মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত কি বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে

মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত কি বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে?

মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতে সম্পদ লুট:  মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত কি বাংলাদেশে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে? বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে এমন ভাবেই এখন শিখানো হচ্ছে ,

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতে এসে ভারতীয় বাহিনী তিরিশ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে? এমন কি মুক্তিযুদ্ধেদের সন্তানেরা এই কথা এখন বলছে। যদিও কোন মুক্তিযুদ্ধা এমন ঘৃণ্য কথার শুনলে সে প্রচণ্ড ক্রদ্ধ হন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তি বাহিনী যখন দেশের ৯৫-৯৯ শতাংশ অঞ্চল মুক্ত করে ফেলেছিল, ঠিক তখন ৩রা ডিসেম্বর ভারতীয় আরদালী বাহিনী লুটপাট করার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ জুড়ে নজির বিহীন লুটপাট চালিয়েছিলো। ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ- যার মূল্য ওই সময় ছিলো ২৭ হাজার কোটি টাকা, তার সবই ভারতীয় আরদালী বাহিনী ১৫টি বিশাল জাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে যায়। অথচ সেই অস্ত্রের মালিকানা ছিলো পুরোপুরি বাংলাদেশের। সুত্র বাংলাদেশে জন্ম নিয়া  পাকিস্তানীদের নতুন প্রজন্ম ।

আমিও শুনেছি। পড়েছিও। কোথায়?
জামাতী যত সাইট আছে, ইসলামিক সাইট। চিঙ্কু বামদের আখড়ায়। ঘটনা কি সত্যি?

যুদ্ধ শেষের পরই চিত্রটা বদলে যায় বুঝলে। পাকিস্তানের জন্মই তো হয়েছিলো হিন্দু ভারত বিরোধীতা করে। পাকিস্তানের ২৩ বছর এদেশের জনগণও পাকিস্তান রাষ্ট্রের শিক্ষা নিয়েছে। যুদ্ধের সময় সর্বহারা সিরাজ শিকদার বরিশালে ভারতীয় সহায়তা আর অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ করার ঘোষণার কথা শোনা যায়, কাদের সিদ্দিকী, রৌমারির সুবেদার আফতাবও অনুরূপ জেদ দেখান।

ভারতকে মেনে নিতে কোথায় যেন তাদের সমস্যা ছিলো। তো যুদ্ধের পর মেজর জলিল মিত্র বাহিনী নিয়ে কিছু অভিযোগ করেন। কিছু একটা হয়েছিলো সেটির প্রমাণ পাওয়া যায় যখন ইন্দিরা গান্ধি সেনা প্রধান ম্যাম মানেক শ-কে টেলিফোন করে ভারতীয় বাহিনীর সম্পর্কে কিছু বাড়িতে অভিযান চালানোর বিষয়ে জানতে চান। সেনা প্রধান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেন, এরকম কোন ঘটনাই ঘটছে না আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। এই বিষয়টি আমার উপর ছেড়ে দিন, আপনি আপনার কাজ করেন।

কোথা থেকে পেলে এই তথ্য?
কুলদীপ নায়ারের লেখা আত্মজীবনী ‘-বিয়ন্ড দ্য লাইনস: অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’-তে আছে। শোনে, ৩০ হাজার কোটি টাকা ভারতীয় বাহিনী লুট করেছে তখন বাংলাদেশে আছেটা কি? ব্যাংকের টাকা তো পাকিস্তানীরা যাবার আগে পরাজয় নিশ্চিত হতে নষ্ট করে গেছে।

কলকারখানা বলতে এদেশে কি ছিলো? আর অস্ত্র? পাকিস্তানীদের ফেলে দেয়া অস্ত্র দিয়ে কি করবে ভারত? তার দাম ৩০ হাজার কোটি টাকা? তাহলে মুক্তিবাহনীর হাতে অস্ত্রগুলো যে ভারত ফ্রি দিলো তার দাম কত? যদি ভারত লুট করতেই বাংলাদেশকে সহায়তা করবে তাহল ইন্দিরা গান্ধি সেনাবাহিনীকে ফোন করে তার

ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কেন?
আরে তুমি জানো না, প্রচুর ট্যাংক ভারত চুরি করে নিয়ে গেছে। এই ব্যাপারে কুলদীপ নায়ার একটি দারুণ তথ্য জানাচ্ছেন। তিনি লিখেছেন, ৭২ সালেই ইন্দরা গান্ধির পরিকল্পনা মন্ত্রী বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে যেন কোন ট্যাংক রাখা না হয়। ভারতের আশংকা ছিলো বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে। পরে কিন্তু ভারতীয় আশংকাই সত্য হলো। মিশরের আনোয়ার সাদাতের পাঠানো ট্যাংক দিয়ে সেনাবাহিনী ৭৫ সালে ক্যু চালিয়েছিলো।

কিন্তু তাতে কি ভারতীয় লুটপাটের ঘটনা মিথ্যে হয়ে যায়?

