এবার দেখার বিষয় ঠাকুরপাড়ার জাহাঙ্গিরটা কে?

নয়ন চ্যাটার্জি পেইজ দাবী করেছে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন লাগাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ৬ জন মুজাহিদ শহীদ হয়ে ৭২ হূর প্রাপ্ত হয়েছে। অপরদিকে হযরত পিনাকীর দাবী দুইজন মুজাহিদ শহীদ হয়েছে। এটি কমিউনিকেশন গ্যাপ। শহীদ আর গাজির সংখ্যাটা বসে ঠিক করা উচিত ছিলো…।

নয়ন চ্যাটার্জি পেইজটা যারা চালায় তারা তাকিয়া করার উদ্দেশ্যেই প্রচারণা করে। তাকিয়া মানে দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা বলা। এটা হাদিস দ্বারা স্বীকৃত ইসলামী তরিকা। যে কারণে ‘নয়ন চ্যাটার্জি’ এরকম হিন্দু ব্যক্তি সেজে হিন্দু নিধনের উশকানি দেয়াকে তারা কোন অন্যায় বা পাপ বলে মনে করে না। কারণ যা-ই করা হচ্ছে সবই দ্বিন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে করা হচ্ছে। নবীজি বৃদ্ধ ইহুদী কবিকে খুন করতে মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছিলেন তার সাহাবীদের…।

হযরত পিনাকী যুক্তির মাইরে বাপ করে বলেছে, দুইটা মানুষের জীবন কি ছয়টা বাড়ির চেয়ে বেশি? অকাট্য যুক্তি। মানুষের প্রাণের চেয়ে দামী আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আপনার ভাই-বেরাদাররা জঙ্গি মিছিল নিয়া আল্লাহো আকবর বইলা হিন্দু গ্রামে হামলা করতে ছুটবে আর তাতে গুলি খেয়ে কেউ মারা গেলে সেটাকে বাড়ি আর মানুষের জীবনের তুলনা এনে দাড়িপাল্লায় মাপা যুক্তি বলে না ইতরামি বলে। এখন যেটা চলছে সবটাই ইতরামি। একদিকে সরকার কথিত হিন্দু যু্বককে গ্রেফতারের ঘোষণা দিয়েছে। এটা দেশের মুসলমানদের বুঝানো আমরা হিন্দুদের পক্ষে নেই। তাদের উপর হামলা হয়েছে তাতে আমরা মাথা ঘামাইনি। আমাদের কাছে বড় হচ্ছে আমাদের নবীর ইজ্জত মোবারককে রক্ষা করা ইত্যাদি। অপর ইতরামিটা করছে হযরত পিনাকী আর নয়ন চ্যাটার্জি পেইজ…।

‘মুসল্লি’ নামের একটা জঙ্গি উচ্ছৃঙ্খ জনগোষ্ঠি যখন একটি বিশেষ ধর্মের গ্রামে হামলা চালাতে আসে তখন পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গুলি চালাতেই পারে। একটা মফস্বল বা গ্রামে পুলিশ কতখানি পরিস্থিতিতে পড়লে গুলি চালাতে বাধ্য হয় সেটা এখানে বিবেচ্য। জুম্মার নামাজ পড়ে ঈমানী জোশে হিন্দু পাড়ায় আক্রমন করতে যারা গিয়েছিলো তাদের যদি কেউ বাধা না দিতো তাহলে সেদিন ঠাকুরপাড়ায় একটা বাড়িও আর আস্ত থাকত না। তবু ৬টি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ১৪-১৫টি বাড়ি বিধ্বস্থ। গরু-বাছুর লুট করা হয়েছে। লুট চালানো হয়েছে ঘরের ভেতরও। এটা ছিলো গণিমত হস্তগত করা। গণিমত খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে হালাল। কিন্তু যাদের উপর নির্যাতনটা চলল তারা নিজেরাই জানে না কি তাদের দোষ। হযরত পিনাকীর ভাইবেরাদাররা তাদের নবীর ইজ্জত রক্ষার্থে হিন্দু পল্লীতে হামলা করতে গিয়েছিলো। ফেইসবুকে কে কি পোস্ট দিয়েছে তা এইসব সাধারণ গরীব নিরহ হিন্দুরা জানে না। কেনই বা কোন ফেইসবুক পোস্টের দায় তাদের নিতে হবে? অথচ বার বার পিনাকীরা বলার চেষ্টা করছে কথিত হিন্দু যুবক টিটু রায়ের সাহস হলো কি করে, উশকানি দিতে হিম্মত হলো কি করে…। বুঝাতে চাচ্ছে এই হামলা হয়েছে হিন্দুদের কারণেই। কেন তারা মুসলমানদের নবীর ইজ্জ্বত পাংচার করতে গেছে…। দেখা যাচ্ছে উশকানিটা এখন দিয়ে যাচ্ছে হযরত পিনাকী স্বয়ং। এদেশের হিন্দুদের উপর যে কোন সাম্প্রদায়িক হামলার পরেই সেই হামলার পিছনে ভারতের বিজেপি শিবসেনাদের হাত আবিস্কার করা পিনাকীর একটি ধারাবাহিক প্রচারণার অংশ। এবারো তার বেতিক্রম হয়নি। এবারো ইসলামপন্থিদের আড়াল করতে ভারতের হাতকে আবিস্কার করে তাকিয়াবাজিতে সে সোচ্চার। অথচ এদেশে যদি অবশিষ্ঠ বিবেক বলতে এখনো কিছু থেকে থাকে তাহলে একটু হলেও ভাবা উচিত- টিটু রায় নামের কোন হিন্দু ছেলে সত্যিই যদি এরকম পোস্ট করে থাকে তাতে কি করে গোটা পাড়া আক্রান্ত হবার যোগ্য হয়ে উঠে? টিটু রায়ের উশকানির সাহস কি করে হলো সেই প্রশ্ন হযরত পিনাকী তুলেছে। অর্থ্যাৎ কথিত কোন টিটু রায় নামের আইডি থেকে কেউ কিছু পোস্ট করলেই সেটা হিন্দুদের দায় বর্তায় এটাই পিনাকী বুঝাতে চাচ্ছে। একারণেই ঠাকুরপাড়ায় হামলার উশকানি হিসেবে টিটু রায় নামের একজনকে বলির পাঠা বানাতে একটা চেষ্টা চলছে। সেই একই খেলা। রামু, নাসিরনগর থেকে রংপুরের ঠাকুরপাড়া…। ঠাকুরপাড়ার রাসরাজ হলো টিটু রায়। এবার দেখার বিষয় ঠাকুরপাড়ার জাহাঙ্গিরটা কে?… সাদ্দাম নামের একজনের নাম শোনা যাচ্ছে আপাতত…।