পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতি: পশ্চিমবঙ্গে আগামীতে বিজেপি হবে প্রধান দল। তাদের প্রতিদ্বন্দি হবে ভবিষ্যতে জন্ম নেয়া কোন মুসলিম পার্টি। আমি মনে করি না ভারতের বামপন্থিরা, সেক্যুলার, লিবারালরা ভোটের এই পরাজয়কে উপলদ্ধি করে তাদের ভ্রান্ত রাজনীতি বদলাবে।
বামপন্থি বুদ্ধিজীবীদের লেখা বক্তব্য জনগণের মাঝে ভিন্ন ম্যাসেজ পৌঁছে দিয়েছিলো। অরুন্ধতির লেখা পড়লে যে কোন ভারতীয় এমনটা মনে করতে পারে- ভারত ছোট ছোট কয়েকটা ভাগ হয়ে মুসলিম স্টেট হয়ে যাবে যদি ইনারা ক্ষমতা হাতে পেয়ে বসেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবিশ্বাস্য সাফল্য এসেছে মমতা ব্যানার্জীর রাজনীতির কারণে, এখানে বিজেপিকে কিছু করতে হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন তৃণমূল গুন্ডাদের গুন্ডামি ঠেকাতে বামরা ভূমিকা রাখেনি রেখেছে বিজেপি- এটাই ছিলো বিজেপির কৃতজ্ঞতার ভোট প্রাপ্তি। সারা ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের গণজোয়ারকে মাথায় নিন। সাধারণ মানুষ রাজনীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামায়। নৌকা মার্কা পাস করলে বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাবে- এই ব্যাপক প্রচারণায় বাংলাদেশের মানুষ ৯১ সালে বিএনপিকে গণজোয়ার এনে দিয়েছিলো।
সাধারণ মানুষ মু্খে বলে চাল-ডাল নিরাপত্তা ছাড়া তারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। সত্যি কথা হচ্ছে, রাজনীতি নিয়ে ভাবা তাদের বিনোদনের প্রধান উৎস। ভাত-কাপড়ের নিরাপত্তার চাইতে এইসব খেটেখাওয়া মানুষ ‘দেশের নিরাপত্তা’ ও ‘ধর্ম রক্ষার’ কথা আগে ভাবে! ভারতের সেক্যুলাররা পাকিস্তানের বন্ধু, তারা মুসলিম মৌলবাদীদের সুযোগ করে দিবে,
ভারত ভেঙ্গে আবার কয়েকটা মুসলিম দেশ হবে… এটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে হিন্দুত্ববাদে আস্থা রাখতে সাহায্য করেছে। পশ্চিমবঙ্গে আগামীতে বিজেপি হবে প্রধান দল। তাদের প্রতিদ্বন্দি হবে ভবিষ্যতে জন্ম নেয়া কোন মুসলিম পার্টি। এটি আগামী ১০-১৫ বছরের আগাম একটি ধারণার কথা বললাম।
পশ্চিমবঙ্গ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চুড়ান্ত ঘৃণ্য রূপ নিবে সামনে। এই ঘৃণ্য রাজনীতি ও হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক ঘৃণায় অবিশ্বাসে রূপ নেয়ার জন্য দায়ী মমতা ব্যানার্জি। এই মহিলা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে টেনে এনেছেন বেহুদা কারণেই। বিসর্জনকে পিছিয়ে দিয়েছেন মহরমের তাজিয়া মিছিলের জন্য।
অথচ অতিতে এই তাজিয়া মিছিল ও বিসর্জন একই সঙ্গে ঘটেছিলো কোন সমস্যা ছাড়াই। সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু- মানুষের মাঝে এইরকম ভাবনা মমতা ব্যানার্জীর রাজনীতির কারণেই জেগে উঠেছে। ৩০ ভাগ উর্দুভাষী মুসলমানদের জন্য যখন ‘মুসলিম লীগ’ গঠন হবে
তখন তৃণমূল কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস- এই ত্রয়ের মৃত্যু পশ্চিমবঙ্গে কেউ ঠেকাতে পারবে না। পশ্চমবঙ্গে গেরুয়া উত্থানের জন্য মততার নাম অতি সহজে মুখে নিতে পারলেও বাংলাদেশের ইসলামিক জিহাদীদের উত্থানের জন্য যে মহিলা দায়ী, তার নাম মুখে নিলে বাড়ি এসে বিশেষ বাহিনী তুলে নিয়ে যাবে।
