কোলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মাওলানা নূরউর রহমান বরকতী একজন ‘সংখ্যালঘু’। এই সংখ্যালঘুত্ব সম্ভবত পাটিগণিতের সংখ্যা হিসেবে। নইলে আমাদের কনসেপ্টে ‘সংখ্যালঘু’ বলতে যে ভীত-সংকুচিত সম্প্রদায় বুঝায় তাতে বরকতীর বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। বরকতী ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্র বানানোর হুমকি দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত এরকম বক্তব্য রাখছে কিংবা রামুর কোন বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু এরকম হুমকি দিবে আমাদের সংখ্যালঘু ধারণায় তা বিশ্বাস যোগ্য নয়।
ভারতে সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলা বুদ্ধিজীবী-সুশীল শ্রেণী খুব সম্ভবত এবারো বরকতীকে সমর্থন জানাবে। তারা বরকতীর বক্তব্যকে জাস্টিফাই করবে দেশজুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের উত্থানকে। এরা জানেন না বরকতী বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক নয়, এটা সুস্পষ্ট ইসলামিকও। বরকতীরা ইউরোপের চরম অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ দেশে বাস করলেও তাদের ইসলামীক রাষ্ট্রের খোয়াব ত্যাগ করতে পারে না কারণ এটি কুরআন-হাদিস দ্বারা নির্ধারিত। ভারতে জেগে উঠা হিন্দুত্ববাদকে এখন তাকিয়া হিসেবে ব্যবহার করে বরকতী এ যাত্রা বর্তে যেতে পারে এই বলে যে, হিন্দুত্ববাদীদের জন্য দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এসব বলা ছাড়া তাদের আর উপায় কি? কিন্তু ইউরোপের মত ব্যক্তি স্বাধীনতা আর সেক্যুলার দেশে ইসলাম কায়েমের দুঃস্বপ্ন দেখার কারণ কি হতে পারে এটি ভেবে হয়রান হবেন যদি না ইসলামের রাজনৈতিক অভিলাষ সম্পর্কে আপনি না জানেন।
সংখ্যালঘু শব্দটির মর্মার্থ বেশ রাজনৈতিক ছল-চাতুরীতে ভরপুর। নইলে বন্দুক নিয়ে সংখ্যাগুরুদের উপর হামলা চালানো কোন সম্প্রদায়কে নিরহ বলা যায় না। ইউনিফর্মের উপর ধর্মীয় চিহৃ চাপানোর এগুয়েমিকে অসহায়ত্ব বুঝায় না। সংখ্যাগুরুদের রাস্তা আটকে প্রার্থণায় বসা, ধর্মীয় আইন চাই বলে চিল্লাচিল্লি করা নিরহ-ভীত কোন সম্প্রদায়কে বুঝায় না। সংখ্যায় কম হয়ে কোন লেখকের মাথার দাম হাকানো, কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশে বাধা দিয়ে সফল হওয়া, রাস্তায় নেমে গাড়ি পোড়ানো, এক ঘন্টার মধ্যে লক্ষ লক্ষ বিধর্মীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার মত উশকানি যারা দেয় তারা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের চিরচেনা ‘সংখ্যালঘু’ নয়। এটা সংখ্যাতত্বের বিষয় নয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যাগুরু কালোদের শোষণ করেছিলো শেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা। গোটা পৃথিবী জুড়ে ইংরেজরা উপনিবেশ চালিয়েছিলো সংখ্যালঘু হয়েই। তূর্কি-আফগান-আরব মুসলমানরা ‘কাফিরদের দেশে’ সংখ্যালঘু হয়েই এসছিলো। ইউরোপ আমেরিকা এশিয়াতে ধর্মীয় যে সহিংসতা চলছে তার সবই ঘটাচ্ছে বিশেষ ‘সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের’ লোকজন। রোজ বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দিরে যে পরিমাণ হামলার ঘটনা ঘটে পৃথিবীর কোথাও মুসলমানদের ছনের ঘরের তৈরি একটা মসজিদও যদি ভাঙ্গা হতো তাহলে মুসলমানদের হাউকাউতে টেকাই দায় হতো। ভারতের পরিত্যাক্ত বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনার পাশাপাশি বাংলাদেশে কম করে হলেও বিগত দশ বছরের মন্দির ভাঙ্গার পরিসংখ্যান সামনে রাখলে কোলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমামের মত দেশভাগ করার মত বক্তব্য রাখলে আপনাদের কাছে যৌক্তিক লাগবে? প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষে লড়ার কথা বলেও তারা দেশপ্রেমি আর বাংলাদেশী হিন্দুরা স্রেফ নির্যাতনের কথা প্রতিবেশী দেশের কাছে স্বীকার করেছিলো বলে তাদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ!…