শুনলে আশ্চর্য হবেন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেও জঙ্গিদের মত স্লিপার সেল ছিলো!

শুনলে আশ্চর্য হবেন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেও জঙ্গিদের মত স্লিপার সেল ছিলো! ১৪০০ বছর আগে নবীর দল রেকি করে গুপ্ত হত্যা ঘটাতো। যাদের হত্যা করা হতো তাদের অপরাধ ছিলো নবীর সমালোচনা করা। ইসলাম সম্পর্কে আমরা বাঙালীরা ভুল ধারণা প্রসণ করি। ইসলাম প্রকৃতপক্ষে একটি মাফিয়া ধর্ম। যেদিন থেকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম চর্চার আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ভারতবর্ষে তখনই নানা রকম জঙ্গি দলের জন্ম হয়েছে। যেহেতু আমরা ইসলাম সম্পর্কে কম জানি তাই এইসব ইসলামিক দলকে ভুল বুঝে বিরোধীতা করি। ইসলাম অর্থ শান্তি- এটিও আমাদের ভ্রান্ত একটি ধারণা। ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন করা। এই আত্মসমর্পন হবে বিনা শর্তে। কোন রকম প্রশ্ন বিবেক চিন্তা দিয়ে ইসলাম পালন করা যাবে। ইসলামের ইতিহাসে কয়েকটি কুখ্যাত গুপ্ত হত্যার বিবরণ এবার দিবো। সহি বুখারী, সহি মুসলিম, তিরমিজিসহ প্রখ্যাত তাফসিরকারকদের বর্ণনাতে উঠে এসেছে কেমন করে নবীর সাহাবীরা স্লিপার সেল গঠন করে হত্যার ছক কষত। তারপর ভিকটিমকে রেকি করে তার চলাফেলা ফল করত। কেমন করে মিথ্যা প্রতারণা করে ভিকটিমকে হত্যা করা হতো তার অকপট বর্ণনা আছে ইসলামের ইতিহাসে। কয়েকটি কুখ্যাত খুনের বর্ণনা দেয়ার আগে কুরআনে গুপ্ত হত্যার উপর যে আয়াতটি দলিল ধরা হয় সে সম্পর্কে সামান্য প্রমাণ দালিখ করে নেই। এটা করা প্রয়োজন কারণ সুরা তওবার এই আয়াতের এখন নানা রকম অপব্যাখ্যা বের করেছে কিছু ইসলামপন্থি। তারা এই আয়াতকে যুদ্ধের সময় প্রযজ্য বলে দাবী করে। কেউ দাবী করে যুদ্ধের সময় একজন সেনানায়ক যেরকম নির্দেশ দেন তার বাহিনীকে এই আয়াতে সেটাই বলা হয়েছে। বলাই বাহুল্য এইসব মুনাফেক মুসলমান কুরআনের মনগড়া ব্যাখা দিলে সেটা গ্রহণীয় হবে না কারণ কুরআনের সমস্ত আয়াত কেয়ামত পর্যন্ত বহাল আছে বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে। যাই হোক, সুরা তওবা’র ৫ নম্বর আয়াত নিয়ে সামান্য আলাপ করে আমরা ১৪০০ বছর আগের জঙ্গি বাহিনীর কাহিনীতে ফিরে যাবো।

ﻓَﺎﻗْﺘُﻠُﻮﺍﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَﺣَﻴْﺚُﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻫُﻢْﻭَﺧُﺬُﻭﻫُﻢْﻭَﺍﺣْﺼُﺮُﻭﻫُﻢْ
ﻭَﺍﻗْﻌُﺪُﻭﺍﻟَﻬُﻢْﻛُﻞَّﻣَﺮْﺻَﺪٍ
তোমরা মুশরিকদেরকে হত্যা করো যেখানেই তাদেরকে পাও, তাদেরকে ধরো, তাদেরকে বেঁধে ফেলো, তাদেরকে হত্যার জন্য ঘাটিতে ওঁত পেতে অপেক্ষা করতে থাকো। (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৫)

