ভারতে এমন কি ঘটেছে? মিডিয়া, এক্টিভিস্টরা বুঝাচ্ছেন ভারতে এবার মুসলমানদের জবাই করা হবে!

ভারতে এমন কি ঘটেছে? মিডিয়া, এক্টিভিস্টরা বুঝাচ্ছেন ভারতে এবার মুসলমানদের জবাই করা হবে! ভারত ছেড়ে একজন মুসলমান পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশে চলে আসার নজির নেই। নরেন্দ মোদীকে গুজরাট দাঙ্গার অন্যতম ইন্দনদাতা হিসেবে আমরা জানি। একজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাকে পছন্দ করার কোন কারণ নেই। সেক্যুলাররা কখনই ধর্মবাদী রাজনীতিকে সমর্থন জানাবে না। কিন্তু আমরা মূল আপত্তির জায়গাটা মুসলিম ও তাদের ধর্ম তোষণাকারী লিবারালরা একটা হিউমার সৃষ্টি করতে চাইছে। বিবিসি’র কাছে ভারতীয় একজন এক্টিভিস্ট ফারাহ নাকভি বিজেপি জেতার পর বলেছেন, ‘দেখুন আগামীতে কী ঘটবে সেই পূর্বাভাস করতে পারব না – তবে এটুকু বলতে পারি বিজেপির এবারের জয় আসলে হিন্দুত্বর ও হিন্দু রাষ্ট্রের চেতনার জয়, যেটা মৌলিকভাবেই সংখ্যালঘু-বিরোধী। এই হিন্দু রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছাড়া কিছুই নয়’।

তা হায়দ্রাবাদে বছরের পর বছর জিতে আসা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ও তার দলকে কিভাবে দেখা হবে? মুসলিমদের নিয়ে ভারতকে বিভক্ত করার রাজনৈতিক দর্শন যিনি প্রকাশ্যে বলেন, যিনি মুসলমানদের কেবল নিজেদের ভাইদের মধ্যে নেতা নির্বাচন করতে বলেন সেটা কি ধরণের রাষ্ট্রের কথা আমাদের বলে? ৫৭টা মুসলিম দেশ নিয়ে পৃথিবীতে এরকম কোন আলোচনা হয় বলে আমার জানা নেই। বরং এই ৫৭টা দেশ দর্পভরে নিজেদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওআইসি গঠন করেছে। এই ৫৭টা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইসলামিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হয় অলিম্পিকের মত করে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অমুসলিম জনসাধারণ ভারতে মাইগ্রেট করতে বাধ্য হয়েছে। এই সংখ্যা বিপুল হলেও সেটা ছিলো চোরাস্রোতের মত। রাষ্ট্র ও স্থানীয় জনসাধারণ অমুসলিমদের প্রতি এতখানি বৈরী ছিলো যে এরা টিকতে না পেরে নিরবে দেশ ছেড়েছে। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গিয়ে বার্মা ভিলেনে পরিণত হয়েছে। তারা যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের পন্থাকে অনুসরণ করত তাহলে সাপও মরত লাঠিও ভাঙ্গত না। ৫৭টা মুসলিম দেশে অমুসলিমদের নাগরিক অধিকার সমান নয়। তারা রাষ্ট্র প্রধান হতে পারে না। কোথাও আইনে নেই, কোথাও জনসাধারণ মেনে নিবে না। তার মানে কি এবার ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা তেমনটা করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে? কখনই নয়। আমি কেবল বলতে চাই এতকাল যারা ইসলামিক উত্থানে নিশ্চুপ ছিলেন, মুসলিম এইসব দেশের রাষ্ট্রীয় ধর্মবাজীতে আমরা যারা মুখর ছিলাম আর আপনারা সেটাকে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ বলে ঝাল মেটাতেন- তাদের দ্বৈত নীতির মুখোশ এবার খুলে যাচ্ছে…!

ভারত নিয়ে মিডিয়া যেরকম দেখায় প্রকৃত চিত্র তেমন ভয়াবহ কি? মোদী এতখানি ভয়ংকর তাহলে সীমান্ত পাড়ি দিযে মুসলিমরা পাশ্চবর্তী দেশে পালাচ্ছে না কেন? রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। জীবন বাঁচাতে মানুষ সীমান্ত পেরুবেই। ভারতে মুসলিম উদ্বাস্তু কোথায়? মানে বলতে চাইছি ভারতীয় মুসলিমদের কোন ক্যাম্প আছে পাকিস্তানে? বাংলাদেশে? চীনে? নেই কেন? অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ, আসামে বাংলাদেশী হিন্দুর সংখ্যা হাতে গুণতে পারবেন না! পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে কেন? কেন তাদের জমিজমা হারাতে হচ্ছে পাকিস্তান-বাংলাদেশে? নরেন্দ মোদী গুজরাটের কসাইখ্যাত, সেই লোকটা সেদিন বলল, ‘এতদিন দেশের সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়ে আসা হয়েছে। ভাল হত যদি তাদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করা হত, যদি সমাজজীবনের বিভিন্ন স্তরে ওই সমাজ থেকে নেতারা উঠে আসতেন’।