কথাটা বলার অর্থ হচ্ছে, ভারতে গণতন্ত্র বাংলাদেশ থেকে ১০০০ বছর এগিয়ে। বাংলাদেশে এক সময় ভোটাভুটি থাকলেও এখন সেটা উঠে গেছে। এখন তাহাজ্জুতের নামাজ পরেই বাক্স ভরে ফেলা হয়। ভারতের রাজনীতিবিদদের ভোটে হেরে পরাজয় স্বীকার করে নেয়া দেখে যে কোন বাংলাদেশী বিস্মিত হয়।
কারণ এখানে ভোটের পর কারচুপির অভিযোগে এক মাস পর্যন্ত সহিংস আন্দোলন চলে। তাই বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা ভারতকে গালি দেয়ার আগে একবার আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখবেন।
সব মিলিয়ে আমি হতাশ। ভারতীয় সেক্যুলারদের ইসলাম তোষণ (মুসলিম তোষণ নয়) নিয়ে বহুবার লিখেছি। তিন তালাক, ইসলামিক পারিবারিক আইনের পক্ষে তাদের পক্ষালম্বণ, ইসলামিক জিহাদের আড়াল করে উদোর পিন্ডি ভুদোর ঘাড়ে চাপানো, কাস্মিরে জইশ-ই মুহাম্মদের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ না করার যত কুর্তীতি ছিলো সবটাই ভোটে প্রভাব ফেলেছে।
ভারত ‘হিন্দুত্ববাদী’ হয়ে উঠুক এটি এই উপমহাদেশের জন্য অশনি সংকেত। ভারতকে সেক্যুলার থাকতে হবে। সেটা শুধু কাগজে কলমে নয়- ভারতের সমাজে তার প্রতিফলন ঘটতে হবে। ভারতের এই প্রভাব উপমহাদেশের অপরাপর রাষ্ট্রগুলোর সেক্যুলার লিবারালদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।
উপমহাদেশের দুই ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রনায়করা ভারতের সেক্যুলার চরিত্রের কারণে চাপে থাকবে তাদের সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা বাস্তবায়নে। গত ৫ বছরে ভারতে হিন্দুবাদীরা যে পরিমাণ গন্ডগোল করেছে গরুর মাংস নিয়ে, গো-মুত্র নিযে যতখানি কুৎসিত রাজনীতি করেছে, মুসলিমদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে যতখানি তোড়জোর করেছিলো,
এবার নির্বাচনে বিজয়ের পর তার মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ভারতের মহান সেক্যুরার সমাজ ব্যবস্থা ধসে পড়বে। এরকম আশংকা নিয়ে ভারতের নির্বাচনের ফল গ্রহণ করতে হয়েছে। ভারতের জনগণ অবশ্য বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মত ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মেলান না।
মুসলিমদের যেহেতু ধর্মীয় রাজনীতি ধর্মের অংশ, সেরকমটা ভারতের হিন্দুদের কোন প্রক্টিস নেই। তারা মন্দিরে পুজা দিবে, হাজারটা কুসংস্কার মানবে কিন্তু রাষ্ট্রকে হিন্দু হতে হবে, ৯০ ভাগ হিন্দুর দেশে মনুর আইন চাই- এরকম কোন দর্শন দ্বারা হিন্দুরা পরিচালিত নয়। কাজেই মোদী যদি চরমমাত্রায় ভারতে সাম্প্রদায়িক চরিত্র আনতে চায় তাহলে তার এই ভোটাররাই বেঁকে বসবে।
লেখক-অভিরুপ বন্দ্যোপাধ্যায়- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
আরো পড়ুন….
- পতঞ্জলির যোগসূত্র: পতঞ্জলি কি সেই সুপ্রাচীন কালেই মনোবিজ্ঞান চর্চার পথটি উম্মোচন করলেন না?
- তবে কি প্রাচীন ভারতেই বিমানের আবিষ্কার ।-দুরর্ম
- পৃথেবীতে প্রথার অন্ধ থাবাই বার,বার সভ্যতার অগ্রগতি ব্যাহত।-দুরর্ম
- জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান মেঘনাদ সাহা FRS, মেঘনাদ সাহা বাঙ্গালীর বিজ্ঞান জগতের এক উজ্জ্বল…