আদি সমস্ত ইসলামি স্কলার ও প্রথম যুগের নবীর সাহাবীরা এই আয়াত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, এ আয়াতে গুপ্ত হত্যার বৈধতার দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) এ আয়াতের ‘উকু‘দু লাহুম কুল্লা মারসদ‘ এর ব্যখ্যায় বলেন, যার অর্থ হলো
ﺍﻗﻌﺪﻭﺍﻟﻬﻤﻔﻴﻤﻮﺿﻌﺎﻟﻐﺮﺓﺣﻴﺜﻲُ ﺭﺻﺪﻭﻥ
অর্থাৎ তাদের উপর আক্রমন করার জন্য, তাদেরকে হত্যা করার জন্য, অতর্কিতে তাদের উপর আক্রমনের জন্য গোপন ঘাটিতে ওঁত পেতে থাকো।
এ আয়াতের মধ্যে দলিল রয়েছে, মুশরিদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার আগেও হত্যা করা যায়। … সে লক্ষ্যে কাফেরদের ধরার জন্য গোপন ঘাঁটি তৈরী, তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা ও তাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার বৈধতা দেয়। অপরদিকে প্রখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ তার তাফসীর গ্রন্থে এর ব্যখ্যা প্রসঙ্গে বলেন –
ﻭَﺍﺣْﺼُﺮُﻭﻫُﻤْﻮَﺍﻗْﻌُﺪُﻭﺍ ﻟَﻬُﻤْﻜُﻠَّﻤَﺮْﺻَﺪ
ﻻﺗﻜﺘﻔﻮﺍﺑﻤﺠﺮﺩﻭﺟﺪﺍﻧﻜﻤﻠﻬﻤﺒﻞ
ﺍﻗﺼﺪﻭﻫﻤﺒﺎﻟﺤﺼﺎﺭﻓﻴﻤﻌﺎﻗﻠﻬﻤﻮﺡ
ﺻﻮﻧﻬﻤﻮﺍﻟﺮﺻﺪﻓﻴﻄﺮﻗﻬﻤﻮﻣﺴﺎﻟﻜﻪ
ﻣﺤﺘﻯﺘﻀﻴﻘﻮﺍﻋﻠﻴﻬﻤﺎﻟﻮﺍﺳﻌﻮﺗﻀﻂ
ﺭﻭﻫﻤﺈﻟﻯﺎﻟﻘﺘﻸﻭﺍﻹﺳﻼﻡ
অর্থাৎ ‘তাদেরকে তোমাদের হাতের নাগালে পেয়ে তারপর হত্যা করবে শুধু এমন চিন্তা করে বসে থাকা যথেষ্ট নয়; বরং এ আয়াত বলছে যে তোমরা তাদের বাড়ি ঘরে, তাদের শহর নগরে গিয়ে তাদেরকে আক্রমন করো, ঘাটি স্থাপন করো, ওঁত পেতে থাকো, তাদেরকে ঘিরে ফেলে অবরোধ করে রাখো যাতে করে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং তারা এমন এক অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় যে হয় যুদ্ধ করতে হবে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে হবে’।

বর্তমান বিশ্বে কিন্তু জঙ্গিরা সেরকম পরিস্থিতিই তৈরি করেছে খেয়াল করলে দেখবেন। একটা যুদ্ধ বাঁধাতে চাইছে। নতুবা তাদের দাবী মনে মুসলমানদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের জিন্মি হয়ে যেতে হবে। যাই হোক, এবার ইসলামের ইতিহাসে কুখ্যাত কিছু গুপ্ত হত্যার ঘটনা বলি-

>>কা’ব বিন আশরাফ হত্যাকান্ড: জাবির(রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক দিন বলেন, ﻣﻨﻠﻜﻌﺒﺒﻨﺎﻷﺷﺮﻓﻔﺈﻧﻬﺂﺫﻯﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ‘কা’ব বিন আশরাফকে হত্যার জন্য কে
আছো? সে আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রসুলকে কষ্ট দিয়েছে’। আল্লাহ্র রসূলের একথা শুনে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (রাঃ)বলেন, ইয়া
রসুলাল্লাহ আপনি কি সত্যিই চান আমি তাকে হত্যা করে ফেলি? তিনি বলেন, হ্যা আমি তাই চাই। মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ) বলেন, তাহলে
আমাকে কিছু (মিথ্যা কথা)বলার অনুমতি দিন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার যা প্রয়োজন বলো।

