মিয়ানমারকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বলে বিষেদাগার করাটা বাংলাদেশীদের জন্য হাস্যকর।

১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে সৌদি বাদশা সালমান মরক্কোতে এক মাসের অবকাশ যাপন সেরে দেশে ফিরেছেন গত সাপ্তাহে। মরক্কোর পর্যটন খাত থেকে বার্ষিক যে রাজস্ব আসে বাদশা সালমানের এই সফর তার ১.৫ শতাংশ। এবছরও আমাদের মিডিয়াতে দেখেছি গ্রামের বসতবাড়ি বেচে সৌদিতে হজ করতে যাওয়া বৃদ্ধ সবার দোয়া চেয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে এরকম হজযাত্রীদের পকেট কেটেই বাদশা সালমানের বিলাস বহুল জীবনযাপন। সিরিয়ান ইরাকীদের সৌদি আরব আশ্রয় দেয়নি। আশ্রয় দূরে থাক অর্থ খাদ্য দিয়েও তাদের সাহায্য করেনি। জার্মানিতে ১ লক্ষ কুরআন অবশ্য পাঠানোর কথা বলেছিলো সিরিয়ান শরণার্থীদের জন্য। ক্ষুধার্ত্ব আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের জন্য সৌদি আরব বাংলাদেশে অনুরূপ লাখ খানেক কুরআন পাঠাতে চাইলে বাংলাদেশের আস্পর্দা হবে না সেটাকে অগ্রাহ্য করার। দেখা যাবে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী বিগলিত হাসি দিয়ে সেই কুরআন রিসিভ করছে…।

রোহিঙ্গাদের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করলে ওরা ভেসে যাবে। সৌদি বাদশাহকে সুন্নী মুসলমানরা ‘মুসলিম উম্মাহর’ অভিভাবক মনে করে। সেই উম্মাহর কেন্দ্র ভূমিতে বিপন্ন একটা জাতি কেন আশ্রয় পাবে না? ‘মুসলিম বিশ্ব’ বলতে মাঝে মাঝে কি একটা হাউ কাউ শুনতে পাই, ওআইসি, তারা কেউ কেন রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে ধনী মুসলিম দেশগুলোকে চাপ দেয় না। পশ্চিমা মানবতার কাছে কেন বারবার আর্জি জানানো হয়? কঠিন এই সময়গুলোতেই ‘মুসলিম উম্মাহ’ ‘মুসলিম জাতি’ জাতীয় অবাস্তব মনগড়া তত্ত্ব বালির বাধের মত ভেঙ্গে পড়ে।

মিয়ানমারকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বলে বিষেদাগার করাটা বাংলাদেশীদের জন্য হাস্যকর। তারা নিজেরা পাহাড়ে, সমতলে ভিন্ন ধর্মীয় এবং জাতিগত নিপীড়ণে সম্ভবত উপমহাদেশে চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমা, মারমা, সাওতালসহ আদিবাসী জনগোষ্ঠি দেশান্তরিত হয়ে আসছে নিয়মিত। অন সং সুচিকে ঘৃণা করার আগে আমাদের নেতানেত্রীদেরও সেটা যে সমান প্রাপ্য কথাটা মাথায় রাখবেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতীয়তাবাদী, ধর্মীয় নয়। কারণ সেখানে আরো মুসলিম সম্প্রদায় বাস করে যাদের উপর রোহিঙ্গাদের মত নিপীড়ন নেই। রোহিঙ্গারা মুসলমান বলেই তাদের উপর জুলুম হচ্ছে এটা বললে মিয়ানমারে অন্যান্য জাতির মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কেন বৈষম্য নেই তার অর্থ খুঁজতে হবে। রোহিঙ্গারা বহিরাগত, এরা বাঙালী, চট্টগ্রামের বাসিন্দা- এরকম অভিযোগ মিয়ানমারের শাসকদের। বৌদ্ধ ধর্ম অহিংসার কথা বলে তবু বার্মিজরা কি করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালায়- এইরকম সরলীকরণ করে গোটা জিনিসটা মুসলমান বৌদ্ধ সংঘর্ষ রূপ দিয়ে কাজটি আমরাই ভয়ংকরতর করে ফেলছি। গতকালই কক্সবাজারে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে যারা আশেপাশের বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালানোর প্লাণ করছিল।

নাফ নদীতে ভেসে যাওয়া শিশুটির মুখ কিছুতে ভুলতে পারছি না। ঐ মুখের কাছে এসে সমস্ত হিসেব নিকেষ ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের জন্য আলাদা নিয়ম থাকা উচিত। পৃথিবীর কোন কাঁটাতার সীমান্ত যেন তাদের বাঁচার অধিকারকে খর্ব করতে না পারে।

লেখক, শুধীপ্ত পাঠক।