সৌদি আরবের কথিত সংস্কার বা দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন বিশ্ববাসীর আশাবাদী হবার কোন কারণ নেই। কঠিন ইসলাম ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যে থাকা সৌদি আরব অন্যান্য মডারেট মুসলিম দেশ থেকে পোষাকী চেহারায় পৃথক মাত্র। মডারেট মুসলিম দেশগুলোতে মুসলিম নারীদের বাধ্যতামূলক পর্দা নেই, মেয়েরা নাটক-সিনেমা করে, পশ্চিমা পোশাক পরতে পারে, অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ পাকিস্তান তুরস্কের মত দেশগুলো সৌদি আরবের মত কঠিন শরীয়া অনুসারী নয়। কিন্তু তারা সকলেই অভিন্ন প্যান ইসলামিজমকে ধারণ করে। ভয়ংকর ধর্মীয় জাতি চেতনা এই প্যান ইসলামিজম হতে গেলে দরবেশ হবার কোন শর্ত নেই। আপনি ইমাম গাজ্জালীর মত মোল্লা হতে পারেন বা অনন্ত জলিলের মত নাচাগানা করা লোক হতে পারেন তাতে কোন সমস্যা নেই। আপনাকে কেবল কট্টরভাবে ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদী’ হতে হবে। সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপনিবেশ ঘটানোর স্বপ্ন দেখতে হবে। লোক সংখ্যা বাড়িয়ে অমুসলিম প্রধান দেশে নিজেদের ধর্মীয় জাতি চেতনা ন্যাৎসিবাদের মত করে আতংকজনভাবে প্রকাশিত করাই লক্ষ্য হতে হবে। তার জন্য আপনার নামাজী হবার দরকার নেই। হলেও ক্ষতি নেই।
সৌদি আরবে মেয়েরা গাড়ি চালাবে, সামনে র্যা প মডেলিং করবে তাতে সেদেশের নারীদের সাময়িক মুক্তি মিলতে পারে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদীতে সেদেশের মেয়েরা স্বেচ্ছায় খাঁচায় গিয়ে ধরা দিবেই। মডেল হ্যাপির আমাতুল্লাহ হবার পিছনে সমাজ রাষ্ট্রের প্যান ইসলামিজম যতখানি ভূমিকা রাখে তা আজকের যুগে এসে খুব বেশি মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। রাষ্ট্র সমাজে মুসলিম জাতিভেদ, মুসলমানদের ধর্ম, পোশাক, খাদ্য, বিশ্বাস সবই সর্বশ্রেষ্ঠ- এরকম অন্ধ বিশ্বাস মগজে অবাধ যাতায়াত বিপরীতে আধুনিক ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, নারীবাদ, যুক্তি ও মুক্তচিন্তায় যে সমাজ রাষ্ট্র সম্প্রদায় প্রভাবিত থাকে সেখানে একজন মুসলিম অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল, ড্যান্সার তার কাজকে ‘পাপ’ মনে করবে না। শেষ বয়েসে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ততা প্রকাশ করবে না বা হ্যাপির মত প্যান ইসলামিজমের মডেল হবে না। লেবাননী নারী পপ গাইকা আমাল হিজাজী পাশ্চত্য ধাচেই গান গাইতেন। লেবানন বাংলাদেশ পাকিস্তান তুরস্কের মতই মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র বলা চলে। সৌদির নারী হলে হিজাজী হয়ত শিল্পীই হতে পারতেন না। সে হিসেবে লেবাননী নারীরা সৌদিদের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে ধরে নিলাম। কিন্তু সম্প্রতি এই হিজাজী ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ তার প্রার্থনায় সাড়া দিয়েছেন। তিনি এখন ইসলামী জীবন যাপনে ফিরে যাবেন বিধায় গান ছেড়ে দিবেন। হিজাজী ঘোষণা দিয়ে তারপর থেকে ইসলামী খাঁচায় অর্থ্যাৎ নারীদের আষ্টে-পৃষ্ঠে বেধে রাখা শরীয়ার গুণগান গাইতে থাকেন। এ বছর ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে হঠাৎ হযরত মুহাম্মদকে নিয়ে গভীর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নতুন গান রিলিজ করেছে। যে ইসলামী শরীয়া সৌদি মুসলিম নারীদের মধ্যযুগে এখনো আটকে রেখেছে, যে মধ্যযুগীয় পুরুষের রচনা করা আইন ভাঙ্গতে চেষ্টা করছে সৌদি নারীরা, হিজাজী তাকে নিয়ে বন্দনামূলক গান গাইছে শরীয়া মোতাবেক নারী পোশাক পরে! লেবানন, তুরস্ক, পাকিস্তান বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা সৌদি নারীদের মত অবরুদ্ধ নয়। কিন্তু সেক্যুলারিজম প্রগতিশীলতা রাষ্ট্র কর্তৃক ধারণ না করায় সমাজ রাষ্ট্রে মুসলিম জাতি চেতনা (যেহেতু এখানে ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম) ও ইসলামী শাস্ত্রীয় চর্চা লাগামহীন হওয়ায় জনগণ স্রেফ ‘মুসলমান’ হিসেবে গড়ে উঠে। এই ‘মুসলমান’ গোটা বিশ্ববাসীর সঙ্গে অভিন্ন মানবজাতি হয়ে উঠতে পারে না। এটা পৃথিবীকে খন্ডিত করে। বিভেদ এবং সংঘর্ষে জড়িত করে।
মুসলিম উপনিবেশ বিশেষত ইউরোপে মুসলিম কমিউনিটি সচেতনভাবে জন্মহার বাড়িয়ে যে মুসলিম উপনিবেশ সৃষ্টি অপচেষ্টা করছে তাতে খাস ইউরোপীয়ান রক্তে ফের জাতীয়তাবাদ বর্ণবাদ জাগিয়ে তুলছে। ইউরোপে রাস্তা আটকে নামাজ পড়ার চেষ্টা মুসলিমদের পেশী শক্তির একটা মহড়া। এই মুসলিমদের সবাই ধার্মীক নয়। কিন্তু মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে তারা এখানে নামাজ পড়ার জন্য রাস্তা আটকে ফেলছে। এদের অনেকে ইউরোপে এসেছিলো আরব দেশগুলোর শরীয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। ব্যক্তি স্বাধীনতায় মোল্লাদের নাক গলানোর অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্ত্বেও ইউরোপ আমেরিকাতে এসে এখানকার কোন মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে রাস্তা অবরোধ করতে এদের বাধে না কারণ তারা প্যান ইসলামী চেতনা ছাড়া আধুনিক রাষ্ট্র চিন্তা, সেক্যুলারিজম, প্রগতিশীলতা এবং যুক্তিবাদীতার সঙ্গে পরিচিত ছিলো না। তাই সৌদি আরব পরিবর্তন হয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশ হলেই ভাবনায় চিন্তায় মধ্যযুগেই থেকে যাবে। মুসলিম সংখ্যাধিক্য দেশগুলোকে সচেতনভাবে সেক্যুলারাজিমকে গ্রহণ করতে হবে। একশ বছর এই চর্চার মধ্যে থেকে মুসলমানদের সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটতে পারে। নইলে আমাল হিজাজীর মত মুসলিম নারী শিল্পী প্যান্ট শার্ট পরে গান গাইলেও আদতে কোন লাভ নেই।