কা’ব বিন আশরাফ ছিলেন একজন ইহুদী কবি। তিনি মুহাম্মদের ধর্মীয় নীতির কঠর সমালোচক ছিলেন এবং সেগুলি তিনি কবিতা লিখে জনসম্মুখে পাঠ করতেন। তিনি মক্কার কুরাইশদের সমর্থকও ছিলেন। আমরা এখানে দেখলাম মুহাম্মদের কার্যকলাপ নিয়ে তিনি কবিতা লেখায় তাকে হত্যা করার জন্য স্বয়ং মুহাম্মদ তার সাহাবীদের মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার অনুমতি দিলেন। এখান থেকেই ইসলামে ‘তাকিয়া’ বা দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা প্রতারণা করা জায়েজ ধরা হয়েছে। তাই যে কোন টুপি দাড়িঅলা লোক ধর্মের নামে মিথ্যা জালিয়াতি করে ফেলে। মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ সেটাই করেছিলেন। সে কা’ব বিন আশরাফের কাছে গিয়ে তার বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য মুহাম্মদের নামে নিন্দা করতে শুরু করে। সে বলে মুহাম্মদ আমাদেরকে মহাকষ্টে ফেলে দিয়েছে। সে শুধু আমাদের কাছে ‘সাদকা’ চায়। মানে বিনামূল্যে দান চায়। একথা বলে মাসলামাহ কা’ব বিন আশরাফের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করে। নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র বন্দক রেখে ঋণ গ্রহণে সম্মত হওয়ার পর মাসলামাহ রাতে দেখা করার কথা বলে বিদায় নেয়। রাতেরবেলা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাঃ কা’ব বিন আশরাফের দুধভাই আবু নায়লাকে সাথে নিয়ে আসলেন। তারা দু’জন তাকে ডাক দিলে সে যখন নেমে আসতে যাচ্ছিলো তখন তার স্ত্রী তাকে বললো, ‘এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো? আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন তার কথা থেকে রক্তের ফোঁটা ঝড়ে পড়ছে’। অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন তার মুখের আওয়াজের সাথে রক্ত বেরিয়ে আসছে’। সে বললো, আরে! এতো আমার বন্ধু মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ ও আমার দুধভাই আবু নায়লা এসেছে, ওদের সাথে একটু কথা বলতে যাচ্ছি।

মাসলামাহ আশরাফের দুধভাই বাদেও আরো দুইজনকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন খুন করতে। মাসলামাহ তাদের আগেই শিখিয়ে দিয়েছিলো সে যখন কা’বকে ঘাড় ধরে মাথা নুইয়ে ফেলবে তখন যেন তারা জবাই করা শুরু করে। কা’ব নিচে এনে এলে মাসলামাহ তার প্রশংসা করতে লাগল তার গায়ের সুগন্ধির জন্য। তারপর তার চুলের ঘ্রাণ শুকার অনুমতি প্রার্থনা করলে কা’ব অনুমতি দিলে আশরাফ প্রথমবার শুকে ফিরে এলেও দ্বিতীয়কার চুলের ঘৃণা নিতে গিয়ে তার ঘাড় টেনে মাটিতে মাথা নামিয়ে ফেলে সঙ্গীদের বলে এবার তোমরা তোমাদের কাজ শেষ করে ফেলো…। গরু জবাইয়ের মত কা’ব বিন আশরাফকে এরপর হত্যা করে ফেলা হয়। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম/ তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বাংলা বুখারী ৪-৪৪ পৃষ্ঠা, ৪০৩৭ নাম্বার হাদিসের টিকা/ ইংরেজি ভার্সন: Bukhari,Volume 5, Book 59, Number 369:/ হাদিস নাম্বার বই নম্বর লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে হাদিসটি ক্রসচেক করে নিতে পারবেন)

কা’ব বিন আশরাফকে হত্যার পর ইহুদীরা তার  মৃত্যুর জন্য মাসলামাহকে দায়ী করে রক্ত ঋণের দাবী করতে আসলে মুহাম্মদ ইহুদীদেরকে বলেন, ‘তার মতো একই রকম চিন্তার যেসব লোকেরা পালিয়ে গেছে তাদের মতো সেও যদি পালিয়ে যেত তাহলে তার এই দশা হতো না, কিন্তু সে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আমাদেরকে অপমান করেছে; আর ভবিষ্যতেও কেউ যদি এমন দুঃসাহস দেখায় তাহলে সেও তার ঘাড়ের উপর তলোয়ার ছাড়া কিছু দেখতে পাবে না’।

