আনন্দমেলার পুজা সংখ্যার প্রচ্ছদটি আমাকে বিমর্ষ করে দিয়েছে এই ভেবে যে সব ধর্ম বিশ্বাসীকে এক পাল্লায় মাপাটা ভুল।।

কোলকাতার আনন্দমেলা’র পূজা সংখ্যার প্রচ্ছদটা একবার দেখুন। লঞ্চে করে দুর্গা ছেলেমেয়ে সমেত বাপের বাড়ি আসছেন। স্বয়ং দূর্গা ডেকে বসে কিছু একটা পড়ছেন। পুত্র কার্তিক গলায় দূরবীন ঝুলিয়ে মোবাইলে সেলফি তুলছে। কন্যা দ্বয়ের মধ্যে লক্ষ্মি থ্রিপিস পরে দিব্যি বসে আছে…। কই কোন হিন্দুর তো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগল না এসব দেখে? কার্তিক সেলফি তুলছে! লক্ষ্মি সেলোয়ার কামিজ পরে আছে… দেবদেবী নিয়ে এরকম মশকরা নতুন নয়।

এর বিপরীতে ১৯৩০ সালে কোলকাতার বিখ্যাত সেন ব্রাদার্স প্রকাশনীর প্রকাশক ভোলানান সেনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল হযরত মুহাম্মদের কল্পিত একটি ছবি ছাপানোর ‘অপরাধে’! ‘প্রাচীন কাহিনী’ নামে চর্তুথ শ্রেণীর একটি পাঠ্য বইতে হযরত মুহাম্মদকে মহাপুরুষ হিসেবে একটি প্রশংসামূলক রচনা ছিল ঐ বইয়ে অন্যান্য ধর্মীয় মহাপুরুষের নিয়ে লেখা রচনার অনুরূপ। লেখার সঙ্গে হাতে আঁকা একটি ছবি ছাপা হয়েছিল যেখানে মুহাম্মদ আর জিব্রাইল দাঁড়িয়ে আছেন। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মুহাম্মদের কল্পিত এই ছবিটি আজো রক্ষিত আছে। ভোলানাথ সেন সেই ছবিটিই প্রকাশ করেছিলেন তার বইতে। ক্ষুব্ধ মুসলমানদের হয়ে প্রতিশোধ নিয়েছিল দুই সহোদর ভাই। ভোলানাথ সেনকে দোকানে এসে খুন করে যায় তারা। এই দুই খুনি পরবর্তীকালে মুসলমানদের কাছে হীরো হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। বিপ্লবী নগেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন, আলীপুর জেলে তিনি যখন বন্দি তখন এই দুই ভাইকেও একই জেলে এনে রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন অনেক মুসলিম নারী-পুরুষ এই দুই ভাইকে তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসত…।

সামান্য কাবাঘরের ছবি নিয়ে বাংলাদেশের নাসিরনগরে দুই শতাধিক মানুষের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এই সেদিন পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে একই ঘটনার জেরে মানুষের বাড়ি-ঘর দোকানপাট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। দু’জায়গাতেই হামলাকারীদের পরিচয় একই। কোন শিশুতোষ বইয়ের নাম ‘ভূতের বাচ্চা সেলাইমান’ হলেও এদের চুলকানি তীব্র হয়ে উঠে। নবী মুহাম্মদের সঙ্গে বিন্দু পরিমাণ সম্পর্ক নেই এমন একটি কার্টুনে কেবল মুহাম্মদ শব্দটি থাকার অজুহাতে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদককে বাইতুল মোকাররমে খতিবের কাছে গিয়ে তওবা কেটে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। ফেইসবুকে নবী অবমাননার অভিযোগে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের জেল-জুলুম বেড়ে গেছে আশংকাজনকভাবে।… আনন্দমেলার পুজা সংখ্যার প্রচ্ছদটি আমাকে বিমর্ষ করে দিয়েছে এই ভেবে যে সব ধর্ম বিশ্বাসীকে এক পাল্লায় মাপাটা ভুল এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী খ্রিস্টান হিন্দু বৌদ্ধদের খানিকটা প্রশংসা প্রাপ্যই। পৃথিবীকে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই নাসিরনগর এবং বসিরহাটের হোতাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তাদের অভ্যস্থ হতে হবে আনন্দবাজারের মত কভাবে। প্রাচীন শিল্পীর আঁকা মুহাম্মদের চিত্রগুলো মুসলিম দেশের পত্রপত্রিকায় প্রাসঙ্গিক হিসেবে ছাপানো শুরু করা উচিত। মুসলমানদের আড় ভাঙ্গতে হবে মুহাম্মদের প্রশংসামূলক চিত্রগুলো ছেপেই…।