পরকাল একটা সর্ব ধর্মীয় সম্পত্তি। এটাতে কেউ অবিশ্বাস করলে তাতে বিশেষ কোন একটা ধর্মের অনুসারীদের আঁতে ঘা লাগার কথা নয়। লাগলে সবার লাগার কথা। কিন্তু দেখা গেলো স্বঘোষিত শান্তির ধর্মের অনুসারীদেরই কেবল তীব্র জ্বলুনি শুরু হয়েছে। এরা নিজেদের ধর্মকে শান্তির ধর্ম বলে অথচ কেউ পরকালে অবিশ্বাস করি বললেই অশান্ত হয়ে উঠে। এই একই কথা ভারতে বললে, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটান- কোথাও কাউকে মারতে আসবে না। সামাজিকভাবে সমস্যা পড়তে হবে না। কিন্তু একই কথাগুলি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, আফগানিস্থানে বললে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা প্রবল। অথচ পরকাল কেবল ইসলামিক বিশ্বাস নয়, এটি হিন্দু, বৌদ্ধ ইহুদী, খ্রিস্টান সব ধর্মের মূল বিশ্বাস। কিন্তু মুসলিম ব্যতিত বাকী ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দেশে যে কেউ এরকম মন্তব্য করলে কেউ ফিরেও তাকাবে না। আমাদের ইউরোপ আমেরিকার উদাহরণ দেয়া লাগবে না। এশিয়ার বহু দেশে নাস্তিকতা প্রকাশ কোন সমস্যা নয়। এই দেশগুলির সবক’টিই অমুসলিম অধ্যুষিত। ভারতে হিন্দুত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় আসায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু বলিউডের অভিনেতা ঋষি কাপূড়, অভিনেত্রী কাগজের গরুর মাংস খাওয়ার প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি এবং গো-মাংসের বিরুদ্ধে থাকা হিন্দুত্ববাদীদের রক্ষণশীলতার বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত পরিস্থিতি কি বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে কোনদিন ছিলো না আছে? বাংলাদেশ থেকে বহু নাস্তিক প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। জিজ্ঞেস করি, ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার আসায় কতজন লিবারাল, নাস্তিক ভারত ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে? ভারতে কয়টা বই হিন্দুত্ববাদীরা নিষিদ্ধ করেছে যেখানে হাজার হাজার বই পাওয়া যায় মুনস্মৃতিকে চরমভাবে আক্রমন করা হয়েছে। কমল হাসানের মত কোন অভিনেতার উদাহরণ দেখান মুসলিম প্রধান দেশের টপ কোন অভিনেতা তার ধর্মহীনতা প্রকাশের সাহস করেছে? ভারতের টপ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাদের ধর্মহীনতার কথা প্রকাশ করেও দর্শক হারানোর ভয় করেন না এবং সেটা বাস্তবে ঘটেও না। বাংলাদেশে আমরা উল্টোটা দেখি। ধর্মের বিরুদ্ধে না, কেবল মাত্র পোশাককে ধর্ষণের কারণ মনে করেন না বলায় মোশাররফ করিমকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে! ইসলাম যদি শান্তি ধর্ম হবে তাহলে মুসলিম প্রধান দেশের এই অবস্থা কেন?
