ভারত-মিয়ানমার মিলিটারি টাইজ, বনাম চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব। চীন ও বাংলাদেশের সামরিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার বন্ধুত্বের বাগানে, ভালোবাসার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে- টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, তামাবিল থেকে বেনাপোল। মন মাতানো এই বাহারি ফুলের সুগন্ধ ও সৌন্দর্যে চাপা পড়ে গেছে, উচ্চ সুদের কঠিন শর্ত। ফলশ্রুতিতে এই ফুল থেকে কি জাতীয় ফল উৎপন্ন হবে- সুমিষ্ট ফল, নাকি বিষফল- সেটা পরিষ্কার নয়। তবে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সহ বহু দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, চীনের সঙ্গে ঐ দেশগুলোর গভীর প্রণয়- ঋণের বোঝার অবৈধ গর্ভসঞ্চার করেছে, পরিণয়ের পরিতৃপ্তি তথা উন্নয়নের অনাবিল সুবাতাস, এখন পর্যন্ত কোথাও প্রবাহিত হয় নি।
রোহিঙ্গা সঙ্কট উদ্ভুত দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, বাংলাদেশের কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বি মিয়ানমার- সামরিক সাহায্য প্রাপ্তির আশায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের দিকে। ভারত ও মিয়ানমার, উভয় দেশই অভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ। বন্ধুপ্রতিম ভারতের কাছ থেকে একটি কিলোক্লাস সাবমেরিন উপহার হিসেবে পেতে যাচ্ছে মিয়ানমার। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, যৌথ মহড়া এবং প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সাবমেরিনটি মিয়ানমারকে উপহার দিতে যাচ্ছে ভারত – যার ফলে মিয়ানমার নৌবাহিনী সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
আইএনএস সিধুবীর নামক এই কিলো ক্লাস সাবমেরিনটি ১৯৮০ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে কিনেছিল ভারত। অন্ধ্রপ্রদেশে বঙ্গোপসাগরের তীরে হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ড লিমিটেডের কারখানায় সাবমেরিনটির আধুনিকায়নের কাজ চলছে। মিয়ানমার নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতীয় নিজস্ব প্রযুক্তিতে এটিকে সজ্জিত করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সাবমেরিনটি মিয়ানমারের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে, সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন শিপইয়ার্ডটির কর্তৃপক্ষ।
সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি নিয়ে- কয়েক মাস ধরে ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের ফলাফল হিসেবে,ভারতের কাছ থেকে এই সাবমেরিন পেতে যাচ্ছে মিয়ানমার। উল্লেখ্য, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যকার সামরিক সম্পর্ক সক্রিয়ভাবে বেগবান হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। মিয়ানমারের উপর চীনের প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যে, ওই বছর ভারত অস্ত্র ক্রয়ের জন্য মিয়ানমারকে পাঁচশ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করে।
২০১৭ সালে চীনের কাছ থেকে দু’টি সাবমেরিন ক্রয় করে মিয়ানমারের প্রতিবেশী বাংলাদেশ। পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে মিয়ানমার ৩৮ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতের সঙ্গে। মিয়ানমারের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে, অ্যাকোয়াস্টিক ড্রোন, ন্যাভাল সোনারসহ অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে ভারত।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারত ২০১৯ সালে মিয়ানমারকে সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেডো ‘শেরেনে’- সরবরাহ করে। উন্নত প্রযুক্তির এই ভারতীয় টর্পেডোগুলোর ওজন ২২০ কেজি, দৈর্ঘ্য ২৭৫০ মিলিমিটার এবং ব্যাস ৩২৪ মিলিমিটার। এগুলোতে উচ্চমাত্রার ৫০ কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক ভর্তি থাকে এবং এগুলোর কার্যকরী দূরত্ব সাত কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৫৪০ মিটার পর্যন্ত।
ভারত মিয়ানমারকে যে কিলো-ক্লাস সাবমেরিনটি উপহার দিতে যাচ্ছে, সেই সাবমেরিনের দৈর্ঘ্য ৭৪ মিটার এবং প্রস্থ ৯ মিটার। কিলো ক্লাস এই সাবমেরিনটি মূলত ব্যবহৃত হয়ে থাকে প্রতিপক্ষের সাবমেরিন ও জাহাজ ধ্বংস করার জন্য। ৪,৪০০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল এবং বৈদুতিক ইঞ্জিন রয়েছে এই সাবমেরিনটির এবং এর ওজন ৩,০০০ টন। জলের উপর ভেসে চলার সময় ঘন্টায় এর সর্বোচ্চ গতি ১২-১৭ নটিক্যাল মাইল এবং এবং ডুবন্ত অবস্থায় সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১৮-২৫ নটিক্যাল মাইল।
ডুবন্ত অবস্থায় সাবমেরিনটি ৬ কিমি গতিবেগে ৭০০ কিমি অবধি একটানা ভ্রমণ করতে পারে। এই সাবমেরিনটি ৫২ জন মানুষ বহন করা সহ, ৮টি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, ১৮ টি টপের্ডো, ১৪ টি আন্ডার ওয়াটার মাইন বহন করতে পারে। এটি থ্রিএম-৫৪ সুপার ক্রুস মিসাইল সজ্জিত এবং টর্পেডো-৫৩ সজ্জিত। চীনের কাছ থেকে কেনা বাংলাদেশের সাবমেরিনের তুলনায় এই সাবমেরিনের ওজন প্রায় ১৩৯১ টন বেশি এবং উন্নততর প্রযুক্তি সমৃদ্ধ।