কি একদম ডাকার দলের সর্দারের মত লাগছে না? ফতহুল বারী গ্রন্থে ইবনেহাজার(রহঃ)ইকরামা রাঃ এর সুত্রে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, এ
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর গোটা ইহুদী সম্প্রদায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের কাছে এসে তাদের নেতার
গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার ঘটনা তাকে জানায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামতার রক্ত ঋণের ব্যপারে কোন কথা না বলে বরং তাদেরকে তিনি মনে করিয়ে দিতে লাগলেন যে সে আল্লাহ্ তায়ালা, তাঁর রসুল ও
ঈমানদারদের সম্পর্কে কি সব আপত্তিকর কথাবার্তা বলে বেড়াতো। হাফেজ ইবনে হাজার রহঃ এ প্রসঙ্গে আরও বলেন-
ﻭﻓﻴﻬﺠﻮﺍﺯﻗﺘﻼﻟﻤﺸﺮﻛﺒﻐﻴﺮﺩﻋﻮﺓ
ﺇﺫﺍﻛﺎﻧﺘﺎﻟﺪﻋﻮﺓﺍﻟﻌﺎﻣﺔﻗﺪﺑﻠﻐﺖ ﻩ
এ ঘটনার মধ্যে সাধারনভাবে ইসলামের দাওয়াত সবার কাছে পৌঁছে গেলে যে কোন মুশরিককে ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের দাওয়াত না দিয়ে হত্যা করার বৈধতা রয়েছে। অপরদিকে ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদিসটিকে জিহাদ
অধ্যায়ে ‘যুদ্ধে মিথ্যা বলা’ অনুচ্ছেদে সংকলণ করেছেন। আল তাবারি ও ইবনে ইসহাক এই ঘটনায় আরো উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমরা কা’ব এর কর্তিত মাথা রাতের বেলা মোহাম্মদের নিকট উপস্থিত করলাম। আমরা তাকে স্যলুট করলাম যখন তিনি নামাজের জন্য দাড়িয়ে ছিলেন ও বললাম যে আল্লাহর শত্রুকে আমরা হত্যা করেছি। যখন তিনি বের হলেন আমরা তার সামনে কা’ব আশরাফের কাটা মুন্ডু পেশ করলাম। নবী আল্লাহর নিকট এই বলে প্রশংসা করলেন যে কবিকে কতল করা হয়েছে ও আমরা আল্লাহর নিমিত্তে একটা ভাল কাজ করেছি। আল্লাহর শত্রুদের ওপর আমাদের আক্রমন ইহুদিদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে এবং মদিনায় এমন কোন ইহুদি নেই যারা তার জীবনের ভয়ে ভীত নয় (Al-Tabari, Vol. 7, p. 97 / Ibn Sa’d, Vol. 1, P. 37)।

