শাহজাহান বাচ্চু বামাতীদের ভাষায় ‘নব্য নাস্তিক’ ছিলেন।

শাহজাহান বাচ্চু বামাতীদের ভাষায় ‘নব্য নাস্তিক’ ছিলেন। মানে যিনি জিহাদের জন্য ইসলামকেই দায়ী মনে করতেন। তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন কিন্তু বামাতী ছিলেন না। এসব কারণে তাকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ এমন কি ‘হিন্দুত্ববাদী’ও শুনতে হয়েছে ঐসব শুয়োরের দলের কাছে যারা বাবু-অভিজিৎ-নিলয়-অনন্ত খুন হবার পর নাস্তিকতার বামাতী আমাতী জামাতী সংজ্ঞা দেয়া শুরু করেছিলো…।

যখন ভারতে কালবুর্গী, গৌরী লঙ্কেশের খুন হলো তখন এইসব শুয়োরের দলের এক মিনিট দেরী হয়নি খুনিকে হিন্দুত্ববাদী বলতে। যদিও তাদের খুনিকে কেউ চিহিৃত করতে পারেনি। কিন্তু যে মানুষগুলো ভারতের হিন্দুত্ববাদের ঘোর বিরোধী, হিন্দু ধর্মের কঠর সামালোচক, শাস্ত্র ও প্রথার বিরোধী তাদের হত্যা করতে হিন্দু মৌলবাদীরাই সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে থাকবে। অথচ বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মের কঠর সমালোচনাকারী, ইসলামিস্ট মৌলবাদের প্রবল বিরোধী ব্লগারদের হত্যাকারীর সম্ভাব্য গ্রুপ হিসেবে ইসলামিস্টদের নাম বললেই ঐসকল শুয়োরের দল ফতোয়া নিয়ে আসবে- তদন্ত হবার আগেই কাউকে দায়ী করাটা ঠিক হবে না। তাই শাহজাহান বাচ্চুর খুনিকে বলতে হবে ‘আততায়ী’! চট করে যারা ইসলামি জঙ্গিদের নাম বলবে তারা ‘নব্য নাস্তিক’ ‘ইসলাম বিদ্বেষী’…।

ইসলামিস্ট জঙ্গি বলতে সবাই আনসারুল্লাহ জেএমবি আইএস বুঝেন। আমেরিকায় পড়তে গিয়ে নাফিস নামের একট যুবক এফবিআই’র হাতে ধরা পড়েছিলো বোমা হামলার প্লাণকারী হিসেবে। তার উদ্যোগটা ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ের। সে আনসারুল্লাহ বা আল কায়দার কোন সদস্য ছিলো না। কাজেই ঘাতকের কোন উর্দি থাকলেই সেটা বিশেষ বাহিনী, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ইত্যাদি পোষাকি পরিচয় দিয়ে একজন নাস্তিক এক্টিভিস্টের হত্যার ধর্মীয় কারণটিকে গৌণ্য করে দিবেন না। পাকিস্তানের গোয়েন্দা, সেনাবাহিনীর বড় একটি অংশ ইসলামিক টেরোরিস্ট। নাস্তিকের লেখা পড়ে অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিচয় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, হেফাজত, আইএস, আনসারুল্লাহ… যা-ই হোক না কেন, প্রতেক্যের অনুভূতি একটাই। তবু এইসব পরিচয় ধরে হত্যার কারণটিকে ভিন্নখাতে ফেলার ধান্দাবাজের অভাব কোনদিনই ছিলো না, এবারও থাকবে না।

শাজাহান বাচ্চু যা লিখতেন তার জন্য মৌলবাদী হবার প্রয়োজন নেই সাধারণ মুসলমানই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে…। না, শাহজাহান বাচ্চুকে এমন কথা তার নাম উল্লেখ করে কেউ বলেনি, কিন্তু অভিজিৎ-বাবু-নিলয় হত্যার পর আমাদের নাম উল্লেখ করে “ভদ্র ও প্রকৃত নাস্তিকরা” এসব ছড়িয়ে ছিলো। অর্থ্যাৎ ইসলাম সমালোচনাকারী নাস্তিকদের হত্যা করার জন্য নাস্তিক স্বয়ং দায়ী! শাহজাহান বাচ্চুর রক্ত এখন সেইসব শুয়োরের দলের হাতে লেগে আছে। শাহজাহান বাচ্চুর মত নাস্তিকদের জীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিবে না, এই রাষ্ট্রের প্রচন্ড ইসলামী অনুভূতি আছে, কেউ ইসলাম সমালোচনা করে খুন হলে তার দায় খোদ লেখকের নিজের! এরকম দেশ ও পরিবেশকে মেনে নিয়েই শাহজাহান বাচ্চু নিরলসভাবে ফেইসবুকে লিখে গেছেন। এই ভয়হীন সংশপ্তকের জন্য আমাদের তাই গর্ব করা ছাড়া ভিন্ন কোন পথ নেই…।

নাস্তিক লেখকদের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হলো। আমি কিছুতে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছি না বাচ্চু ভাই নেই! আর কোনদিন তিনি ‘শুভ সকাল’ বলে কোন পোস্ট লিখবেন না…।