স্পেসিফিক যদি কেউ বলে, ‘আমি মুহাম্মদকে নবী মানি না’ তাহলে সে মুসলিম প্রধান দেশে হোক বা মুসলিমরা সংখ্যালঘু হোক কিচ্ছু যায় আসে না- তার জীবন বিপন্ন। সনু নিগম আজান নিয়ে কথা বলায় ভারতীয় এক মোল্লা তার মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ফতোয়া দিয়েছিলো এই ‘হিন্দুত্বাদীদের দেশে’! ভারতের মুসলমানরা নাকি প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়। আসামে গরুর মাংস বেচা বুড়োকে পিটিয়ে শুকোরের মাংস খাওয়ানো হয়েছে। আমার বাবা সদ্য ভারত এসে বললেন, কি শুনতাম আর কি দেখলাম! ভারতে এত বড় বড় পীরের দরগা! মুসলমানরা কি দাপট নিয়ে থাকে!…
বৃক্ষ তোমার নাম কি- ফলে পরিচয়। আপনি শান্তিবাদী কিনা তা আপনার আচড়নে প্রকাশ পাবে। সারা পৃথিবীতে আপনি ‘আমি যীশুকে ঈশ্বর পুত্র মানি না- তাকে নবী বলে স্বীকার করি না’ বলুন- কোন সমস্যা হবে না। আপনি ‘আমি কৃষ্ণকে মানি না, আমি হিন্দু ধর্মকে মানি না, কালি-দুর্গাকে মানি না’ বলুন কোথাও আপনার কোন সমস্যা হবে না। আপনি বলুন ‘বুদ্ধকে মানি না’ কেউ মারতে আসবে না। আর কারোর নাম নিয়ে নয়, পরকালের মত সার্বজনীন ধর্মীয় বিশ্বাসকে অস্বীকার করায় হুমকি ধামকি দিচ্ছে সাফা কবির নামের একটি মেয়েকে! সে তো বলেনি আমি ইসলাম ধর্ম মানি না। সে বলেনি আমি নবী মুহাম্মদকে মানি না। এসব বললে দেশের আইন প্রণেতাই বলত, এই কথা বলে কেউ যদি নিজের বিপদ ডেকে আনে তাহলে তার দায় আমি নিবো না…। ইনারাই আবার ধর্মনিরপেক্ষতার সোল এজেন্ট!
ইসলাম যে পরমত সহিষ্ণুতায় বিশ্বাস করে না এটি একজন আলেম জানে। একজন আলেম জানে ইসলাম কখনই শান্তির কথা বলেনি। ইসলাম অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পন। আপনি ইসলামের কাছে আত্মসমর্পন করবেন। যখন কেউ আত্মসমর্পন করে কারোর কাছে তখন সেই মানুষ দাসে পরিণত হয়। তাই ইসলামের সমস্ত নির্দেশ কোন রকম বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে বিবেচনা করা আপনার জন্য কাম্য নয়। আপনি অবলীলায় ইসলামের সমস্ত ঘৃণা, অবিশ্বাসীদের প্রতি বিদ্বেষ জারি রাখবেন। এমন কি বিপদে পড়লে ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ বলতেও পিছ পা হবেন না।
সাফা কবির নেট প্রজন্মের একজন তরুণী। ইন্টারনেট ধর্মের সমস্ত গোমড় ফাঁস করতে সাহায্য করেছে। প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সেটা সম্ভব ছিলো না। ব্লগের লেখাগুলোই এখন ফেইসবুকে, ইউটিউবে ভিডিও হয়ে প্রচার পেয়েছে। তাই সাফা কবিরের মত ছেলেমেয়েরা সত্যকে জানতে পেরেছে। আমাদের আশাবাদী হবার মত কারণ এই তরুণ তরুণীদের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধ পাওয়াটা। মনে রাখতে হবে এই নাস্তিকতাকে দমন করতে কেবল মাত্র ইসলামিকরাই এখন সক্রিয় নয়, যোগ হয়েছে বামাতীরা যারা ইসলামের সব রকম বিরোধীতার নাম দিয়েছে ‘ইসলামোফোবিয়া’! তাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে নাস্তিকদের বিরোধীতা করা এবং নাস্তিক্যবাদী লেথালেখির বিপক্ষে দাঁড়ানো। মুসলমানদের গোড়ামী নিয়ে লিখলে সেটাই তাদের কাছে ‘ইসলামোফোবিয়া’। অথচ ‘আমি পরকালে বিশ্বাস করি না’ বলাতে যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মেয়েটিকে মেরে ফেলতে চাইছে, ধর্ষণ করতে চাইছে, দেশ থেকে বের করে দিতে চাইছে- সে দেশে মুসলমান ভীতি থাকবে না?…
অভিনন্দন সাফ করিম, আশা করি আপনি শত প্রতিকূলতায় নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসবেন না।