>>আবুরাফে’র হত্যাকাণ্ড: এই হত্যাকান্ডে নবী একটি স্লিপার সেল গঠন করে দেন যেখানে ৫ জন সাহাবী কাজ করেছিলো। মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল), আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ সাল), আল-ওয়াকিদি (৭৪৭-৮২৩ সাল), ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল) মত আদি ইসলামি স্কলারদের বর্ণনায় উঠে এসেছে আবু রাফে হত্যাকান্ড। আবু রাফেকে রেকি করে স্লিপার সেল তাকে হত্যার দিনক্ষণ ঠিক করেছিলো। ইমাম বুখারীর বর্ণনায় এভাবে এসেছে- ‘আল-বারা বিন আজিব হইতে বর্ণিত: আল্লাহর নবী আনসারদের মধ্য থেকে কিছু লোক ইহুদি আবু রাফিকে (হত্যার) জন্য পাঠান এবং আবদুল্লাহ বিন আতিককে তাঁদের দলনেতা রূপে নির্বাচন করেন। আবু রাফি আল্লাহর নবীকে কষ্ট দিত এবং তাঁর শত্রুদের তাঁর বিরুদ্ধে সাহায্য করতো। হিজাজ ভূমিতে অবস্থিত এক দুর্গে সে বসবাস করতো। সূর্যাস্তের পর যখন ঐ লোকগুলো (সেই দুর্গের) নিকটবর্তী হয় এবং অন্যান্য লোকেরা তাদের গবাদি পশু নিয়ে বাড়ী ফিরছিল। আবদুল্লাহ (বিন আতিক) তাঁর সহকারীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা যেখানে আছো, সেখানেই বসে থাকো। আমি যাচ্ছি এবং আমি দারওয়ানের সাথে চাতুরী করার চেষ্টা করবো যাতে আমি (দুর্গের মধ্যে) ঢুকতে পারি।” তারপর আবদুল্লাহ দুর্গের দিকে অগ্রসর হন এবং যখন তিনি গেটের নিকটবর্তী হন, তখন তিনি তার কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে এমন ভান করেন যে তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। সেখানের অধিবাসীরা ভেতরে প্রবেশ করে এবং দারওয়ান (আবদুল্লাহর ধারণা, লোকটি ছিল ঐ দুর্গের চাকরদের একজন) তাকে সম্বোধন করে বলে, “এই যে আল্লাহর দাস! যদি চান ভেতরে প্রবেশ করেন, কারণ আমি দরজা বন্ধ করতে চাচ্ছি।”

আবদুল্লাহ তার বিবরণে যোগ করেন, “তাই আমি ভেতরে (দুর্গের) প্রবেশ করি এবং নিজেকে লুকিয়ে রাখি। যখন অধিবাসীরা ভেতরে ঢোকা শেষ করে, দারওয়ান দরজা বন্ধ করে এবং চাবিটি একটা নির্দিষ্ট কাঠের খোঁটায় ঝুলিয়ে রাখে। আমি উঠে দাঁড়াই ও চাবিটি নিয়ে নিই এবং দরজা খুলে ফেলি। কিছু লোক আবু রাফির সাথে তার কক্ষে অনেক রাত্রি পর্যন্ত মনোজ্ঞ খোশ গল্পে মশগুল ছিল। যখন তার আপ্যায়িত রাতের অতিথিরা প্রস্থান করে, আমি তার নিকট আরোহণ করি এবং যখনই একটা দরজা খুলি, তখনই তা ভেতর থেকে বন্ধ করি। আমি নিজেকে নিজেই বলি, ‘যদি লোকগুলো আমার উপস্থিতি টেরও পায়, তাকে খুন করার আগে তারা আমাকে ধরতে সক্ষম হবে না।’  তারপর আমি তার কাছে পৌঁছোই এবং দেখি যে, সে তার পরিবারের সাথে এক অন্ধকার বাড়িতে ঘুমাচ্ছে। সেই বাড়িতে আমি তার অবস্থান ঠাহর করতে পারি নাই। তাই আমি চিৎকার করি, “এই আবু রাফি!’

আবু রাফি বলে, “কে ওটা?” আমি তার গলার আওয়াজ অনুসরণ করে তার কাছে আসি এবং তলোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করি, কিন্তু জটিলতার কারণে আমি তাকে খুন করতে ব্যর্থ হই। সে উচ্চস্বরে চিৎকার করে, আমি বাড়ির বাইরে আসি ও কিছু সময় অপেক্ষা করি। তারপর আমি পুনরায় তার কাছে যাই এবং বলি, “এই আবু রাফি, এটা কার গলার আওয়াজ?” সে বলে, “আমার বাড়িতে লোক ঢুকেছে এবং আমাকে তার তলোয়ার দিয়ে আঘাত করেছে!”আমি তাকে আবার খুব জোরে আঘাত করি কিন্তু খুন করতে ব্যর্থ হই। তখন আমি তলোয়ারের চোখা আগাটা তার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিই (এবং ভিতরে চাপ দিতে থাকি) যতক্ষণ না তা তার পিঠে গিয়ে পৌঁছে, এবং আমি বুঝতে পারি যে, তাকে আমি খুন করেছি। তারপর আমি একটা একটা করে দরজা খুলে সিঁড়ির কাছে আসি, সমতল মাটিতে পৌঁছেছি মনে করে আমি পা বাড়াই ও নিচে পড়ে যাই এবং চাঁদনি রাতে আমার পা টা ভেঙ্গে যায়। আমি আমার পাগড়ির কাপড় দিয়ে পা-টা বেঁধে ফেলি এবং দরজার কাছে গিয়ে বসে পড়ি ও নিজেকে বলি, ‘আমি তাকে খুন করেছি কি না, নিশ্চিত না হয়ে বাইরে যাব না।’

