সৎ মুসলমান, ইসলাম নিয়ে যে কোন আপোষ করে না সে ঠিকই জানে আইএস-ই হচ্ছে শতভাগ ইসলামকে অনুসরণ করা দল।

শ্রীলংকায় গির্জাতে হামলাকারী একজনের সঙ্গে জাকির নায়েকের হাস্যজ্জ্বল ফটো আছে। জাকির নায়েককে মুসলিম ধনীরা তার পিস টিভির জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার দান করে থাকে। এরকম ডোনারদের সঙ্গে জাকির নায়েক ছবি তুলেন। জাকির নায়েক কি জানেন না আইএস আসলে ইহুদীদের একটা নকল ইসলামিক দল যা মুসলমানদের জিহাদ দিয়ে ধোঁকা দিচ্ছে? গুলশানের হলি আর্টিজেনে হামলাকেও আইএস স্বীকার করেছিলো। যে তরুণদের উগ্রপন্থায় চলে যাবার জন্য জসিমউদ্দিন রাহমানীকে দায়ী করা হয়, সেই মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী কি ছেলেদের বলে যান নাই, আইএস, তালেবান, বেকো হারাম হচ্ছে ইহুদীদের তৈরি ধোঁকা? হাই এডুকেটেড মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার বৈমানিকরা ইসলামের জিহাদের নেশায়, জান্নাতে হুর পাবার লোভে আর দোযগের আগুনের ভয়ে আইএসে যোগ দিলো তারা কেউ বুঝতে পারে নাই এটা ইহুদীনাসারাদের তৈরি নকল ইসলামিক দল!

দেওবন্ধ প্রতিষ্ঠা বিরোধী মোল্লা মুসলমানরা বলেছিলো দেওবন্ধ ছিলো ব্রিটিশদের ইসলামের বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত। আবার জামাত ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে দেওবন্ধরা বলেছিলো সিআইএর চক্রান্ত। সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে হাদিসের মধ্যে জাল বা দুর্বলগুলো বলা হয় এগুলো ইহুদী ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিতদের বর্ণনা করা হাদিস। পরোক্ষভাবে এখানে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র আবিস্কার করা হয়। ফরহাদ মজহারের সুফিবাদী বামিস্ট ঘরোনার এক ব্লগার এককালে মুহাম্মদের ইজ্জ্বত আজকের যুগে নষ্ট হয় এমন হাদিসগুলোকে ইহুদী থেকে নওমুসলিম হওয়াদের বর্ণনা বলে হাদিসগুলোকে দুর্বল বলে দাবী করেছিলেন! মানে ইসলামের মধ্যেই ইহুদীদের ষড়যন্ত্র আবিস্কার করা হয়েছে ইসলামকে রক্ষা করতে গিয়ে!

