রাধা কি কৃষ্ণের সম্পর্কে মামী ছিল না ? উত্তর চাই !! — Mufassil Islam
(Requested Post : Request by- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।)
মুফাস্সিলের জন্য এটা বাঁশের ঝাড়ের তৃতীয় কিস্তি। এর আগে তার জন্য ২টা পোস্ট লিখেছি। আমার পোস্টের জবাব কেউ যুক্তিসঙ্গতভাবে পোস্ট লিখে দেবে, সেই আশা আমি করি না, এই আশা মুফাস্সিলের কাছেও করি না। কিন্তু এই মহাপণ্ডিত তার মল মূত্র ত্যাগ করে যেভাবে হিন্দু সমাজকে দূষিত করার চেষ্টা করছে, সেগুলো তো কাউকে না কাউকে পরিষ্কার করতেই হবে, তাই অনেকটা স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব আমি কাঁধে তুলে নিয়েছি, কারণ হিন্দু সমাজটা তো আমার।
যা হোক, শুরুতেই দেখে নিন, মুফাস্সিলের সেই মল-মূত্রগুলো-
“রাধা কি কৃষ্ণের সম্পর্কে মামী ছিল না ? উত্তর চাই !!
Dear Hindu Friends,
Is it true or false ? I want a clear, honest and unequivocal answer !! No gymnastics please !!
Radha was Krishna’s maternal aunt ( ie: Mami ). Is this not illicit relationship? And he had sexual relationship with her. Krishna is married to Rukmani the daughter of King Rukmangad. Radha was married to Krishnas uncle. Krishna who abandons his lawfully wedded wife Rukmini and seduces Radha wife of another man and lives with her in sin without remorse.
– Mufassil Islam”
এই কমেন্টে মুফাস্সিল প্রথমেই বলেছে, রাধা কি কৃষ্ণের সম্পর্কে মামী ছিল না ? উত্তর চাই !! অর্থাৎ রাধা যে কৃষ্ণের মামী ছিলো, সে ব্যাপারে মুফাস্সিল কনফার্ম। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করার দরকার কী ? প্রশ্নের শেষে সে আবার বলেছে, উত্তর চাই। এর মানে হলো, মুফাস্সিলের হিসেবে যেহেতু রাধা, কৃষ্ণের মামী ছিলো এবং কৃষ্ণ, মামীর সাথে অনৈতিক প্রেমে জড়িয়েছিলো, সেহেতু হিন্দুরা এর উত্তরে হ্যাঁ সূচক জবাব দিতে যেন বাধ্য হয় এবং তারা ধর্মীয়ভাবে হেয় হয়। ‘উত্তর চাই’ লিখার পর সে আবার ২টা বিস্ময়সূচক চিহ্ন দিয়েছে, বিস্ময়সূচক চিহ্ন অবাক হওয়া বোঝাতে ব্যবহার হয়, আমি তো বুঝলাম না এখানে অবাক হওয়ার কী আছে। এর আগের পোস্টে আমি প্রমান করে দিয়েছিলাম যে, মুফাস্সিল একটা অনুচ্ছেদও বাংলায় শুদ্ধ করে লিখতে পারে না, কিন্তু এখানে দেখছি একটা লাইনও তার শুদ্ধ করে লিখার ক্ষমতা তার নাই। বিরাম চিহ্নের ব্যবহার না জেনে ইচ্ছে মতো বাক্যের শেষে একটি নয়, দুটো বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে!
এরপর সে শুরু করেছে, Dear Hindu Friends ব’লে। এটা অবশ্য ঠিক কাজ করেছে, কারণ বাঙ্গালি হয়েও বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে লিখতে না পারলে ইংরেজি লিখাই ভালো। যেহেতু মুফাস্সিল বর্তমানে পশ্চিমা ইংরেজি দেশে থাকে, সেহেতু সে ইংরেজিটা ভালো এবং শুদ্ধভাবে লিখতে পারে বলে আশা করছি।
এরপর সে লিখেছে, Is it true or false ? I want a clear, honest and unequivocal answer !! No gymnastics please !!
