ইতি, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া হতভাগ্য পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙ্গালীরা।

মাননীয়া মুখ‍্যমন্ত্রী,
শুনেছি আপনার বাবা পূর্ববাংলা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এই বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন!!
সেটা কতো সালে সঠিকভাবে জানি না।
আপনি একজন উদ্বাস্তু বলেই অন‍্য উদ্বাস্তুদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। রোহিঙ্গাদের জন‍্যেও কাজ করছেন। কিন্তু ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে আপনি ভুলেগিয়েছেন কেন আপনার পরিবারের লোকেরা পূর্ববঙ্গ থেকে চলে এলো। আর কি ভাবে দিন যাপন করেছিল। আসুন আপনাকে পূর্বের কথা আবার মনে করিয়ে দিই…..

স্বাধীনতার পর প্রথম এক বছরে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষের বেশি। ১৯৪৮ র জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে গড়ে প্রতি মাসে এসেছিল প্রায় ১৪হাজার মানুষ। শুধু আগস্ট মাসেই শরণার্থী সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার সেপ্টম্বরে ১৮হাজার। অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ গড়ে প্রতিদিন এসেছিল ৩০০ জন মানুষ। কয়েকদিনের হিসাব ১০অক্টোবর ৪৭৪,১২ই অক্টোবর ২৩৮,১৩ ই অক্টোবর ৪৩৭,১৪ ই অক্টোবর ৪৩৬,১৫ই অক্টোবর ৩৩৭১। ১৯৫০ এর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ৪,৬০,৯৯০ জন বাঙালি হিন্দু পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে । ১৯৫০ র এপ্রিল থেকে সেপ্টম্বর গড়ে প্রতি মাসে এসেছিল ২৫ হাজার বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্ত মানুষ। এপ্রিল মাসের প্রথম কয়েকদিনের হিসাব এরকম ১এপ্রিল ৪ হাজার , ৩রা এপ্রিল ২৩৫০, ৪এপ্রিল ৩৬০০, ৫ই এপ্রিল ৪৪৮০,৭ই এপ্রিল ৪৫০০। অর্থাৎ দিনে গড়ে তিন থেকে চার হাজার বাঙালি হিন্দু চলে আসছিলেন এই সময় ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিসাব অনুসারে ১৯৪৮ র জুলাই পর্যন্ত ১১লক্ষ বাঙালি হিন্দু চলে এসেছিল পূর্ববঙ্গ থেকে । তাঁদের মধ্যে ৮.৫ লক্ষ শহর এবং গ্রামের মধ্যবিত্ত , ১.৫ লক্ষ কৃষিজীবী এবং ১ লক্ষ কারিগর শ্রেনীর মানুষ ।
১৯৪৯ র শেষে শিবিরে বাঙালি হিন্দু মানুষের.সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার তার মধ্যে ৭.৫ ছিল অনাথ নারী আর শিশু । ১৯৪৯ র অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মাত্র ২০হাজার বাঙালি হিন্দু মানুষ কে পুনবার্সন দেওয়া সম্ভব হয়েছিল । কৃষিজীবীদের জমি দেওয়া হয়েছিল ১৫ হাজার একর ।
চলে আসার পথেও চরম দুর্ভোগ এবং নানা ধরনের নির্যাতন চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছিল তাঁদের । লুঠপাট, লাঞ্ছনা , নারী অপহরণ , শ্লীলতাহানি সব ধরনের অত্যাচারবাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তু দের উপর হয়েছিল ।
বাংলার শব্দ ভান্ডারে এই সময় নতুন দুটি শব্দ সংযোজিত হলো। উদ্বাস্ত আর বাস্তুহারা । ইংরেজি রিফিউজি র সংক্ষিপ্ত রূপ করা হলো “রিফু”॥শহরের ফুটপাথে , স্টেশনের প্লাটফর্মের আশ্রয় জুটলো এই বাস্তুহারাদের । শিয়ালদা (দক্ষিণ )স্টেশনের প্লাটফর্ম ভরে গেল বাস্তুহারা বাঙালি হিন্দু মানুষের ভিড়ে ।
রাস্তায় ইটের উনুনে রান্না , খোলা জায়গায় মেয়েদের স্নান , চটের পর্দার আড়ালে রমনীর সন্তানপ্রসব ।
৭১ বছর পর উদ্বাস্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলেআসা বাঙালি হিন্দু আজ এই সব ঘটনা বেমালুম ভুলে গেছে।

মাননীয়া আপনি যদি এই উদ্বাস্তুদের সঙ্গে অবৈধভাবে প্রবেশকারী মুসলমানদের   এক আসনে বসান, তাহলে আপনার পূর্বপুরুষের আত্মা শান্তি পাবে না। আর কোটি কোটি উদ্বাস্তু পরিবার আপনাকে ক্ষমা করবে না।

ইতি,
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া হতভাগ্য পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙ্গালীরা।

(( সংগৃহিত ))