হারাম: প্রতিভাকে যেখানে পাপ বলে মনে হয়, সেখানে আর যা হোক প্রতিভা সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা পাবেনা।

হারাম

হারাম: প্রতিভাকে যেখানে পাপ বলে মনে হয়, সেখানে আর যা হোক প্রতিভা সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা পাবেনা। মুসলমানদের মধ্যে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য, ফ্লিমমেকারসহ শিল্পকলার সব মধ্যমেই গুণি মানুষকে দেখা যায়। কিন্তু ইসলামে এসব কিছুই হারাম।

এ জন্য ইসলামে প্রবল অনুরাগ থাকলে মুসলিমদের পক্ষে “শিল্পী সত্ত্বা” অর্জন করা সম্ভবপর হয় না। একজন অঙ্কন শিল্পী যদি মগজে ধারন করে যে ছবি আঁকা হারাম এবং এজন্য পরকালে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে- তাহলে তার পক্ষে কেমন করে প্রকৃত শিল্পী হওয়া সম্ভব?

 

নিজের প্রতিভাকেই যেখানে পাপ বলে মনে হয় সেখানে সেই প্রতিভা সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন হতে পারে না। একজন অভিনয় শিল্পী যদি মনে করেন অভিনয় করাটা বিড়াট পাপের কাজ, পরকালে এজন্য তাকে দোজগে যেতে হবে- তিনি আর যাই হোক কখনোই “শিল্পী” হতে পারেন না। তাই মুসলিমদের মধ্যে প্রচুর অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, নৃত্য শিল্পী, চিলচ্চিত্র নির্মাতা থাকলেও তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক শেষ পর্যন্ত “শিল্পী” হতে পারেন।

ইসলাম এভাবেই একজন প্রতিভাবানকে তার সর্বচ্চো শক্তিকে অবদমিত করে রাখে। দুনিয়াতে বিদ্যমান অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম এখানেই সর্বাপেক্ষায় ক্ষতিকারক দিক। মানুষের সহজাত ক্ষমতাকে, অন্যান্য প্রাণী থেকে যে মনন ও সৃজনশীল ক্ষমতা মানুষকে পৃথক করে দিয়েছে সেই ক্ষমতাকে অস্বীকারের মধ্য দিয়ে ইসলাম তার দর্শনকে পৃথিবীবাসীর কাছে তুলে ধরেছে।

হারাম
হারাম

শুধুমাত্র জন্মসূত্রে মুসলমান হবার দুর্ভাগ্যের জন্য একজন মানুষ তার চিন্তাশীলতাকে ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যয় করতে দ্বিধান্বিত থাকে। দুনিয়ার অন্যসব ধর্মে হাজারটা অপশক্তি বিরাজ করলেও এই দিকগুলোতে কোন বিধি নিষেধ নেই। হিন্দুধর্মে তো নাচ ঈশ্বর-দেবতাকে সন্তুষ্ঠ করার একটা উপায়।

 

বেহুলা তো নেচে ইন্দ্রপুরীর মনজয় করতে চেয়েছে। ইহুদী-খ্রিস্টান ধর্মীয় সিনেমায় স্বয়ং যীশু-মুসাকে অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানো হয়। গির্জায় সঙ্গীতের মাধ্যমে ঈশ্বর আরাধনা করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীর আর কোন ধর্মের মানুষ ছবি আঁকা, অভিনয়, ভাস্কর্য গড়াসহ মানুষের ক্রিয়েটিভ সমস্ত অঙ্গনে কোন রকম ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় না।

সহি হাদিসে সঙ্গীত, ছবি আঁকাকে হারাম, শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে কোথাও এসবকে ইসলাম সম্মত বলে বিশ্বাস করা হয় না। দুনিয়ার কোন আলেম ছবি আঁকা, গান গাওয়া, অভিনয় করাকে জায়েজ বলেননি। শুধুমাত্র ব্লগে-ফেইসবুকে এক শ্রেণীর মোল্লা ইসলামকে ভদ্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য “কোরআনের কোথায় এসবকে হারাম করা হয়েছে দেখান” বলে এক ধরনের ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেন।

 

বাংলাদেশের গায়ক হায়দার আলী টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি কুরআনের কোথাও পাননি গান গাওয়া হারাম। এই হায়দার আলী মোচ চেঁচে যে সহি ইসলামী তরিকায় সুন্নতি দাড়ি রেখেছেন সেটা তিনি কুরআনের কোথায় পেয়েছেন? এসব তো কুরআনে বলা নেই!

ব্লগে আমরা এক ধরনের “অনলি কুরআন” পন্থি ইসলামিস্টদের সঙ্গে তর্ক করার সময় প্রশ্ন করতাম, নামাজ পড়ার যে রীতি, তারাবীর নামাজ, নামাজের রাকাত এসব কুরআনের কোথায় বলা আছে? হযরত মুহাম্মদের আয়েশা নামের যে একজন স্ত্রী আছেন এটা কুরআনের কোথায় বলা আছে? কুরআনের কোথায় বলা আছে নবী মুহাম্মদের বাবা-মার নাম? না, এসব কুরআনের কোথাও বলা নাই।

 

হাদিস ছাড়া তাই ইসলাম অচল। হায়দার আলীদের দুভাগ্য যে তারা মুসলমি ঘরে জন্ম নিয়েছেন। ইসলাম ধর্মের অনুরাগী হয়ে আজ তাই গান গাওয়ার সার্টিফিকেট নিতে কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টাতে হয়। সাবানাকে তাই শেষ বয়েসে নিজের অভিনয়ের জন্য মনোযন্ত্রণায় ভুগতে হয়। ইসলাম তার শিল্পী সত্তত্বাকেই শুধু হত্যা করেনি চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মুসলিমদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

চারুকলার অনেক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তারা ছবি আঁকাকে ইসলাম সম্মত নয় বলে বিশ্বাস করে। তাহলে জেনেশুনে কেন ছবি আঁকতে এসেছে তারা? এর কোন সদুত্তর তাদের কাছে নেই। একদিকে ছবি আঁকতে ভাল লাগে। অন্যদিকে ইসলাম ছবি আঁকাকে অনুমতি দেয় না। এই টানাপোড়েন তাদের “শিল্পী মানসে” বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে।

 

তবু মুসলিম পরিবার থেকে জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসানদের মত বড় শিল্পী জন্ম নিয়েছে কেমন করে সে প্রশ্ন জাগতে পারে। এর একটাই উত্তর তাঁরা জন্মসূত্রে মুসলিম হলেও আদৌ ইসলাম অনুসারী ছিলেন না। তাদের শিল্পী সত্ত্বার এতটাই বিড়াট ছিল যে সেখানে ইসলাম সুবিধা করতে পারেনি। তাদের মধ্যে ধর্ম চেতনা (হাদিস-কুরআন অনুসরণ) থাকলে আর যাই হোক আর্টিস হতে পারতেন না। এক সঙ্গে ইসলামে বিশ্বাসী ও শিল্পী মানস কোনদিনই  সম্ভব নয়। আরব্য দর্শন সুর নয় কেবল অসুরই জন্ম দিতে পারে।…

লেখক-মাসুদ পারভেজ- লন্ডন।

আরো পড়ুন….

Scroll to Top