এর বাংলা হলো- এটা কি সত্য না মিথ্যা ? আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে চাই, চাই সত্য ও দ্ব্যর্থহীন উত্তর, কোনো মোচড়া-মুচড়ি নয়, প্লিজ।
এটা কি সত্য না মিথ্যা ? এই প্রশ্ন দ্বারা মুফাস্সিল বোঝাচ্ছে ব্যাপারটা সে পরিষ্কারভাবে জানে না। তাই সে পরিষ্কারভাবে বিষয়টা জানতে চাচ্ছে। এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে বিষয় নিয়ে পরিষ্কার ধারনা নেই, সেই বিষয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করতে গেছেন কেনো ? আগে পড়াশুনা করে বিষয়টি জানুন, তারপর মন্তব্য করুন।
কিন্তু মুফাস্সিল যে বিষয়টার বিকৃত ব্যাখ্যা জানে সেটা বোঝা যায় তার কমেন্টের পরের লাইনেই; কারণ, সে লিখেছে- Radha was Krishna’s maternal aunt ( ie: Mami ). Is this not illicit relationship? And he had sexual relationship with her. ( রাধা ছিলো কৃষ্ণের মামী। এটা কি অবৈধ সম্পর্ক নয় ? এবং রাধার সাথে কৃষ্ণের যৌন সম্পর্ক ছিলো)
আপনি যদি জানেন ই যে- রাধা, কৃষ্ণের মামী; তাহলে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার জন্য আবার হিন্দু বন্ধুদের কাছে প্রশ্ন করলেন কেনো ? প্রশ্নের মধ্যে আপনি মোচড়া-মুচড়ি করবেন, আর অন্যদের বলবেন, উত্তর দেওয়ার সময় যেন কেউ মোচড়া-মুচড়ি না করে! আপনি ঠিক করে বলুন তো- আপনি পুরুষ, না নারী ? না, এই দুয়ের মধ্যে অন্য কিছু ? আপনি এটাও বলেছেন যে, রাধার সাথে কৃষ্ণের যৌন সম্পর্ক ছিলো। রাধার সাথে কৃষ্ণের যৌনসম্পর্ক ছিলো কিনা, সেটা পরে দেখাচ্ছি, তা্র আগে দেখাই, রাধা কৃষ্ণের মামী কিনা ?
আপনারা জানেন, মামীর স্বামী হলো মামা, আর সেই মামা হলো মায়ের ভাই। মুফাস্সিল যেহেতু বলছে যে- রাধা, কৃষ্ণের মামী; তাহলে রাধার স্বামীকে হতে হবে কৃষ্ণের মায়ের কোনো ভাই। এখন দেখা যাক রাধার স্বামী বলে যাকে বলা হয় সেই আয়ান ঘোষ, প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণের মায়ের ভাই কিনা ?
কৃষ্ণের মা ছিলো দুইজন। জন্মদাত্রী দেবকী, আর পালক যশোদা। দেবকীর ভাই কংস, যাকে কৃষ্ণ নিজে হত্যা করে। কংসের যেহেতু অন্য কোনো ভাই ছিলো না, সেহেতু এই দিক থেকে কৃষ্ণের অন্য কোনো মামা থাকা সম্ভব নয়। বাকি রইলো যশোদা; কথিত রাধার কথিত স্বামী আয়ান ঘোষ যে যশোদার ভাই, সেই ব্যাপারে, শ্রীমদ্ভাগবত, যেটা শ্রীকৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী এবং মহাভারত, যাতে কৃষ্ণের জীবনের অনেক কাহিনী আছে, এই দুটো গ্রন্থে কোনো তথ্য আছে ?
না, নেই।
তাহলে আপনি কিভাবে বলছেন যে- রাধা, কৃষ্ণের মামী ?
