পাকিস্তান আমলই তো ভাল ছিল! ছায়ানট প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো ভর পাকিস্তান আমলে। শাড়ি পরে মেয়েরা ভোরবেলা বটমূলে গলা ছেড়ে গান গাওয়া শুরু করেছিলো। রবীন্দ্র জয়ন্তী মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে শুরু হয়েছিলো। বাঙালীর যা সংস্কৃতি তার সবই ইসলামের চোখে হিন্দুয়ানী। এরকম ধর্মীয় আঘাতকে তুচ্ছ করে পাকিস্তান আমলে এই দেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু হয়েছিলো। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ছায়ানট আর ২০১৭ সালের বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের সবচেয়ে বড় আসর করতে স্থান দেয়া হয় না! দেশ স্বাধীন হবার সঙ্গে সঙ্গে ‘মদ-জুয়া’ নিষিদ্ধ করার যে রক্ষণশীল মানসিকতা সেটাই ছিলো সন্দেহজনক। বিশ্ব ইতিহাসে অন্যতম গণহত্যা ম্যাসাকার সংগঠিত করেও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ৭৩-৭৪ সালেই বাংলাদেশ পাগল হয়ে উঠেছিলো। আর্মেনিয়া গণহত্যাকারী তুরস্ক বাংলাদেশের ‘ভ্রাত্বিপ্রতীম’ দেশ। কিন্তু বাংলাদেশকে ৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই স্বীকৃতি দাতা ইজরাইলকে বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে। চরম ইহুদী বিরোধীতাই এর মূল কারণ আর তা ৭২ সালের সরকার প্রধানদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ছিলো।
জিয়া-এরশাদ সংবিধানে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে। বাকী কাজগুলো কে করেছে নাম নিবো না ইচ্ছে হলে ভক্তরা ক্রেডিট নিতে পারেন নেতানেত্রীদের নামে। ২০১৩ সাল থেকেই গ্রামগঞ্জে বৈশাখি মেলার কোন অনুমতি প্রশাসন থেকে দেয়া হয় না নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে। শতবছরের পুরোনো মেলাগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে কমিটি অনুষ্ঠিত করতে পারে না সরকারী অনুমোদনের অভাবে। এসব স্থানে সারা বছরই মাইক বাজিয়ে লাইটিং করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন চলছে। লালন উৎসব, বাউল উৎসব নিরাপত্তার অভিযোগে বিগত বছরগুলোতে প্রশাসন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি। হিন্দুদের বিভিন্ন পুজা উপলক্ষে বহু শতাব্দীকাল ধরে চলে আসা মেলাগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের অনুমতি পায়নি। তবে বিশ্ব ইজতেমায় সরকার নজিরবিহিন সরকারী সেবা অর্থ ব্যয় করে দুই স্তরে অর্থ্যাৎ একই রকম লোকবল অর্থ ব্যয় করে একটির জায়গায় দুটি ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে।
জেলায় জেলায় মসজিদ নির্মাণ, ওয়াজ মাহফিলে সরকারী দলের নেতাদের অংশগ্রহণ, পৃষ্টপোষকতা, ঢালাও মাদ্রাসার অনুমোদন পক্ষান্তরে সাংস্কৃতিক আয়োজন বাতিল একটা জেনারেশনকে ধর্মান্ধ অমানুষে পরিণত করবে। পাকিস্তান আমলে প্রগতিশীলতার চর্চা যেখানে ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিলো সেখান বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তাতে ভাটা পড়ে গেছে। দেশ চলবে মদিনা সনদে- এই সুস্পষ্ট কথাটি মেঠো বক্তৃতা ভেবেছিলেন যারা তারা পরবর্তীকালে বাস্তবায়িত কার্যক্রম দেখে নিশ্চিত হয়েছেন- দেশ মদিনা সনদেই চলবে! শিক্ষাক্রমে ইসলামীকরণ তার অন্যতম আঘাত। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের রাত আটটার পর টিএসসিতে থাকার উপর নিষেধাজ্ঞা, বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত বাতিল ধারাবাহিক লক্ষ্যে তাদের অবিচলতাই প্রমাণ করছে…।
Susupto Pathok