ভারতের মুসলমানদের মসজিদ বানিয়ে দিলে, মাদ্রাসা করে দিলে, মাদ্রাসা শিক্ষা তাদের জন্য সহজলভ্য করে দিলে, হজে ভর্তুকি দিলে মুসলিমরা খুশি হয়। ধর্মান্ধ, আধুনিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে থাকা একটা সম্প্রদায় তো এসব ধর্মকরণে খুশিই হবে। ভারতীয় সেক্যুলাররা এতদিন মুসলমানদের এভাবেই সমাজের পশ্চাপৎ রেখে নিজেদের ভোট বাগিয়েছে। মোদী এসে হজ কোটা বন্ধ করে দিক। মসজিদ মাদ্রাসায় অর্থ বন্ধ করে দিক। মাদ্রাসা শিক্ষার রাশ টেনে ধরুক। এতেই মুসলমানদের মঙ্গল। তাদের ভারতের মূল শিক্ষায় আসতে হবে। মমতা কিংবা রাহুল মুসলমানদের গলায় তাবিজ মাথায় চুপি পরিয়ে রেখে এতকাল তাদের মুসলমানই করে রেখেছে। মোদী আসলে যদি মুসলমানরা সতর্ক থাকে নিজেদের নিয়ে সেটা তাদের জন্য মঙ্গলজনক। ট্রাম্প আসার আগে যেমন বলেছিলো, মুসলমানরা ব্যাগ গুছিয়ে রাখো সোজা পাঠিয়ে দিবো…। চারদিকে শোরগোল পড়ে গিয়েছিলো। আমেরিকার মুসলমানরা সোজা হয়ে গেছে। সবার মধ্যে এটা কাজ করে, না বাবা, ট্রাম্পের জমানায় একটু বুঝেশুনে চলতে হবে। পশ্চিমা লিবারালদের একচোখা নীতির বিপরীতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ মোদীদের উদাহরণ তৈরি হয়েছে। মুসলমানদের জন্য ট্রাম্প-মোদীর মত নেতা দরকার- এই মতামত একজন-দুজন করে এখন লক্ষ-কোটি মানুষের মতামত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এঙ্গেলা মার্কেল, কানাডার ট্রুডো, ব্রিটেনের তেরেসা মে, নিউজিল্যান্ডের জেসিন্ডাদের ‘ইসলাম তোষণ’ সেখানে প্রচন্ডভাবে ডানপন্থিদের ডেকে আনছে। মুসলিমরা শরীয়া আর ইসলামিক কান্ট্রি- এই ধারণা থেকে সরে আসবে না। তারা সংখ্যায় বেড়ে গেলে অন্যদের উপর ইসলাম চাপাতে চাইবে। তাই লোকজন বলতেই পারে ট্রাম্প-মোদীই এদের জন্য দরকার। কতদিন মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখবেন বলুন?

কেন ইউরোপ জুড়ে মুসলিম ঘৃণা বাড়ছে সেটি একচোখা মানবাধিকারবাদ কোনদিন বুঝতে চায়নি। সম্প্রতি ইংলেন্ডে একজন স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে স্কুলের শ্রেণীর কক্ষে সমকামিতা সম্পর্কে পাঠ দেয়ায়। সমকামিদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু ধর্মের বিরূপ মনোভাব থাকার পরও ইংলেন্ডের স্কুলে কেবলমাত্র মুসলিমরা হাঙ্গামা শুরু করেছে। এইসব অভিবাসী মুসলিমরা এখানে এসেছিলো সুই হয়ে, এখন এরা ইংলেন্ডে ফাল হয়ে উঠেছে! এরা ইংলেন্ডের স্কুল সিলেবাস ঠিক করে দিবে। এত গোড়া একটি সম্প্রদায় যখন ইংলেন্ডে সংখ্যায় ৩০-৪০ হয়ে যাবে তখন ইংলেন্ডকে তারা নিয়ন্তণ করতে চাইবে ইসলামিক ভাবধারায়। বার্মিহামের সেই স্কুল টিচারকে মুসলিম অভিবাভকরা এখন ‘ইসলামোফোবিক’ বলছে! বামাতীদের প্রিয় শব্দ ইসলামোফোবিক যে কিভাবে পাশ্চত্যে ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে ‘নোয়ামচমেস্কিদের’ কি কোন ধারণা আছে? সমকামিদের বিষয়ে মুসলিমদের আপত্তি থাকলে, বিবর্তণবাদ সম্পর্কে মুসলিমদের আপত্তি থাকলে তারা সহিংস আন্দোলন চালাবে। এর বিপক্ষে যারা থাকবে তারা এজন্য ‘ইসলামোফোবিক’ হিসেবে চিহ্নত হবে!

আমার আসল কথাটা হচ্ছে এটা, মাহাথির মোহাম্মদ, ব্রুনাইয়ের প্রিন্স, তুরষ্কের এরদোয়ান কিংবা সৌদি প্রিন্সদের কখনই ডোনালন্ড ট্রাম্পের মত ঘৃণা পেতে হয়নি আপনাদের কাছে-কেন? বাংলাদেশে যে প্রকাশক আর অনুবাদক এরদোয়ানের বই ছেপেছে তাদের কি হিন্দুত্ববাদের সমতুল্য কোন সাম্প্রদায়িক ক্যাটাগরিতে পড়তে হয়েছে? দেশটা বিশেষ একটি ধর্মের মানুষদের জন্য মাহাথি, এরদোয়ান এত পরিশ্রম করেও মোদীর মত হিন্দুত্ববাদী সমতুল্য কোন বিশেষণ পেলো না কেন? সেক্যুলার তুরষ্ককে মৌলবাদী তুরষ্ক বানিয়ে এরদোয়ান তো প্রথম আলোর প্রগতিশীল সাংবাদিকদের কাছে মোদীর মত রোষের শিকার হয় না? মোদির জমানায় গরুবাদীদের নির্যাতন বিশ্ব সংবাদ হলেও বাংলাদেশে নাস্তিকদের ধারাবাহিক হত্যা ও দেশত্যাগের পরও বাংলাদেশের নেতানেত্রীরা মোদীর সঙ্গে একই যাত্রায় কেন তারা পৃথক ফল পাবে?…
Susupto Pathok