হিন্দু নির্যাতন: মিথ্যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে ইতিহাস ধ্বংস করার হয়েছে। কেন রঙ্গনাথানন্দজী বিতাড়িত হলেন এবং করাচী মঠ পােড়ানাে হলাে। তিনি ছিলেন দক্ষিণ ভারতের কেরালা প্রদেশের নামবুদ্বী ব্রাহ্মণ পরিবারভুক্ত। করাচী শহর এবং পাকিস্তানে সব শহর গুলিতে ছিল খাটা পায়খানা যার মলগুলি পরিষ্কার করে হিন্দু মেথররা বাইরে ফেলে দিত। এরা ছিল মাদ্রাজী। তথা দক্ষিণ ভারতীয়।
ঐ সময় হিন্দুহত্যা আরম্ভ হলে ঐ মেথররা টাকা তুলে দুটো জাহাজ ভাড়া করে করাচী থেকে মাদ্রাজ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। পাক সরকার দেখলাে স্বপরিবারে সব মেথর চলে গেলে মল ফেলবে কে? তখন বলপূর্বক জাহাজ দুটো পাক সরকার আটক করে রাখে এবং তাদের মাদ্রাজ যাত্রা বন্ধ করে দেয় এবং রটিয়ে দেওয়া হয় স্বামী রঙ্গনাথানন্দজীর পরামর্শে এই মেথররা পাকিস্তান ত্যাগ করছে ফল স্বরূপ মঠ ধ্বংস এবং অগ্নিসংযোেগ, ঐ সময় করাচী।
থেকে প্রচুর সিন্ধিরা বিমান যােগে ঢাকা এসে ঘােড়ার গাড়ী ভাড়া করে মিশনে উঠতাে, তাছাড়া রাত্রে মঠে মহিলাদের থাকা নিষিদ্ধ বলে, অনেক সিন্ধি পরিবারকে আমি ঢাকার মিশনের ভক্তদের বাড়ীতে থাকার ব্যবস্থা করে দিই। ২/৩ দিন থাকার পর তারা ট্রেনযােগে ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে ভারতে ঢুকেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ বিগত যৌবনা নারী এবং প্রেীঢ়। অর্থাৎ যুবতীরা অপহৃতা হয়েছেন এবং যুবকরা নিহত হয়েছেন।
এই সব ইতিহাস হিন্দুরা কোথাও লিপিবদ্ধ করেনি বরং ইতিহাস বিকৃত করেছে অথবা মিথ্যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে ইতিহাস ধ্বংস করেছে। অন্নদাশঙ্কর রায় তার বই “যুক্ত বঙ্গের স্মৃতি” পৃ. ১১২ তে লিখেছেন—“একদিন কুমিল্লার প্রসিদ্ধ উকীল ও নেতা কামিনী কুমার দত্ত ময়মনসিং এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন, তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি হেসে বলেন, যা পড়েছে বা শুনছে।
সব অতিরঞ্জিত। নােয়াখালীতে খুন হয়েছে শ আড়াই (২৫০), ধর্ষণের কেস খুবই কম, জোর করে যাদের মুসলমান করা হয়েছিল তারা এক দিন কি দুদিন বাদে। প্রায়শ্চিত্ত করে আবার হিন্দু হয়েছে মােল্লাদের কাছে এটা একটা নুতন অভিজ্ঞতা।” নােয়াখালীতে হিন্দু নিধনের অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি প্রাক্তন বিচারপতি এডওয়ার্ড স্কিপার সিমসন (ICS) লিখেছেন। এক অঞ্চলে ৩০০রও বেশি এবং অন্য এক অঞ্চলে ৪০০রও বেশি নিরীহ মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এই মিথ্যাবাদী উকিল বাবু বলেছে, “একদিন বা দুইদিন বাদে হিন্দুরা আবার প্রায়শ্চিত্ত করে হিন্দু হয়েছে। আমার প্রশ্ন এই গন্ডগােলের সময় কি প্রায়শ্চিত্ত করা সম্ভব? একজন ব্রাহ্মণ নেয়াখালী থেকে তার ভাইকে একপত্র লেখেন ‘আমরা সব কলমা পড়ে মুসলমান হয়েছি। অভ্যাস বসত চিঠির প্রথমে তিনি শ্রীশ্রী হরি সহায় লেখেন। পােস্ট অফিসে সেই চিঠি গেলে মুসলমানরা শ্রীশ্রী হরি মুছে দেয় এবং লেখার জন্য প্রচন্ড মারধর করেন।
