তাদের বেঁচে থাকার তাগিদ আজ তাদেরকে মানুষ খুন করতে বাধ্য করছে।

এখন আমাদের প্রত্যেকের মনেই যে প্রশ্ন উঠে যে, বিশ্বের প্রায় সমস্ত জায়গাতেই মুসলিমরা খৃস্টানদের কেন খুন করে? মুসলিমরা মুসলিমদেরকেও কেন খুন করে? মুসলিমরা হিন্দুদের কেন খুন করে? কোন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তো ধর্মীয় কারণে মানুষ খুন করে না।
সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে, মায়ানমারে আমরা দেখতে পাই, মায়ানমারের লোকজন ধর্মান্তরকরণ একেবারেই পছন্দ করেন না। এর মানে হচ্ছে, আপনি যেকোন একটা ধর্ম পালন করতে পারেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি অন্য কাউকে আপনার ধর্মে কনভার্ট করার জন্য চেষ্টা করছেন না ততক্ষণ পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই। খৃষ্টানরা বহু আগেই এই শিক্ষা পেয়েছে। যদিও তারা ধর্মান্তরের চেষ্টা করে তবে খুব নীরবে, নিভৃতে। হিন্দুদের এ ধরণের লক্ষ্য কোন কালেই ছিল না, বৌদ্ধরাও এ কাজে উৎসাহী নয় কিন্তু মুসলিমরা? বেশ … বেশ… বেশ
রোহিঙ্গাদের বেলায় আমরা দেখতে পাই তারা আন্তঃধর্ম বিবাহের বেলায় অত্যন্ত রক্ষণশীল অবস্থান গ্রহণ করে। যদি কোন রোহিঙ্গা মেয়ে রোহিঙ্গার বাইরে অন্য কাউকে বিয়ে করে তবে তারা তাকে কঠিন শাস্তি দেয়, ক্ষেত্রবিশেষে মেরেও ফেলে। কিন্তু তারা একটি বৌদ্ধ মেয়েকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর করতে সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। সঙ্গত কারণেই এটা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগণের কাছে ভালো লাগবে না।
বার্মার খৃস্টান এবং হিন্দুরা যারা জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থানে অবস্থান করে তারা ঠিকই আর দশজনের মত সুন্দরভাবেই জীবন যাপন করছে। যদিও কিছু খৃস্টান জনগোষ্ঠী স্থানীয় বার্মিজদের বিরুদ্ধে দ্বন্দ-সংঘাতে জড়িত তবে তা নেহাতই জমি-জমা বা সম্পত্তি সঙ্ক্রান্ত। এ দ্বন্দ ধর্মীয় দ্বন্দ নয় মোটেও । এছাড়াও বার্মায় যেকোন ধর্মবিশ্বাসের উপর আঘাতকে রাষ্ট্রীয় অপরাধ হিসাবেই দেখা হয়। কেউ যদি এই অপরাধ করে তাহলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাকে জেলে যেতে হবে।
ইতিহাসবিদদের মতে, মায়ানমারে রোহিঙ্গারা যখন প্রথম গিয়েছিল তখন স্থানীয় লোকজন তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। শুরুর দিকে খুব একটা সমস্যা ছিল না। যবে থেকে রোহিঙ্গারা পঞ্চাশ কিংবা ষাটের দশকে অস্ত্র হাতে বিদ্রোহ শুরু করল তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হল। তবুও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষ ছাড়া এটা খুব বড় আকার ধারণ করে নাই, যতদিন না পর্যন্ত বছর পাঁচেক আগের একদিনে মুসলিমরা একটা কান্ড করল। সেদিন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম একত্রিত হয়ে রাজপথে মিছিল করে স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়, তাদেরকে খুন করে। যে কারণে বার্মার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমণ শুরু করে যারা তাদের ভাই-বোনদেরকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে ধরে ধরে খুন করছিলো। নিচে একটি ভিডিও দেয়া হল যা দেখলে বুঝা যাবে রাখাইন প্রদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের উপর হামলার জন্য মুসলিম রোহিঙ্গারা কিভাবে একত্রিত হয়েছিলো এবং কিভাবে এই হামলা পরিচালিত হয়।

কাজেই এটা বুঝতে হবে যে, বৌদ্ধরা মুসলিমদের খুন করছে না বরং স্থানীয় জনগণ বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করছে যে জনগণ নিজ দেশে জাতিগত নৃশংসতার স্বীকার। যদি বৌদ্ধরা ধর্মীয় কারণে খুন খারাবী করত তাহলে তারা খৃস্টানদেরকে উপরও হামলা করত। অন্তত খৃস্টানদের বিরুদ্ধে (যারা ধর্মীয় বিচারে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ) কোন না কোন বৈষম্য প্রদর্শন করত যা বার্মায় কখনোই ঘটে নাই।
এটাও বুঝতে হবে যে, এখানে কেউই ধর্ম যুদ্ধ করছে না। এটা একটি রাজনৈতিক যুদ্ধ যেখানে স্থানীয় জনগণ বিদেশ থেকে অভিবাসিত হয়ে আসা এক দখলদার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই জনগোষ্টী শুধু অবিশ্বাস্য হারে নিজেদের বংশ বিস্তারই করছে না, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জোর করে কিংবা কৌশলে নিজ ধর্মে ধর্মান্তর করার চেষ্টাও করছে। তারা রোহিঙ্গা পুরুষদের বৌদ্ধ নারীকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করছে কিন্তু নিজেদের নারীদের বেলায় কোন বৌদ্ধ পুরুষকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এই যুদ্ধটা রোহিঙ্গা মুসলিমরা স্থানীয় বৌদ্ধদের উপর আক্রমণ করার মাধ্যমে শুরু করেছে, যা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও ঘটছে। রোহিঙ্গারাই আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে মানুষ খুন করছে কিন্তু বৌদ্ধরা ধর্মের নামে এটা করতে পারে না কেননা তাদের ধর্ম বিশ্বাস তাদেরকে এই কাজ করতে উৎসাহিত করে না। কিন্তু তাদের বেঁচে থাকার তাগিদ আজ তাদেরকে মানুষ খুন করতে বাধ্য করছে।

বার্মার বৌদ্ধরা গত অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে দেখছে যে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা বহির্বিশ্বের, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে সহায়তা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কাজেই তারা তাদের সমস্যা সমাধানে এই অপ্রিয় পন্থাটাকে বেছে নিয়েছে। বৌদ্ধদের সামনে আজ একটাই প্রশ্ন, তারা কি মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে একের পর এক খুন হতে থাকবে নাকি নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে?