সেখানেও সেই একই প্রশ্ন বিচার করা হয়েছে।
শুধু সৎ মানুষ দিয়ে সংসার চলে না, দরকার নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ, তা সে সমাজ জীবন, রাজনৈতিক জীবন যাই হোক না কেনো। শ্রী কৃষ্ণের জীবনী বিচার করলে বেশ কিছু অসৎ কাজের উদাহরন দেওয়া যায়, অনেকে দেন ও। কিন্তু তিনি যে যুদ্ধের মুল হোতা ছিলেন তা ছিলো সম্পুর্নভাবে নৈতিক, তাই আজো তাকে শ্রদ্ধা করে মানুষ। মর্য্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম চন্দ্র সততার প্রতিমুর্তি। কিন্তু মা সীতাকে সন্দেহ প্রসুত হয়ে এবং মাত্র একটি দুষ্ট মানুষের মন্তব্যের জন্য তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীকে ( তিনিও একজন প্রজা বৈকি) বনবাস দেওয়া কোনো নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। রাবন সেই যুগের একজন পন্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন। নিজের বোনের অপমানের বদলা নিতে তিনি আর একজন সাধ্বীর অবমাননা করলেন। সেটা ছিলো তার অনৈতিক কাজ।
জওয়ানদের মধ্যে বেশীর ভাগ খুব সৎ কিন্তু তাই বলে তারা কি তাদের রাইফেল চালায় না ????? তাই সব সৎ মানুষ (অন্তত যারা মাঠে ঘাটে ,রাস্তার প্রতিটা ল্যাম্প পোষ্টে সেই কথা লিখে হোর্ডীং টানান) নৈতিক কাজ করেন না। তারা প্রকারান্তরে অনৈতিক ধাপ্পাবাজ।।
মাত্র একটি ট্রেন অক্সিডেন্টের জন্য আমাদেরই ভারতের এক প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, রেলওয়ে মন্ত্রীত্ত্ব থেকে পদত্যাগ করে ছিলেন, সেটা ছিলো তার নৈতিক বিচার। কেউ তার কথা মনে রাখে না। নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষের নাম কাম অর্থ হয় না, কোনো পদ বা উপাধী লাভ হয় না।।
পরবর্তী কালে আর একজন (একসময় উপপ্রধানমন্ত্রী ও ছিলেন) রাজনৈতিক বিশিষ্ট নেতা ,কোনো কারনে আদালতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন,তিনিও সব সরকারী বেসরকারী পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন তার নৈতিক বিচার বুদ্ধির জন্য। তিনিও জানতেন যে, অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া অবধি সবাই নির্দোষ। তার নীতি বোধ ছিলো এবং আজো আছে। তিনি আজ সার্বিক ভাবে ব্রাত্য, একদিন সবাই ভুলে যাবে তাকে।
আর একজন সততার প্রতীক, ভারতের একটি অঙ্গ রাজ্যের কর্ন ধার। । তার প্রায় সমস্ত ক্যাবিনেট মন্ত্রী, রাজ্য সভার সদস্য বৃন্দ, লোকসভার চিফ হুইপ, তৃনমুল স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর অবধি আদ্যপান্ত অনৈতিক লোভী মানুষে ভর্তি । সেই রাজনৈতিক কর্মীদের কাধে ভর করে যে ক্ষমতা ভোগ করা হয়, তা দিয়ে আর যাই হোক দেশ বা দশের ভালো হয় না। একবারও মনে হয় না, “আমি এবারে নিজেই সরে যাই”।
দুর্য্যোধনের ও সেই বোধোদয় হয় নি। সে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলো শেষ অবধি। ফলশ্রুতি সার্বিক ধ্বংস।
দুদিন আগে, আর একজন সততার বড়াই করা মুখ্যমন্ত্রী, যাকে মানুষজন অতি বিশ্বাস করে বিশাল ভাবে জয়ী করেছিলো। মাত্র দুবছরের মাথায় তাকে আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছে। অনেকের ই দিন ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু অহংকার মানুষ্কে অন্ধ করে দেয়। অন্ধ জন আলো দেখতে পায় না।।
আশা এই যে, চারিদিক যখন অনৈতিকতার কালো অন্ধ কারে ঢেকে যায় তখন সেই কালো মেঘের আড়াল থেকে নতুন সুর্য্য উকি দেয়, নতুন দিনের সুচনা করে। সেই দিনের বা ক্ষনের অপেক্ষা ছাড়া উপায় কি ???????
চতুরঙ্গ:
ডাঃ মৃনালঅসততা কান্তি দেবনাথ
চতুরঙ্গ:
ডাঃ মৃনালঅসততা কান্তি দেবনাথ