কিন্তু ভাবনার বিষয় যারা আইএসকে ‘ইজরাইল স্টেট’ বলে টিটকারি মারছেন তারা কি জঙ্গিদের হিটলিস্টে নিজের অজান্তে চলে যাচ্ছেন না? কোন পাক্কা জিহাদীকে ইজরাইল বা ইহুদী বললে সে নিশ্চয় খুশি হবে না? আমরা ইসলামিক জঙ্গিবাদের কথা বলে হুমকির মুখে এখনো লিখে যাচ্ছি আর আপনারা জঙ্গিবাদের সব দায় ইহুদীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিরাপদ থাকবেন? আইএস সিনে ম্যাগাজিন অফিস বোমা মেরে ফাটিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ভারতে। তাদের ভাষায় ‘অশ্লিল পোস্টার, বিলবোর্ড, সিনেমার পোস্টার, সিডির দোকান- সব আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। তারা ঘোষণা দিয়েছে অমুসলিমদের ধর্মালয়ে হামলা, সেক্যুলার নাস্তিক ব্যক্তিদের টার্গেট করে ‘লোন উলফ’ বা একাকি শিকারী হামলা চালাবে। এই হামলার অর্থ হচ্ছে, পাড়ায় সবচেয়ে শান্ত ভদ্র ছেলেটিকে দেখলেন একটা সিনেমা হলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে কিংবা দেশের বিশিষ্ট কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে নিজেকে আইএস কর্মী দাবী করছে আর আইএস স্বয়ং সেই হামলার দায় নিচ্ছে। এরকম হামলা আমরা ইউরোপ আমেরিকায় দেখেছি। সেখানে সিরিয়ার আইএস খিলাফত থেকে কেউ উড়ে গিয়ে হামলা চালায়নি। বরং স্থানীয় মুসলমানরা ইন্টারনেটে আইএসের সঙ্গে একাত্ত্বতা ঘোষণা করে নিজ উদ্যোগে হামলা চালিয়েছে। এরকম ভাই-ব্রাদাররা আপনার পাশেপাশেই আছে। টাকনুর উপর প্যান্ট পরা মুখে দাড়ি আপনার কর্পোরেট অফিসের কলিগকে দেখবেন মানববোমা হয়ে নিজেকে ফাটিয়ে দিয়েছে শত শত মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করতে। আপনি যখন অফিসে আইএসকে ‘ইজরাইল স্টেট’ বলে ঠাট্টা করেন তখন সে গোপনে ক্রোধের স্মীত হাসি হাসে। আজ পর্যন্ত আইএসের আত্মঘাতি সব মুজাহিদের পরিচয় তারা সবাই ধার্মীক মুসলিম নারী পুরুষ। কেন শ্রীলংকায় ভারত দুই ঘন্টা আগে হামলার আগাম খবর জানতে পারল- তাই ভারতই এই হামলা চালিয়েছে, আইএস গঠনে হিলারী ক্লিটনের হাত ছিলো- এসব কিছুই ইসলামের জিহাদী আইডোলজি পরিবর্তন হবে না। যারা বাংলাদেশের ভাস্কর্যে হামলা চালায়, পাঠ্য বইকে নাস্তিক হিন্দু শূন্য করে ফেলে, মুরতাদ হত্যার ঘোষণা দেয়, নাস্তিক কতলকে ওয়াজিব বলে, কর্মজীবী নারীকে বেশ্যা বলে, ঘরের চারদেয়ালে নারীকে আটক থাকতে বলে, যারা বাংলাদেশে দূর্গাপুজার প্রাক্কালে গণহারে মন্দিরে মূর্তি ভাঙ্গে, লিফলেট বিলিয়ে হিন্দুদের ভারতে চলে যাবার ভয় দেখায় তারা কি ইহুদী? শুক্রবার মসজিদে হুজুরদের খুতবার ভাষণগুলি কি ইসজরাইল থেকে লিখে দেয়া হয়? সালমান রুশদীর মাথার দাম হেকেছিলো খোমিনি- সে কি ইহুদী? তসলিমা নাসরিনের মাথার দাম ডেকেছিলো বাংলাদেশের যে মাওলানা- সে কি ইহুদী ছিলো? ৭১ সালে হুজুররা হিন্দু নারীদের গণিমতের মাল ঘোষণা করেছিলো সেটা কি তাওরাত থেকে কোট করে নাকি কুরআন থেকে? যুদ্ধাপরাধীদের সকলে ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, তাদের কি কেউ কোনদিন ইহুদী বলেছে? আইএস যা করছে অতিতে এইসবই অন্যরা ভিন্ন নামের কোন সংগঠন থেকে বা ব্যক্তি উদ্যোগে করেছে। তবু আইএস এখন ইসলামের ইজ্জ্বত নিয়ে বিব্রত করে ফেলছে কিছু মুসলমানদের। তারাই ইহুদীদের ষড়যন্ত্র, আমেরিকার ষড়যন্ত্র বলে ইসলামকে বাঁচাতে চাইছে। কিন্তু সৎ মুসলমান, ইসলাম নিয়ে যে কোন আপোষ করে না সে ঠিকই জানে আইএস-ই হচ্ছে শতভাগ ইসলামকে অনুসরণ করা দল।

এবার দরকারী দুটো কথা বলে শেষ করি। প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মীরা, সাবধানে থাকবেন। আপনাদের সকল কাজকর্ম ইসলামে হারাম। অভিনয় শিল্পীরা, চিত্র শিল্পীরা, সিনে তারকা বা সিনে সাংবাদিকরা কেউ নিরাপদ নন। এক সময় আমাদের মত ব্লগাররা খালি টার্গেট ছিলো। সেদিন হয়ত আপনারা নিজেদের নিরাপদ ভেবে চুপ থেকেছিলেন। ভেবেছিলেন ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে নাস্তিকরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে। এখন হয়ত অন্য কেউ আপনাদের সম্পর্কে বলবে, অভিনয় করে, ছবি এঁকে এরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে! ভারতে অবস্থারত ব্লগাররা সতর্ক হোন। বাংলাদেশের সকল ব্লগাররা সতর্ক হোন! মন্দির গির্জাতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বসান। মুসলিম পরিচয়ের যে কারোর সম্পর্কে বিনম্রভাবে সতর্কতা বজায় রাখুন। সিনেমা হলে বোমা নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করবে, সতর্ক থাকুন। আরবী নামের নিজের অতি ঘনিষ্ঠজনকেও আপনার নাস্তিক্যবাদী লেখা সম্পর্কে কিছু জানাবেন না। এমনকি সে বামপন্থি মনে করেও অসতর্ক হবেন না। আমার নিজের অতিকাছের ধার্মীক মুসলমান আত্মীয় কাছে আজ অনেক বছর নিজেকে গোপন করে রেখেছি। সবাই সতর্ক হোন প্লিজ…।
Susupto Pathok