তারপর যখন (খুব সকালে) মোরগ ডাকে, দুর্ঘটনা কবলিত লোকেরা দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেয়, ‘আমি আবু রাফির মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করছি, তিনি ছিলেন হিজাজের এক ব্যবসায়ী’। তখন আমি আমার অনুসারীদের কাছে যাই এবং বলি, ‘এসো আমরা নিজেদের রক্ষা করি, কারণ আল্লাহ আবু রাফিকে খুন করেছে।’ তারপর আমি (আমার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে) আল্লাহর নবীর কাছে আসি এবং তাঁকে সমস্ত বৃত্তান্ত খুলে বলি। তিনি বলেন, ‘তোমার (ভাঙা) পা টা প্রসারিত করে দাও।’ আমি তা প্রসারিত করি এবং তিনি তা মালিশ করেন ও তা এমন ভাবে ঠিক হয়ে যায় যে, আমার মনে হয়, আমি কখনোই কোনোরূপ অসুস্থ হইনি (সহি বুখারী: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ৩৭১/ (বুখারী হাদিস নং ৩০২২, ৩০২৩, ৪০৩৮-৪০৪০;আধুনিক প্রকাশনীর ছাপায় হাদিস নং২৮০০ এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ছাপায় হাদিস নং ২৮১০)।

>>কবি আসমা বিনতে মারওয়ান হত্যাকান্ড: ইয়াযিদ ইবনে যায়েদ ইবনে হিসান আল-খাতমির স্ত্রী আসমা বিনতে মারওয়ান ছিলেন সেকালের একজন প্রসিদ্ধ মহিলা কবি। তিনি মুহাম্মদের নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। সেকথা কবিতায় তিনি অকপটে লিখে ফেলতেন। এই কবিতা শুনে মুহাম্মদ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে উপস্থিতি সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে যে এই মহিলাকে খুন করবে?’ উমায়ের বিন আল-খাতমি নামের এক সাহাবী একথা শোনার সাথে সাথে সে রাতেই সেই মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হত্যা করেন। এই মহিলা কবি তখন তাঁর শিশুসন্তান পরিবেষ্টিত হয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। একটি শিশু তখন তার মায়ের স্তন্যপান করছিলো, উমায়ের সেই দুগ্ধপানরত শিশুটিকে সরিয়ে মহিলার বুকে তার তলোয়ার আমূলবিদ্ধ করে হত্যা করেন।

পরদিন সকালে উমায়েরের সাথে দেখা হলে মুহাম্মদ তাঁকে বলেন, ‘তুমি আল্লাহ আর তার নবীকে সাহায্য করেছ।‘ উমায়ের বলেন, ‘তার পাঁচটি ছেলে ছিল; আমার কি অনুশোচনা করা উচিৎ?’ মোহাম্মদ উত্তর দেন, ‘না, কারণ তার মৃত্যু আর দুটো ছাগলের ঢুঁশোঢুঁশি করা সমান (ইবনে সা’দ কিতাব আল-তাবাকাত আল-কবির অনুবাদ এস. মইনুল হক, ভল্যুম ২, পৃ. ৩১)।

আজকের যুগের জঙ্গি দলের সঙ্গে যারা ইসলামকে মেলাতে পারেন না তারা আসলে ইসলাম সম্পর্কে জানেন না। ইসলামের চর্চা যারা করে, সেই মাদ্রাসায় পড়া মুফতি মাওলানারা ঠিকই জানে আইএস, তালেবান বোকো হারাম কোন ইহুদীদের বানানো দল নয়। একশভাগ ইসলামিক জিহাদী দল তারা। যারা জঙ্গিবাদের মধ্যে ইহুদীনাসারা আর সাম্রাজ্যবাদ আবিস্কার করে তারা হয় ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না. নতুবা এরা মুনাফেক মুসলমান। ইসলামের সত্যিকে মেনে নিতে এরা অস্বস্তিবোধ করে!
Susupto Pathok