দেখে কোন ইতিহাসই চেপে যাওয়া সঠিক নয়। তাহলেই সেই জায়গা থেকে গুজবই ইতিহাস হয়ে উঠে। যেমন ধরো ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইট বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ইয়াহিয়া খান কৌফিয়ত দিয়েছিলো মার্চ মাসে বাঙালীরা দাঙ্গা করে ৩০০ বিহারীকে হত্যা করেছিলো সেটি সামাল দিতে এই অপারেশন চালাতে হয়।

চিন্তা করে দেখো, ৭১ সালের মার্চে ৩০০ বিহারীকে হত্যা করার মত দাঙ্গা হয়েছিলো এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইতিহাসে গোপন করে রাখা হয়। তার দরকার তো নেই। এরকম গোপন থেকেই শর্মিলা বসুর মত মানুষরা গুজব মিথ্যা অসত্যকে ইতিহাস বানিয়ে ফেলে। যেমন শর্মিলা বসু বিহারীদের উপর যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিলো সেগুলোকে মুক্তিযুদ্ধে জেনোসাইট হিসেবে তুলে ধরেছে। এমনকি এসব কারণে তিনি এরকম কথা লিখেছেন, হিন্দুরা দেশছেড়ে ভারতে শরণার্থী হতে পালিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে। আর তাদের নিরাপদে ভারত পালাতে সহায়তা করেছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এরকম ইতিহাসও বাজারে আছে বন্ধু!

যা বলো ভাই, যা রটে কিছুটা তো বটেই!

দেখো যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনীর কোন ফোর্স কোথাও বাড়িঘরে কি পাকিস্তানী সেনা ছাউনিতে কিছু হাতিয়ে নেয়ার কোন ঘটনাই ঘটেনি সেরকম বলা যাবে না। কিন্তু সেনা প্রধান ও মিসেস গান্ধির কথা তো শুনলে।

কিন্তু আমাদের এখানে প্রচার করা হয়েছে ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধ করে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। তাছাড়া জামাতীদের এইসব অপপ্রচার করে কি তুমি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করছো না?

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা তখন ঢাকায়, তারা কি নিজের দেশকে লুট হতে দেখতে জানবাজী রেখে যুদ্ধ করেছিলো? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণ যে ভূমিকা রেখেছিলো তার দ্বিতীয় নজির কি তুমি বিশ্বে দেখাতে পারবে?

সেটা স্বীকার করছি। তবে ভাই কৃতজ্ঞতার একটা শেষ আছে। আকবর আলী খান কি বলেছে দেখেছো? তিনি বলেছেন বাংলাদেশের উচিত হবে না চিরকাল স্বাধীনতার জন্য ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা।

তিনি ভুল বলেছেন। যুদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য চিরকালই কৃতজ্ঞতা  থাকতে হবে। কিন্তু বাণিজ্য সার্বভৌমত্ব বা অন্য যে কোন কারণে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক কে মানা করেছে? কিন্তু কৃতজ্ঞতার এক্সপিরি ডেট যারা ঠিক করে দেন তারা কৃতঘ্ন।

আর কৃতজ্ঞতা স্বীকার? তাজউদ্দিন আহমেদ ভারত যেদিন বাংলাদেশকে ৬ ডিসেম্বর তারিখ স্বীকৃতি দিলো সেদিন বেতার ভাষণে ইন্দিরা গান্ধিকে ধন্যবাদ জানালেন। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পন অনুষ্ঠানে ঢাকা স্টিডিয়ামের ভাষণে ইন্দিরা গান্ধি ও তার দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানালেন।

এর বাইরে সেই ভদ্রমহিলার বন্ধুত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি স্মৃতির মিনার কি তৈরি করেছো? ভারতীয় বাহিনীর যে ষোলশো সৈন্য এদেশে যুদ্ধ করতে এসে প্রাণ দিলো তাদের স্মরণে কোন ফলক মিনার কি তৈরি করেছে কেউ? আশ্চর্য ব্যাপার কি, কোলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডের যে বাড়িটি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে কাজ করতে ভারত সরকার দিয়েছিলো সেই বাড়িটি ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে বার বার জাদুঘর করতে তাগাদা দিলেও বাংলাদেশ তফর থেকে কোন সাড়া মিলেনি। যে জাতি নিজেদের গৌররের স্মৃতিই মুছে ফেলে তারা অন্যদের কিভাবে সন্মান জানাবে বলো তো?

হুম, তবু… যা বলো ভাই, তুমি একটু ভারত সাপোর্টার! ভারত মাতা কি জয়! হেঃ হেঃ হেঃ…
ঠিক বলেছো ভাই, এখন এই কারণেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস এলেই মনে হয় যুদ্ধের প্রতিপক্ষ কে? পাকিস্তান, না ভারত?

না ভাই তুমি ভারতের দালাল! আমরা সব বুঝি। আমিও তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। কিন্তু ভারতকে দুই চোক্ষে দেখতে পারি না! 

সেটা না দেখতে পারো। কোন সমস্যা নাই। তবে ইতিহাস সম্পর্কে সত্যনিষ্ঠ হও। ইতিহাস কেন ভাই, টাইম মেশিন দিয়ে সেসময় নিয়ে গেলেও আমরা হিন্দু ভারত এদের সহ্য করতে পারব না হেঃ হেঃ হেঃ…

এখানে বিষয় উল্লেখ করার দরকার

১। ব্রিটিশদের ২০০ বছর এবং পাকিস্তানে ২৪ বছরের শাসনের পর বাংলাদেশের মানুষ ২০০০ সাল পযন্ত খাবার না আসলে দেশের মানুষ না খেয়ে থাকত।

২। অরক্ষিত বাংলাদেশকে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ১৯৬৫, ১৯৭১ এমন কি বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর  ১৯৭৫ সেনা ঢুকিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখত না?

৩। মাত্র নয় মাসে যে দেশের ১ কোটি সরনাতিদের আশ্রয় দেওয় সে দেশে কি এমন নিয়ে যাওয়া সম্পদ থাকতে পারে?

-সুষুপ্ত পাঠক

আর পড়ুন…..