সামরিকভাবে মিয়ানমারকে অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ভারত ―
১) মিয়ানমার রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক ফাইটার বিমান সু-৩০ কিনবে। এই ফাইটারের জন্য মিয়ানমারের পাইলটদের সব ধরনের ট্রেনিং দিচ্ছে ভারত। এছাড়াও ভারত মায়ানমারের এই জঙ্গি বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে সার্বিক সহায়তা দেবে এবং স্পেয়ার পার্টস সরবরাহ করবে।
২) মিয়ানমারকে কিলোক্লাস সাবমেরিনও ক্রু’দের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।
৩) ভারতের প্রযুক্তিতে তৈরি স্বল্প পাল্লার টর্পেডো সিস্টেম মিয়ানমারের কাছে বিক্রি করবে।
৪) মিয়ানমারের MI-35 হেলিকপ্টারের ক্রু’দের ট্রেনিং ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে ভারত।
৫) ভারতীয় সোনার সিস্টেম, ওয়ার গেমিং সফটওয়্যার প্রভৃতি সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
৬) আর্টিলারি, মর্টার, নাইট ভিশন সিস্টেম, কমিউনিকেশন সরঞ্জাম, রাইফেল মিয়ানমারকে সরবরাহ করবে ভারত।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে তুলনামূলক সামরিক শক্তি –
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে মিয়ানমার৷ ১৩৮ দেশের তালিকায় ৩৫ নাম্বারে মিয়ানমার, আর বাংলাদেশ রয়েছে ৪৬ নাম্বারে৷ এই তালিকায় প্রথম পাঁচটি দেশের অবস্থান যথাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান।
সক্রিয় সেনাসদস্য
মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন গুণ হলেও, সেনাসদস্যের সংখ্যায় মিয়ানমার অনেক এগিয়ে৷ মিয়ানমারের সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা মোট ৪ লাখ ৬ হাজার, বাংলাদেশের রয়েছে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য৷ দুই দেশের কারোরই রিজার্ভ সেনাসদস্য নেই৷
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা বাজেটের দিক থেকে অবশ্য মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট ৩৮০ কোটি ডলারের৷
এয়ারক্রাফট
এখানেও এগিয়ে মিয়ানমার৷ বাংলাদেশের ১৭৭টির বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ২৭৬টি এয়ারক্রাফট।
নৌবহর
মিয়ানমার নৌশক্তিতেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ মিয়ানমারের রয়েছে ১৮৭টি জাহাজ, বাংলাদেশের রয়েছে ১১২টি৷
যুদ্ধবিমান
বাংলাদেশের কমব্যাট এয়ারক্রাফট বা যুদ্ধবিমান রয়েছে ৪৪টি, মিয়ানমারের রয়েছে ৫৯টি৷
হেলিকপ্টার
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৭টি হেলিকপ্টারের বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ৮৬টি হেলিকপ্টার৷
ট্যাঙ্ক
বাংলাদেশের কমব্যাট ট্যাঙ্ক রয়েছে ২৭৬টি, মিয়ানমারের রয়েছে ৪৩৪টি৷
সাঁজোয়া যান
বাংলাদেশের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ১২৩০টি, মিয়ানমারের ১৩০০টি৷
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারিতে অনেক এগিয়ে মিয়ানমার৷ দেশটির স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারির সংখ্যা ১০৮টি, বাংলাদেশের মাত্র ১৮টি৷
ফিল্ড আর্টিলারি
ফিল্ড আর্টিলারিতেও মিয়ানমার কয়েকগুণ এগিয়ে আছে৷ মিয়ানমারের ১৬১২টি ফিল্ড আর্টিলারির বিপরীতে বাংলাদেশের রয়েছে কেবল ৪১৯টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
রকেট প্রজেক্টর
বাংলাদেশের ৭২টি রকেট প্রজেক্টরের বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ৮৪টি রকেট প্রজেক্টর৷
সাবমেরিন
সাবমেরিনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের একটি সাবমেরিনের বদলে বাংলাদেশের রয়েছে দুটি৷
বিমানবাহী রণতরী
বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনো দেশেরই বিমানবাহী রণতরী নেই৷
ডেস্ট্রয়ার
দেশ দুটির কোনোটিরই ডেস্ট্রয়ার নেই৷
ফ্রিগেট
এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ৷ দেশটির রয়েছে আটটি ফ্রিগেট, অন্যদিকে মিয়ানমারের রয়েছে পাঁচটি৷
করভেট
বাংলাদেশের করভেটের সংখ্যা মিয়ানমারের দ্বিগুণ৷ মিয়ানমারের তিনটির বদলে বাংলাদেশের আছে ছয়টি৷
উপকূলে পেট্রোল
উপকূলে টহল দেয়ার জন্য মিয়ানমারের রয়েছে ১১৭টি নৌযান৷ বাংলাদেশের রয়েছে ৩০টি৷
বিমানবন্দর
মিয়ানমারে ৬৪টি বিমানবন্দর রয়েছে৷ বাংলাদেশে রয়েছে ১৮টি৷
নৌবন্দর ও টার্মিনাল
এক্ষেত্রে দুদেশেরই সমান সমান৷ দুই দেশেরই তিনটি নৌবন্দর ও টার্মিনাল রয়েছে৷
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ খাদ্যঘাটতির দেশ। পক্ষান্তরে মিয়ানমার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাছাড়া সেখানে বিশাল চাষযোগ্য জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের লুঙ্গি খুলে দিয়েছিলো।
আইএস জিহাদীরা কি সুরা নিসার ২৪ নং আয়াত বাস্তবায়ন করেছে?
‘হিন্দু’ নোবেল পেয়েছে এরকম লিস্ট করা হলে আমরা এই বঙ্গবাসীরাই নির্ঘাৎ তাকে সাম্প্রদায়িক বলব।
আরো একবার প্রমাণ হলো বাংলার নিজস্ব্ যা তার সবই ‘হিন্দুয়ানী’!