পদ্মবতি লেখাটিতে বেশ কয়েকটি সূক্ষ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।

শ্রদ্ধেয় Binayak Bandyopadhyay দা র লেখাটি পড়লাম (“সংবাদ প্রতিদিন” কাগজে প্রকাশিত)…….বেশ লাগল। লেখাটিতে বেশ কয়েকটি সূক্ষ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন দেখলাম (আমার মনে হল – এই আর কি)….প্রথমত, আপনি লিখলেন কেন সেই সময় আক্রান্ত রাজ্যের কিশোরী ও যুবতীদের গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে অন্য রাজ্যে প্রেরণ করা গেলনা। এই প্রসঙ্গে কিন্তু একটি কথা বলার আছে – ভারতের পঞ্চনদ র গণরাজ্যগুলি র মধ্যে কুল, জাতি ও জনপদ সংক্রান্ত রক্তাক্ত সংঘর্ষ দীর্ঘদিনের, সহস্রাব্দ প্রাচীন ও। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য র উত্থান র সময় মহামতি চাণক্য কেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। মহাক্ষত্রিয় রাজপুতদের মধ্যেও এই সমস্যা বিদ্যমান ছিল। সন্দেহ নেই, আর্য সনাতন হিন্দু রাষ্ট্রচিন্তা রাষ্ট্রকেই শ্রেষ্ঠতম প্রতিভূ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে – নমস্তে রাজ্যবৃক্ষায়ঃ সদগুণ্য প্রসাখিনে সভাদি চারুপুণ্যঃ ত্রিবর্গফলদায়িনে – সেক্ষেত্রে সমাজ র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আদি শঙ্করাচার্য র নেতৃত্বে। কিন্তু তার নেতৃত্বে ছিলেন সন্ন্যাসী সম্প্রদায়, সাংসারিক দিকে তা কখনো আসেনি। যদিও ডঃ বিনয় সরকার র একটি নিজস্ব বক্তব্য রয়েছে। তাঁর গবেষণালব্ধ “Positive Background of Hindu Sociology” গ্রন্থে মূল বক্তব্য, “ভারতবর্ষ ততখানি বস্তুনিষ্ঠ, ততখানি যুদ্ধপ্রিয়, ততখানি শক্তিযোগী, ততখানি সাম্রাজ্যবাদী যতখানি ইউরোপ। আবার ইউরোপ ততখানি নীতিনিষ্ঠ ও আধ্যাত্মিক বা ওই ধরণের আর কিছু যতখানি ভারতবর্ষ। সাধারণত প্রচার করা হয় ভারতবর্ষ অহিংসা র দেশ, কিন্তু আমার মতে তার হিংসানীতি জবরদস্ত, এবং যুদ্ধনিষ্ঠা, রাজ্যলিপ্সা ইত্যাদি চিজ ও অত্যন্ত ভীষণ”……….এবার আসা যাক আলোচ্য সিনেমাটিকে নিয়ে। আমার অন্তত মনে হয়না তাতে কামোত্ত আলাউদ্দিন খিলজীকে দেখানো হয়েছে একবার ও বরং তাকে glorify করা হয়েছে। এবং সেটি ই স্বাভাবিক। আকবর কে নিয়েও সিনেমা হয়েছে – তাতে কি একবার ও ইতিহাসে প্রসিদ্ধ “সাড়ে চুয়াত্তর” বিষয়টি দেখানো হয়েছে। না আর তা হবেও না। অথচ ১৫৬৮ সালে আকবর র চিতোর দখল র সাথে সেটি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। এবং তাবৎ হিন্দুসমাজ র কাছে তা এটি ঘৃণ্য যে সুদূর বাংলা তেও গোপন চিঠিতে এই সংখ্যাটি একসময় চিঠিপত্রতে দেখা যেত – অর্থাৎ প্রাপক ছাড়া অন্য যে ব্যক্তি এই গোপনীয় চিঠিটি খুলে পড়বে তার ভাগ্যে ওই সাড়ে চুয়াত্তর মণের নির্মম অভিশাপ নেমে আসবে। চিত্র দখল র পর আকবর র সৈন্যরা তার প্রমাণ হিসাবে তার সৈন্যরা অসংখ্য রাজপুত সৈন্যের মৃতদেহ থেকে সম্মানগ্রন্থি (যাকে আরবীতে জুনর বলে) খুলে নিয়ে এসে দেখায়। সেই সম্মানগ্রন্থির সম্মিলিত ওজন হয় সাড়ে চুয়াত্তর মণ। – এই সিনেমাটি তো আর শ্রী গিরিশ কাসারা ভল্লির “ঘটশ্রাদ্ধ” নয় যেখানে কার্যকারণ পুঙ্খনাপুঙ্খ ভাবে দেখানো হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এই সিনেমাটিও ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ধর্ম র একটি ritual/প্রথা র ওপরে ভিত্তি করে।

২০০৬ সালে একটি সিনেমা released হয়, “কাবুল এক্সপ্রেস” নামে। সেটি মধ্য প্রাচ্য র ওপর একটি adventure র ওপর নির্ধারিত। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও সেখানে ঘৃণ্য তাহারুশ সম্পর্কে টুঁ শব্দ করা হয়না অথচ এই ঘৃণ্য উৎসব টি ওই অঞ্চলে বিদ্যমান প্রায় গত ২৫ বছর ধরে। তাহলে কি আমরা হিন্দুরাই আজীবন শৈল্পিক গুণাবলীর শ্রেষ্ঠতা প্রকাশ হেতু compromise করে যাব? এই সিনেমাটি যদি দেখানো শেষ পর্যন্ত হয় তাহলে মকবুল ফিদা হুসেনের বিরুদ্ধে নগ্ন সরস্বতী আঁকার জন্য দেশজোড়া বিক্ষোভ প্রদর্শন ও futile হয়ে যায়। সেটিও তো একটি art র প্রকাশ ই ছিল। আর হুসেন র সঙ্গে কোন ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগ কখনো প্রমাণিত হয়নি। তাহলে? আমরা হিন্দুরা কি লাঞ্ছনা হেতু প্রতিবাদ, প্রতিরোধ থেকে সদা বঞ্চিত? এই বিষয় নিয়ে ভেবে দেখার সময় কি আসেনি এখন ও?

শেষ কথা, নোয়াখালী দাঙ্গার সেই বিখ্যাত চিঠিটিতে সাক্ষর করেছিলেন তিনজন সন্ন্যাসী – পূজ্যপাদ পুরীর শঙ্করাচার্য, রামকৃষ্ণ মিশন র প্রেসিডেন্ট মহারাজ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ র প্রেসিডেন্ট মহারাজ। তাঁদের সঙ্গে স্বাক্ষরকারী ছিলেন – মহামহোপাধ্যায় শ্রী দুর্গাচরণ সাংখ্যবেদান্ততীর্থ, মহামহোপাধ্যায় শ্রী হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ সিদ্ধান্তবিদ্যালয়, শ্রী গৌরী শাস্ত্রী, মহামহোপাধ্যায় শ্রী বেদব্রত সামশ্রমী, শ্রী শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ, শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শ্রী নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।