শালিগ্রাম শিলা

কেন শালিগ্রাম শিলা পুজো করে হয় ?

কেন শালিগ্রাম শিলা পুজো করে হয় ? শালিগ্রাম বা শালগ্রাম শিলা (দেবনাগরী: शालग्राम शिला), হল নেপালের গণ্ডকী নদীর শাখা নদী কালি গণ্ডকীর তীর বা তীর থেকে সংগৃহীত একটি বিশেষ ধরনের পাথর।

‘শালিগ্রাম শিলা’ হিন্দুদের কাছে,বিশেষ করে যারা ‘বিষ্ণু উপাসক” তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এখন আর প্রতি ঘরে ঘরে ‘শালিগ্রাম শিলা ‘ থাকে না, এক কালে থাকতো।

শিলা,অর্থ্যাত পাথর। হিন্দুরা পাথর পুজো করে। শুনতে খটকা লাগে। হিন্দুরা কি সত্যিই ‘পাগোল না বুদ্ধিহীন’ যে পাথর পুজো করবে ? সেই পাথরকে আবার ‘নারায়ন’ জ্ঞানে ভক্তি করে। কিমাশ্চর্যম !! অহিন্দুদের বা ভিন্ন ধর্মীদের তো হিন্দুদের এই নিয়ে নানা শ্লেষ এবং অবজ্ঞা করার ক্ষান্তি নেই।

শালিগ্রাম শিলার মধ্যে এক ধরনের ‘জীবাশ্ম’ আছে। ভুতাত্বিকেরা বলেন সেই জীবাশ্ব ‘এমোনাইট জীবাশ্ম’। ‘কেফালোপড মোলাষ্কাস’ নামে একটি এক কোষী জীব , যা এখন আর পৃথিবীতে নেই, সেই মোলাষ্কাসের জীবাশ্ম এই শালিগ্রাম শিলার মধ্যে বিদ্যমান। শালিগ্রাম শিলা ভাঙ্গলে সেই জীবাশ্ম দেখা যায়।

কয়েক মিলিয়ন বছর আগে যখন হিমালয় তৈরী হয় তখন Tethys-sea এর গভীর তল থেকে এই এক কোষী জীব উদ্ভুত হয়। তারা পৃথিবীর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টির আদিতে এই পৃথিবী একটি জ্বলন্ত অগ্নি গোলক ছিলো। সেই অগ্নি গোলক থেকে প্রানীর বাসপোযোগী হতে প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন বছর লেগেছে।

সেই অগ্নি গোলক ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করে। মহাকাশের বৃষ্টি থেকে জলের উৎপত্তি হলো। তারপর তৈরী হলো পাথর, পাথর থেকে মাটি। সেই পৃথিবীতে ছিলো শুধু কার্বন-ডাই অক্সাইড, ছিলো না অক্সিজেন। ঠিক সেই সন্ধিক্ষনে এসে গেলো ঐ এক কোষী জীব ‘কেফালোপোড মোলাষ্কাস’।

  1. মোদী কীভাবে বিশ্বজুড়ে ভারতের মর্যাদা বাড়িয়ে চলেছেন ?
  2. আফগানিস্তানের ইতিহাস: আফগানিস্তানের ইতিহাসের ১৩ আশ্চর্যজনক তথ্য যা, জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
  3. মুসলিম মেয়েরা কি হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর অনুশোচনা করে যেমন অনেক হিন্দু মেয়েরা আফসোস করে এবং ভালোবাসার জন্য ইসলাম গ্রহণ করার পর কষ্ট পায়?

 

এই এক কোষী জীব কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ছাড়তে শুরু করলো। সেই অক্সিজেন থেকে প্রানীর নিঃশ্বাস নেবার ব্যাবস্থা হলো, পৃথিবীতে প্রানের সঞ্চার হলো। প্রানীর সৃষ্টি হতেই এই কেফালোপোড মোলাষ্কাস মরে গেলো। তাদের জীবাশ্ম রয়ে গেলো হিমালয়ের কন্দরে পাথর খন্ডের মধ্যে।

অবাক কান্ড , এই জীবাশ্ম শুধু মাত্র কালী-গন্ডকী নদীর কুলেই পাওয়া যায়, পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। কালী গন্ডকী নেপালের গন্ডকী অঞ্চল দিয়ে বয়ে গিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।

এই পাথর খন্ড, যাকে বলা হয় ‘শালিগ্রাম শিলা’ সেই জীবাশ্ম থেকে এক মহাজাগতিক শক্তি নিঃশ্মারিত হয়ে উপাসকের শরীরে যায়। শালিগ্রাম শিলা সাধারনত তুলসীর সংগে এক সংগে পুজিত হন। তুলসীর সংক্রামক বীজানু নিরোধক শক্তি প্রাচীন হিন্দুদের জানা ছিলো।

এখন কথা হচ্ছে, যে এক কোষী জীব আমাদের অক্সিজেন দিলো, প্রানের সঞ্চার করলো, যাদের জীবাশ্ম উপাসকের প্রান ধারন থেকে শুরু করে প্রানে শক্তি জোগায়, সেই জীবাশ্ম যে পাথরে আছে তাকে ‘নারায়ন শিলা’ রুপে ভক্তি এবং পুজো করা কি অন্যায় ????? নারায়ন তো প্রানীকে রক্ষা করেন এবং লালন পালন করেন, তাই নয় কি ?????

ঐতিহাসিকভাবে, পূজায় শালগ্রাম শীলার ব্যবহার আদি শঙ্করের সময়কালের রচনার মাধ্যমে পাওয়া যায়। তার ভাষ্য মতে, বিশেষ করে, তৈত্তিরীয় উপনিষদের ১.৬.১ পদ এবং ব্রহ্মসূত্রের ১.৩.১৪ পদ পরামর্শ দেয় যে বিষ্ণুর উপাসনায় শালগ্রাম শীলার ব্যবহার হচ্ছে সুপরিচিত হিন্দুচর্চা। একটি ভাল সংখ্যক মিথ্যা শালগ্রাম শীলাও প্রচলিত রয়েছে।

‘শালগ্রাম শিলা’ পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় পূজিত। তিরুবনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি, গাড়োয়াল অঞ্চলের বদ্রীনাথ মন্দির ও উদুপীর কৃষ্ণ মঠের শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি এবং বৃন্দাবনের স্বয়ম্ভু রাধারমণ মন্দিরও শালগ্রাম থেকে তৈরি বলে বিশ্বাস করা হয়।

লেখক- ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

আর পড়ুন……