সংস্কৃত ভাগবত এবং মূল মহাভারতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কোনো উল্লেখ নেই। হিন্দু ধর্মকে সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংস করার জন্য ভারতে মুসলিম দুঃশাসন শুরু হওয়ার পর, বহু পুরাণ রচয়িতা বেদব্যাসের নাম ব্যবহার করে রচনা করা করা হয় ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ এবং তাতে প্রথম রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের আবির্ভাব ঘটানো হয়। মুসলমানদের এই কৌশল বুঝতে না পেরে, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের কাহিনী অবলম্বন ক’রে পরে জয়দেব সংস্কৃতে লিখে “গীত গোবিন্দ” এবং বড়ু চণ্ডীদাস বাংলায় লিখে “শ্রীকৃষ্ণীর্তন কাব্য” এবং তারপর চৈতন্যদেব এর আগে পরে লিখা হয় বৈষ্ণব পদাবলী। এই কাব্যগুলোর কারণে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম হিন্দুদের মাথায় শিকড় গেড়ে বসে।
এই ষড়যন্ত্র যে কত গভীর ছিলো, এবার তার কিছু প্রমান দিই। মুসলমানদের উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দুধর্মের প্রধান পুরুষ কৃষ্ণের চরিত্রকে খারাপ দেখিয়ে হিন্দু ধর্মকে ধ্বংস করে দেওয়া। এই জন্য তারা রাধাকে আবিষ্কার করে এবং রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম লীলা দেখায়। কিন্ত এটা নরম্যাল প্রেম হলে চলবে না, হতে হবে পরকীয়া প্রেম, তা্ই রাধাকে সাধারণ কোনো নারী বানানো হয় না, বানানো হয় অন্যের স্ত্রী। এতেও তাদের সাধ মিটে না, কৃষ্ণকে বানাতে হবে আরও লম্পট, সেজন্য রাধাকে-কৃষ্ণের মামী বানিয়ে প্রেমটাকেই বানানো হয় অনৈতিক, অবৈধ। এখানেও তারা থেমে থাকে নি, কৃষ্ণকে চুড়ান্ত লম্পট বানানোর জন্য তারা এর সাথে জুড়ে দেয় যৌনতা; হ্যাঁ, কৃষ্ণের চরিত্র এমনই- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে; আমার কথা বিশ্বাস না হলে এই কাব্যগুলো পড়ে দেখবেন, এডাল্ট স্টোরি অর্থাৎ চটিগল্প পড়ার ফিলিংস পাবেন।
এই সব কাব্যের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে মুফাস্সিল, তার সিদ্ধান্তে এসেছে এবং রাধাকে কৃষ্ণের মামী বিবেচনা করে তার মন্তব্য পেশ করেছে! এখন একে আপনি কী বলবেন ?
রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কে যা বলা হয়, তা যে হান্ড্রেড পার্সেন্ট মিথ্যা, তার প্রমান স্বরূপ একটি মাত্র ক্লু দিই। প্রচলিত মত অনুসারে, রাধার সাথে কৃষ্ণ প্রেম করেছে যৌবনকালে এবং তা বৃন্দাবনে। কিন্তু ভাগবত ও মহাভারতের কাহিনী সাক্ষী দিচ্ছে যে, ১০ বছর ২ মাস বয়সে কৃষ্ণ, কংসকে হত্যা করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় যায় এবং তারপর যায় দ্বারকায় এবং তারপর কৃষ্ণ কোনোদিন বৃন্দাবনে যায় ই নি, তাহলে যুবক কৃষ্ণের সাথে যুবতী রাধার প্রেম হলো কখন, কোথায় ? রাধা, কৃষ্ণের মামী এবং রাধার সাথে কৃষ্ণের যৌনতা, এসব তো অনেক পরের বিষয়। মুফাস্সিলকে বলছি, আপনাকে যদি বলা হয়, আপনি এই মূহুর্তে পশ্চিমের কোনো দেশে বাস করে সশরীরে বাংলাদেশে থাকা কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করছেন এবং তার সাথে বিছানায় শুচ্ছেন; এটা যেমন অবাস্তব, তেমনি দ্বারকার কৃষ্ণ এবং বৃন্দাবনের রাধার সাথে প্রেমও অবাস্তব। আর যেখানে প্রেমই নেই, সেখানে যৌনতা কি সম্ভব ? আপনার কমনসেন্স কী বলে ? অবশ্য আপনার কমনসেন্স আছে কি না, সে ব্যাপারে আমার যথষ্ট সন্দেহ আছে; কারণ, একটা কমেন্টে আপনি বলেছেন- ব্রহ্মা, শ্মশানে, মৃতদেহের সাথে সেক্স করে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে, মৃত মানুষও বাচ্চার জন্ম দেয়! সত্যিই আপনার কমনসেন্স অসাধারণ। ( শুধু এই বিষয়ের উপর- মুফাস্সিলের জন্য কিছু বাঁশ- নামে আমার একটি পোস্ট আছে, পড়া না থাকলে পড়ে নিতে পারেন।)
এরপর মুফাস্সিল বলেছে, Krishna is married to Rukmani the daughter of King Rukmangad. ( কৃষ্ণ রুক্মিনীকে বিয়ে করে)
আমিও তো তাই বলি, রাধার সাথে কৃষ্ণের যদি এতই প্রেম থাকতো তাহলে কৃষ্ণ, রাধাকে ছেড়ে রুক্মিনীকে বিয়ে করতে গেলো কেনো ?
