“হিন্দুরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় মামলা করেনা কেন?”–এক বুদ্ধিজীবির প্রশ্ন।
জনৈক বুদ্ধিজীবি কে. রায়ের এমন একটা স্ট্যাটাস আজ নজড়ে পড়ল। তিনি আরও বলেছেন হিন্দু আইনজীবিরা কেন একটা সেল গড়ে তুলেন না যাতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হলে সেলের আইনজীবীরা কোর্টে মামলা করতে পারেন।
তার এই পরামর্শের জন্য শত শত সুধীজন ধন্য ধন্য দিয়েছেন তাকে। যারা এই প্রস্তাবে সাধু সাধু রব তুলেছেন তারাও বুদ্ধিজীবী।
তবে, বাংলাদেশের হিন্দুদের দুর্গতি নিয়ে এমন একটা পরামর্শ দেবার আগে কি তার জানা ছিলনা বাংলাদেশ আইনের দেশ নয়। যে দেশে সংবিধান লঙ্ঘন করে একের পর এক আইন রচিত হয়েছে, যে দেশে এই সত্য কথাটা বলার অপরাধে বিচারপতিকে প্রান বাচাতে দেশ ছাড়তে হয়েছে, যে দেশে জজ মিয়া বিচারে দোষী হয়ে জেল খাটে, যে দেশে বেআইনি ভাবে ক্ষমতার ওদল।-বদল হয়, যে দেশে কেন্টনমেন্টের ভিতরে তন্বীকে হত্যা করে আসামীরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়,সে দেশে আইনের আশ্র্য় বলে যা আছে তা হচ্ছে ক্ষমতা। যার ক্ষমতা আছে সে যেকোন আইনী লড়াই জিতে আসবে। অর্থের জোর, ধর্ম, সামাজিক প্রতিপত্তি ও প্রভাব দ্বারাই এ দেশে বিচার হয়।
কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া আইনি কোন বিচার কোন হিন্দু আদায় করতে পেরেছে বলে শোনা যায়না। এমন হিন্দুও আছে যে অপরের সম্পতি আত্মস্মাত করেছে কোর্টের মাধ্যমে কারন তার খুটির জোড়। তবে হিন্দুদের মামলা সুরাহা না করে অনন্তকাল ঝুলিয়ে রাখা হয়। নির্দেশ আছে হিন্দুদের করা মামলা যদি মুসলমানের বিরূদ্ধে হয় তবে একে ঝুলিয়ে রাখো।
কেবল বিচার বিভাগের বিচারকদের সাথে আমার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল বলে আমি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ভিতরের অভ্যন্তরে যে শুন্যতা সম্পর্কে অবহিত হয়েছি বললে ভুল হবে। পরামর্শ দাতা সেই জ্ঞানপাপীরাও জানেন আমাদের বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আইনের শাসনব্যবস্থা এর আগেই তিরোহিত হয়েছে।
সুতরাং হিন্দুদের কোর্টে যাবার এমন পরমর্শ দেবার চেয়ে নীরব থাকাই ভাল।
মামলা করে সঙ্খ্যালঘু কেউ কোন দেশেই টিকতে পারেনি, পারছেনা আর ভবিষ্যতেও পারবেনা। মামলা করে কি রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে পারবে, বলুন বুদ্ধিজীবী বাবু। বরং মামলা করলে শত্রুতা তীব্রতর হবে প্রান নিয়ে টানাহ্যাচড়া শুরু হবে, ঘরের বধু আর সন্তানাদি ছিনতাই হয়ে যাবে।
অপরাধীর নাম মুখে আনতে প্রানের ভয় যেখানে, সেখানে আদালতে মামলা করার মত পরামর্শ দেয়া দুর্বলের সাথে পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়।
মামলা করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কেউই টিকতে পারবেনা। দুই কোটি সঙ্খ্যালঘু্র সমস্যা রাষ্ট্রীয় আদালতে বিচার হবেনা। একমাত্র জনগনের গঠিত আদালত পারে সংখ্যালঘুদের বাচাতে।
মামলা করে কোনদিনই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা যায়না। মামলা করে কোনদিনই মুর্তি ভাঙ্গার মত ইমানের কাজ বন্ধ করা যাবেনা