পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া শুধু crawl করছেনা এই মুহূর্তে।

১৯৩৯ সালে রমজান মাসে কালীপূজা পড়ে। বিগত কিছুদিন ধরে সমগ্র প্রদেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই মাসে এরকম কোন সম্ভাবনা রুখতে জনাব ফজলুল হক (তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গের প্রধানমন্ত্রী) বর্ধমান যাত্রা করেন। বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ বাহাদুরের সাথে তাঁর একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তি অনুযায়ী – সন্ধ্যে সাতটা র মধ্যে দেবীপ্রতিমা বিসর্জনের কর্ম নিষ্পন্ন করতে হবে – যা হিন্দুদের কাছে এক পরাজয় হিসেবে উপস্থাপিত হয়। ১২ ই নভেম্বর, ১৯৩৯, প্রখ্যাত দৈনিক
বসুমতী তে প্রবাদপ্রতিম সাংবাদিক ও সম্পাদক শ্রী হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ লেখেন, “রমজান নামাজের পবিত্রতার জন্য হক সরকার অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করল। কিন্তু হিন্দুদের ধর্মের ব্যাপারে তারা তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করল না।  হক মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে যেসব অহিন্দু উৎফুল্লভাবে চিৎকার করে, হক সাহেবও কি তেমন মনে করেন যে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে?” এই সম্পাদকীয়র বিরুদ্ধতায় হক সরকার আদালতের দ্বারস্থ হয়; সম্পাদক ও প্রকাশক দুজনের বিরুদ্ধেই জরিমানা ধার্য করা হয় যা বসুমতীর কাছে এক
নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় ছিল। অবশ্য যেকোন সত্যনিষ্ঠ সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে এটিই প্রযোজ্য।

-‘৪৭ পরবর্তী সময়ে বঙ্গভূমিতে উদিত হয়েছিলেন স্বল্পসংখ্যক কিন্তু অমিত প্রতিভাশালী সম্পাদকেরা যথা শ্রী সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, শ্রী চপলাকান্ত ভট্টাচার্য, শ্রী বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। শক্তিশালী লেখনী, কর্মস্পৃহা, আদর্শে চির অবস্থান ও নির্লোভ ইতিবৃত্তই তাঁদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করেছিল যাঁদের সমীহ করতেন প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দলও। সেই লেখনীর ঝাঁঝ অন্তত সামান্যতম হলেও ২০১০ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে একেবারে বিরল ছিলনা। কিন্তু পরবর্তীকালে উত্তরোত্তর সংবাদিকতার বেশ্যাকরণ সেই ধারাটির অন্তর্জলি যাত্রা সম্পন্ন করেছে।  আজ মূলধারার সংবাদপত্র পড়লে তা কোন স্বকীয় চিন্তাসম্পন্ন সংবাদকেন্দ্র না ক্ষমতাসীন পার্টির মুখপত্র সেই ধন্দ থেকে যায়। এই ধন্দের মধ্যেই হারিয়ে গেছে সাম্প্রতিক কালে ঘটা একটি স্বর্ণ কেলেঙ্কারী। সূত্রমতে, ভুবনবিখ্যাত ভাইপো র পত্নী কলকাতা এয়ারপোর্টে ২ কিলো (সম্ভবত আরও বেশী) সোনা নিয়ে ধরা পড়েন এবং তাঁকে আটকানোর জন্য ভদ্রমহিলা (তাঁর নিজের মতে তিনি ভিভিআইপি) কাস্টমসের বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় General Diary করেন। অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর রক্ষার্থে যুদ্ধং দেহি অবস্থানে এসে আবির্ভূত হয় বিধাননগর কমিশনারেটের এক পুলিশবাহিনী।  তার বিপক্ষে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সিআইএসএফকে নিয়োগ করে। এই দুই পরস্পরবিরোধী বাহিনীর মধ্যে প্রীতিপূর্ণ আলাপ-আলোচনা না সাম্প্রতিক সিবিআই-পুলিশের মতো কোন দ্বন্দ্ব হয়েছিল কিনা জানা নেই কারণ সঙ্গত কারণেই এর কোন live telecast হয়নি, যদিও কলকাতা এয়ারপোর্টের আশেপাশে electronic mediaর কোন representative থাকবেনা এরকম হাস্যকর  ধারণা না থাকাই শ্রেয় – এইরূপ ধারণা, যাইহোক,  সময় বাঁচায়।

নিঃসন্দেহে, স্বর্ণদ্বারা ভূষিত এই সংবাদের আর কোন follow-up হবে না। এখন প্রশ্ন – কেন হবেনা। কোন ব্যক্তির কার্য যদি আইনসম্মত না হয় তাহলে তাকে সসম্মানে বাড়ী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের কবে থেকে হল? এরও কোন উত্তর নেই কারণ মাঠে আমার আপনার মতো (মানসিকভাবে সদা তৎপর) ব্যক্তি নেই।  আছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কর্তব্য পালন করবেন না? শ্রদ্ধেয় লালকৃষ্ণ আদবানি ‘৭৫-‘৭৭ র National Emergency র সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছিলেন when Mrs Indira Gandhi asked “the media to bend, it crawled…পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া শুধু crawl করছেনা এই মুহূর্তে।  আনুগত্য প্রকাশের সাথে পদলেহনও করছে।