এরপর মুফাস্সিল বলেছে, Radha was married to Krishnas uncle. ( রাধা ছিলো কৃষ্ণের মামার স্ত্রী)
একটু আগেই প্রমান করে দিয়েছি, এই ব্যাপারটা পুরোটাই কাল্পনিক। রাধার স্বামী হিসেবে যাকে বলা হয়, সেই আয়ান ঘোষও যে একটা কাল্পনিক চরিত্র, তার প্রমান তার “ঘোষ” পদবী; এই ঘোষ পদবী মধ্যযুগের উৎপত্তি, যখন ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে এই আজগুবি কাহিনীগুলি বানানো হয়। কৃষ্ণের সময় ‘ঘোষ’ পদবী বলে কিছু ছিলো না; কারণ, কৃষ্ণের যুগে কোনো পুরুষের নামের সাথে ঘোষ পদবী ছিলো না, যদিও বৃন্দাবনের সবার পেশা ই ছিলো বর্তমানের ঘোষদের মতো।
এরপর মুফাস্সিল যা বলেছে, সেটা শুনতে যেমন বড়ই আশ্চর্য, তেমনি দেখতেও বড়ই সৌন্দর্য! নিচে কমেন্ট দেখে বুঝে নিন ব্যাপারটা-
Krishna who abandons his lawfully wedded wife Rukmini and seduces Radha wife of another man and lives with her in sin without remorse. ( কৃষ্ণ তার আইনত স্ত্রী রুক্মিনীকে ত্যাগ করে এবং রাধাকে পটায়, যে ছিলো অন্যের স্ত্রী এবং তার সাথে অবৈধভাবে বাস করে কোনো অনুতাপ ছাড়া)
কৃষ্ণ নাকি রুক্মিনীকে ত্যাগ করেছে !
স্যালুট, মুফাস্সিলের গোবরজাত উর্বর মস্তিষ্ক্যকে।
এই প্রসঙ্গে আমার কিন্তু অন্য কথা মনে পড়ছে, মুহম্মদ যেমন অনেকগুলো বিয়ে করেছে, সেরকম বেশ কয়েকটাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িতও করেছে; সেরকম কৃষ্ণকে দিয়েও এমন কিছু ঘটিয়ে কৃষ্ণ ও মুহম্মদকে একই লেভেলে আনার চেষ্টা আর কি। এর আগে এক মুমিন কাহিনী বানিয়েছিলো- কৃষ্ণ যখন রুক্মিনীকে বিয়ে করে তখন রুক্মিনী শিশু, বাসর রাতে রুক্মিনী চিৎকার করে দিয়ে উঠে অজ্ঞান হয়ে যায়!- আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ৫৩ বছরের মুহম্মদের ৯ বছরের আয়েশা ধর্ষণের কেলেংকারীকে চাপা দেওয়ার জন্য ঐ মুমিন কৃষ্ণ ও রুক্মিনীকে নিয়ে ঐ কাহিনী বানিয়েছে; রুক্মিনীকে কৃষ্ণ পরিত্যাগ করেছিলো, এই কথা বলে মুফাস্সিল কি মুহম্মদ কর্তৃক তালাক দেওয়ার ঘটনাগুলোকে ম্যানেজ করতে চাইছে ? না হলে এমন কাহিনী বানানোর পেছনে তার উদ্দেশ্য কী ? যদিও মুফাস্সিল ইসলাম ত্যাগ করেছে ব’লে বেশ গর্ব সহকারে প্রচার করে, কিন্তু মুসলমানের ঘরে জন্ম তো, তাই বিশ্বাস নেই; এক সময় ইসলাম প্রচার করতো, এখন ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার করে, আবার ইসলামের পক্ষে প্রচার শুরু করলে অবাক হওয়ার কী আছে, এরই পূর্ব সংকেত হিসেবে হয়তো হিন্দু ধর্মে বিরুদ্ধে তার এই প্রচারণা। কারণ, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা ইসলাম ত্যাগ করে বা মনে প্রাণে মুসলমান নয়, তারা কেউ হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে না।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।