সরস্বতী পূজা.

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে কিছু কথা, জীবন যা শেখায় না, শিখতে হয়।-দুর্মর

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে কিছু কথা, জীবন যা শেখায় না, শিখতে হয়। অনলাইনে ও অফলাইনে মা সরস্বতীর প্রতিমা তৈরীর শ্লীলতা-অশ্লীলতা নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই।

এর কারন হিসেবে বলা হচ্ছে যে অনেকেই এমন ধরনের প্রতিমা তৈরী করছেন বা করাচ্ছেন যা প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিতে একদম ই শোভনীয় নয়। সে প্রসঙ্গেই শ্লীলতার কথাটি উঠে আসছে।
পবিত্র ঋগ্বেদে সকলকে পোশাকে,কর্মে,বাক্যে শ্লীলতা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।কিন্তু কোন পোশাক শ্লীল বা অশ্লীল তা নির্ধারন করা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
একজন পাশ্চাত্য দেশের মানুষের কাছে পোশাকের শ্লীলতার সঙ্গা একরূপ যা একজন মধ্য এশিয়ার মানুষের সাথে মিলবেনা,আবার ভারতীয় উপমহাদেশের এ সম্পর্কিত ধারণা আবার আরও আলাদা।তাহলে শ্লীল পোশাক বলতে আমরা কি বুঝব?

সরস্বতীপূজা

এ প্রসঙ্গে মহাভারতের বিখ্যাত একটি কথা আমরা উদাহরণ হিসেবে টেনে আনতে পারি।ধর্ম-অধর্ম আমরা কিভাবে আলাদা করব? শ্রীরামচন্দ্রের কাছে সত্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ছিল আর শ্রীকৃষ্ণের কাছে ন্যায়বিচার ই শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মহাভারতে ধর্মের একটি সঙ্গা তাই নির্ধারিত হয়েছে এমনভাবে,
“যে আচরণটি কেউ তোমার সাথে করলে তুমি কষ্ট পেতে,তোমার মনে হত তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে সেই আচরণ তুমি অন্যের সাথে করলে তাই হবে অধর্ম।আর এর বিপরীত কার্যটি হবে ধর্ম।”
এর মাধ্যমেই আমরা জনতে পারি সরস্বতীপূজায় শ্লীল সরস্বতী প্রতিমা বলতে আমরা কি বুঝব।আপনি ঠিক যে ধরনের পোশাকে আপনার শ্রদ্ধেয় মাতাকে দেখতে পছন্দ করবেন,স্বস্তিবোধ করবেন ঠিক সেই পোশাকেই যদি আপনি মা সরস্বতীর প্রতিমা বানান তাহলে তাই হবে ধর্ম।
এখন ধরুন আপনি সারাজীবন আপনার মাকে চিরাচরিত ভারতীয়/বাঙালী নারীরূপে শ্রদ্ধাভক্তি করে এসেছেন,কিন্তু সরস্বতীপূজা আসলেই আপনি হলিউড/বলিউড নায়িকাদের মত মায়ের প্রতিমা বানাতে চান।তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি একজন অধার্মিক এবং ভণ্ড।কেননা আপনি নিজের বেলায় একরকম আর মা সরস্বতীর বেলায় অন্যরকম আচরণ করছেন।
যা আপনি নিজের মায়ের বেলায় সইতে পারবেন না তা আপনি যে দেবীকে মা বলে ডাকছেন তার বেলায় কেন আরোপ করবেন? এটা কি ধরনের ভণ্ডামি?

সরস্বতীপূজা

পয়গম্বর আর দিগম্বর শব্দ দুটি শুনতে কাছাকাছি হলেও এর অর্থ কিন্তু একদম ই আলাদা।পয়গম্বর অর্থ হল মেসেঞ্জার,যিনি স্রষ্টা থেকে প্রতিদিন মেসেজ এনে এনে দেন।এটা আব্রাহামিক ধারণা, বৈদিক সভ্যতায় এর কোন স্থান নেই।

অপরদিকে দিগম্বর অর্থ হল নগ্ন বা আকাশের মত বিস্তৃত যে,যার কোন বাঁধন নেই এমন।যেমন কোন যোগী,পূণ্যাত্মা ব্যাক্তি।ইনারা মেসেঞ্জার নন,ইনারা সংসারে থেকেও সংসারের সকল বন্ধন থেকে অম্বরের ন্যায় মুক্ত।

ইনারা মেসেজ আনেন না,ইনারা নিজেই হন শিক্ষক।ইনারা আদেশ দেন না যে “আসমানের উপর বসে থাকা তিনি এই আদেশ দিয়েছেন,এটাই করতে হবে নাহলে অনন্তকাল দোজখে তেলে ভাজা করা হবে।

” ইনারা আমাদের উপদেশ দেন,শিক্ষা দেন,কিছু চাপিয়ে দেন না।কিন্তু চাপিয়ে দেয়া হয়নি বলেই সেই স্বাধীনতাকে নিজের বিকৃত চরিত্র প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা অন্যায়।বৈদিক সভ্যতার শিক্ষা এই যে আপনি যা নিজের বেলায় হজম করতে পারেন না তা অন্যের বেলায় করার অধিকার আপনার নেই।

আপনি নিজের মা,বোনকে উপদেশ দিবেন অমুক পোশাক না পড়তে,অমুক সময় পর বাইরে না যেতে আর হিন্দু সমাজ যে দেবীকে মায়ের মত সম্বোধন করে তার প্রতিমা আপনি সাজাবেন ঠিক তার উল্টোভাবে এটা অধর্ম। আর এই ধরনের লোকেরাই, “আপনাদের নজর খারাপ,আপনারা সবকিছু নেগেটিভভাবে দেখেন কেন” এসব বলে নিজেদের অধর্মকে ঢাকতে চায়।

আগে নিজের জীবনে নিজের আপনজনের উপর এই পোশাক প্রয়োগ করে দেখান।দেখাতে পারলে তারপর নাহয় আপনি মায়ের প্রতিমাও এভাবে গড়বেন। আর নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে না পারলে সমাজের সকল হিন্দুকে এসব প্রতিমা বানিয়ে লজ্জিত করবেন না।

সাবধান,হিন্দু সমাজ কিন্তু ধীরে ধীরে জেগে উঠছে,এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মার কিন্তু একটাও মাটিতে পড়বেনা!

বসন্ত পঞ্চমীতে পরমাত্মা সকলের জ্ঞান অর্জনের সামর্থ্য দান করবেন এই প্রার্থনা রইল।

বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক

 

আরো পড়ুন….