১৯৪৬ সালের ডাইরেক্ট একশনের উপর সরকার যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন তার রিপাের্টের সমস্ত কপি ডঃ বিধান রায় পুড়িয়ে দেন। ১৯৫০ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী হিন্দু নিধনের শিকার হয়ে কলিকাতা আসার পর রােজ বৈকালে আমার মামা কেশব ঘােষের সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে যেতাম মামা ঐ পত্রিকার চিফ সাব এডিটার ছিলেন। বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা আমাকে ছেকে
ধরতেন। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুনিধনের সংবাদ জানতে আমি অনেক বর্বরতার সংবাদ দিয়েছি তারা নােট করে নিয়েছে কিন্তু কোন সংবাদই ছাপা হয়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম বিধান রায় আন অফিসিয়েল আদেশ জারি করেছে। পূঃ পাকিস্তানের কোন সংবাদ যাতে ছাপানাে না হয় ! এইত আমাদের চরিত্র। সত্য সেলুকাশ কি বিচিত্র এই দেশ। সত্য ইতিহাসও এদেশে লেখা চলবে না।
দেশভাগের একবুক জ্বালা নিয়ে এতদিন চুপচাপ বসে ছিলাম। হঠাৎ ১৯৯৯ সালের শীতের এক সন্ধ্যাবেলা দুই ভদ্রলােক এসে কলিং বেল বাজালাে। দরজা খুলে দেখি শ্রীঅজিত কুমার বিশ্বাস এবং ডঃ নরেন্দ্রলাল দত্ত বণিক। তাদেরকে আমি অনেক সভাসমিতিতে দেখেছি কিন্তু কোন কথাবার্তা হয়নি। এরপর ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ আমার অভিজ্ঞতার কিছু কথা বলার পর তারা বল্লেন আপনি এইসব লিখছেন না কেন?
আমি বল্লাম লিখলে কে ছাপাবে? মনে হলাে তারা আমায় পেট্রলটেঙ্ক-এ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারপর থেকে একটু একটু করে লিখে স্বস্তিকায় পাঠালাম এবং তারা ছাপতে আরম্ভ করলাে। ‘ভগবানের অশেষ কৃপায় এ পর্যন্ত আমার সাড়া জাগানাে কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে, তাছাড়া ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়ে অন্যান্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে তবুও মনে হয় আমি এক নিঃসঙ্গ পথিক, নিতান্তই একা। দেশে তথাকথিত সেকুলারইজমের হাওয়া বইছে।
এই ভারত পুনর্বার জাগ্রত হইবে এবং যে মহাতরঙ্গ এই কেন্দ্র হইতে সমুখিত হইয়াছে, মহাপ্লাবনের ন্যায় তাহা সমগ্র মানবজাতিকে উচ্ছ্বসিত করিয়া মুক্তিমুখে লইয়া যাইবে। ইহা আমাদের বিশ্বাস এবং শিষ্য পরম্পরাক্রমে প্রাণপনে ইহারই সাধনে আমরা কটিবদ্ধ।
প্রথম পক্ষে এই অতি প্রাচীন সভ্যতা সমাধানে সমস্ত প্রযত্নই বিফল হইয়া যাইবে। এই ভারতবর্ষ পুনরায় বালকত্বপ্রাপ্ত হইয়া সমস্ত পূর্বগৌরব বিস্মৃত হইয়া উন্নতির পথে বহুকালান্তরে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইবে। দ্বিতীয় কল্পে ভারতীয় সভ্যতার ও আৰ্যজাতির বিনাশ অতি শীঘ্রই সাধিত হইবে। কারণ, (যে কেহ হিন্দু ধর্ম হইতে বাহিরে যায়, আমরা যে কেবল তাহাকে হারাই তাহা নয়,
একটী শত্ৰু অধিক হয়) ঐ প্রকার স্বগৃহ-উচ্ছেদকারী শত্ৰদ্বারা মুসলমান অধিকারকালে যে মহা অকল্যান ব্যক্তির বা জাতির যে বিষয়ে প্রাণের ভিত্তি পরিস্থাপিত তাহা বিনষ্ট হইলে সে জাতিও নষ্ট হইয়া যায়। আর্যজাতির জীবন ধর্মভিত্তিতে উপস্থাপিত। তাহা নষ্ট হইয়া গেলে আৰ্যজাতির পতন অবশাম্ভাবী।
মুসলমান বা খ্রীষ্টানদিগকেও হিন্দু ধর্মে আনিবার বিশেষ উদ্যোগ করিতে হইবে। কিন্তু উপনয়নাদি সংস্কার কিছুদিনের জন্য তাহাদের মধ্যে হওয়ার আবশ্যক নাই।
এর পর থেকে পড়ুন..